ছবি: এএফপি।
রাজভবনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একান্ত বৈঠক হয়েছিল শনিবার। তার ২৪ ঘণ্টা না কাটতেই রবিবার সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চে দাঁড়িয়ে রাজ্য সরকার তথা শাসক তৃণমূলকে ‘কাটমানি’ প্রসঙ্গ তুলে কটাক্ষ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শাসক দল অবশ্য ‘বাচ্চা ছেলের মতো কথা’ বলে প্রধানমন্ত্রীকে জবাব দিয়েছে।
বেলুড় মঠে সকালের অনুষ্ঠানে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বিরোধীদের সমালোচনা করে আসার পরেই কলকাতা বন্দরের ১৫০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী টেনে আনলেন রাজ্যের দালাল-সিন্ডিকেটরাজ এবং কাটমানির কারবারের অভিযোগ। বেশ কিছু কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্য সরকার যে যোগ দেয়নি, সেই প্রসঙ্গেই মোদী রবিবার বলেন, ‘‘ওই সব প্রকল্পের সুবিধা সরাসরি উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে চলে যাচ্ছে। মাঝে কোনও দালাল নেই, সিন্ডিকেটওয়ালা নেই, কাটমানিও নেই।’’ পরক্ষণেই তাঁর খোঁচা, ‘‘কাটমানি, সিন্ডিকেট না থাকলে রাজ্য কেনই বা এমন প্রকল্প চালু করবে?’’
নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এ দিনের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে মুখ্যমন্ত্রীরও নাম ছিল। তবে তিনি অনুষ্ঠানে ছিলেন না। প্রধানমন্ত্রীর কটাক্ষের জবাবে রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘উনি আন্তর্জাতিক স্তরে নেতৃত্ব দিতে চাইছেন। আবার এমন সব কথা বলছেন, যেটা প্রধানমন্ত্রীর মুখে মানায় না। কাটমানি-ফাটমানি, এ সব বাচ্চা ছেলেরা বলে! উনি কী বলছেন!’’
আরও পড়ুন: ক্ষমতায় এলে গুলি করে মারব: দিলীপ
দলিত ও গরিবদের উন্নয়নে গত ৬ বছরে কী ভাবে তাঁর সরকার কাজ করছে, এ দিনের অনুষ্ঠানে সেই বিবরণ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, পশ্চিমবঙ্গে ৯০ লক্ষ মহিলার কাছে ‘উজ্জ্বলা যোজনা’য় রান্নার গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ লক্ষ দলিত ও আদিবাসী মহিলা এই সুবিধা পেয়েছেন। গ্যাস সংযোগের সঙ্গেই গরিবদের পাঁচ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য বিমার আয়ুষ্মান ভারত এবং চাষিদের খরচ জোগানোর ‘প্রধানমন্ত্রী কিষাণ কল্যাণ যোজনা’র কথা উল্লেখ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী জানান, আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে ইতিমধ্যেই ৭৫ লক্ষ মানুষ দূরারোগ্য ব্যাধির বিনা খরচে চিকিৎসা করিয়েছেন। কিষাণ কল্যাণ প্রকল্পে ৮ কোটি কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ৪৫ হাজার কোটি টাকা পাঠানো হয়েছে। দু’টি প্রকল্পেই রাজ্য সরকার যোগ দেয়নি।
রাজ্য সরকারের উদ্দেশে মোদীর আরও মন্তব্য, ‘‘আমি যে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে যাই, তার কারণ এই এত সংখ্যক গরিব মানুষের আশীর্বাদ আমার সঙ্গে রয়েছে। জানি না, এ রাজ্যের নীতি নির্ধারকদের কবে শুভবুদ্ধির উদয় হবে? ঈশ্বর তাঁদের শুভবুদ্ধি দিন! রাজ্য প্রকল্প দু’টিতে যোগ দিলে রাজ্যের গরিব ও চাষিরাও প্রকল্পের সুযোগ পাবেন।’’ একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দাবি, ‘‘তবে সেই দিন বেশি দূরে নেই।’’
বন্দরের অনুষ্ঠান থেকেই মোদী ঘোষণা করেন,‘‘বাংলার বহু ছেলে-মেয়ে এখানকার গরিব-দলিত, বঞ্চিত মানুষের জন্য লড়াই করছে। এটা এক ব্যক্তি, একটি সরকারের কাজ নয়। বাংলায় বদল আনতে সারা দেশ সঙ্কল্প করেছে, দায়িত্ব আজ পুরো দেশের।’’