State News

‘গো-ব্যাক’ স্লোগানে উত্তাল শহর ছাড়িয়ে বেলুড়ে মোদী

রাত ৯টা নাগাদ প্রধানমন্ত্রীর লঞ্চ এসে পৌঁছয় বেলুড় মঠের জেটিতে।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

বেলুড় শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২০ ০২:৫৯
Share:

রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রেসিডেন্ট স্বামী স্মরণানন্দের সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রধানমন্ত্রী। মোদীর ডান দিকে মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ এবং মঠের ম্যানেজার স্বামী গিরিশানন্দ। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র

কলকাতা তখন বিক্ষোভে ফুঁসছে। প্রায় দু’কিলোমিটার দূরে ওয়াই চ্যানেলে তাঁর বিরুদ্ধে ‘গো-ব্যাক’ স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠেছে প্রতিবাদ-সমাবেশ। সেই সময়ে মিলেনিয়াম পার্কের অনুষ্ঠান সেরে লঞ্চে চেপে বেলুড় মঠের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী। এমনকি, যাত্রাপথে টুইট করলেন লঞ্চ থেকে তোলা আলো ঝলমলে রবীন্দ্র সেতু এবং লঞ্চের ডেকে দাঁড়ানো নিজের ছবি। লিখলেন, ‘‘রবীন্দ্র সেতুর অপরূপ শোভা দেখুন।’’ যা দেখে নতুন করে ক্ষোভ ছড়াল।

Advertisement

রাত ৯টা নাগাদ প্রধানমন্ত্রীর লঞ্চ এসে পৌঁছয় বেলুড় মঠের জেটিতে। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ, মঠের ম্যানেজার স্বামী গিরিশানন্দ-সহ প্রবীণ সন্ন্যাসীরা প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। মঠের ব্যাটারি চালিত গাড়িতে চেপে প্রেসিডেন্ট মহারাজের বাসগৃহে পৌঁছন তিনি। সেখানে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রেসিডেন্ট স্বামী স্মরণানন্দকে প্রণাম করেন। প্রেসিডেন্ট মহারাজ ও অন্যান্য প্রবীণ সন্ন্যাসীদের সঙ্গে প্রায় আধ ঘণ্টা আলাপচারিতাও করেন প্রধানমন্ত্রী। নিয়মানুযায়ী রাত সাড়ে ৮টায় মঠ বন্ধ হয়ে যায়। তাই আর কোনও মন্দির দর্শন করেননি তিনি। প্রেসিডেন্ট মহারাজের ঘর থেকে বেরিয়ে মঠের অতিথি নিবাসে চলে যান।

বেলুড় মঠে বিদেশিদের জন্য গেস্ট হাউসের দোতলায় ২০১ নম্বর ঘরে তাঁর থাকার ব্যবস্থা করেন মঠ কর্তৃপক্ষ। প্রধানমন্ত্রীর আতিথেয়তায় যাতে ত্রুটি না থাকে, সে দিকেও সজাগ নজর ছিল কর্তৃপক্ষের। মঠ সূত্রের খবর, রাতে শ্রীরামকৃষ্ণ, মা সারদা ও স্বামী বিবেকানন্দকে নিবেদন করা ভোগ-প্রসাদ গ্রহণ করেছেন মোদী। ভোগ হিসাবে গরম লুচি, বেগুন ভাজা, আলুভাজা ও পায়েস প্রধানত নিবেদন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী নিজেই এই প্রসাদ গ্রহণ করার আগ্রহ দেখিয়ে ছিলেন বলে খবর।

Advertisement

আরও পড়ুন: মোদীকে বলেছি সিএএ ফেরান, বললেন মমতা

সূত্রের খবর, আজ রবিবার ভোরে মঠের মূল মন্দিরে মঙ্গলারতি দেখার পরে স্বামী বিবেকানন্দের ঘরে কিছু ক্ষণ ধ্যান করতে পারেন মোদী। এর পরে বেলুড় মঠে মূল মন্দিরের পাশে জাতীয় যুব দিবসের অনুষ্ঠান স্থলে যাবেন তিনি। সেখানে মঞ্চ থেকে যুব দিবস সম্পর্কে বক্তৃতা দিতে পারেন।

মঠ সূত্রের খবর, আজ রবিবার সকাল ৮টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত বেলুড় মঠের মূল গেট বন্ধ থাকবে। প্রধানমন্ত্রী রাতে মঠে থাকায় কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল গোটা চত্বর।

গঙ্গা-বক্ষে: বেলুড়ের পথে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবার সন্ধেয় ছবিটি টুইট করেছেন তিনি নিজেই।

প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে কোনও দিনই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয় রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন। তাই এর আগে মিশনে আসা এবং শনিবার বেলুড় মঠে প্রধানমন্ত্রীর রাত কাটানোর সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই বলে জানাচ্ছেন মঠ ও মিশনের প্রবীণ সন্ন্যাসীরা। মোদী নিজেও রামকৃষ্ণ মিশন সম্পর্কে খুবই সংবেদনশীল। বহু বার বলেছেন, ‘শৈশব থেকে আমি ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের ভক্ত’।

কৈশোর থেকেই কয়েক বার মোদী রামকৃষ্ণ মিশনের বিভিন্ন শাখা কেন্দ্রে গিয়েছিলেন সাধু হতে। শেষ বার তিনি রাজকোট আশ্রমে গিয়ে এক মাস ব্রহ্মচারীর মতো ছিলেন। সেই সময়ে স্নেহভাজন হন ওই আশ্রমের তৎকালীন সচিব স্বামী আত্মস্থানন্দের। তিনিই সে দিনের যুবককে বুঝিয়ে ছিলেন, সন্ন্যাস যোগ তাঁর জন্য নয়। দেশের কাজ করতে হবে। স্বামী আত্মস্থানন্দের কথায় সাধু হওয়ার স্বপ্ন ত্যাগ করলেও কলেজ পড়ুয়া মোদী রাজকোট আশ্রমে যাতায়াত বন্ধ করেননি। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে, এমনকি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেও মোদী এ রাজ্যে এসে দেখা করেছেন ‘গুরুজি’— রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের পঞ্চদশ প্রেসিডেন্ট স্বামী আত্মস্থানন্দের সঙ্গে।

তাই, শনিবার বেলুড় মঠে রাত কাটালেও ‘গুরুজি’-র সান্নিধ্য না পাওয়ার আক্ষেপ টুইটে প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। লিখেছেন, ‘আমি আনন্দিত ও উৎসাহিত যে আজ এবং আগামী কাল পশ্চিমবঙ্গে কাটাবো। স্বামী বিবেকানন্দের জন্মজয়ন্তীর পবিত্র সময়ে আমার রামকৃষ্ণ মিশনে যাওয়ার সৌভাগ্য হবে। বেলুড় মঠ সর্বদাই বিশিষ্ট জায়গা। তবু একটা শূন্যতাও থাকবে! যিনি আমাকে ‘জন সেবাই প্রভু সেবা’র মহৎ নীতি শিখিয়ে ছিলেন, সেই শ্রদ্ধেয় স্বামী আত্মস্থানন্দজি এখন আর নেই। রামকৃষ্ণ মিশনে গিয়ে তাঁর পবিত্র সান্নিধ্য না পাওয়া অকল্পনীয়!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement