নারায়ণগড়ের চা-ওয়ালা দীপককুমার দাস। ছবি— টুইটার থেকে।
গ্রামের আর পাঁচ জনের মতই চা-ওয়ালা দীপককুমার দাসেরও যৌবন কেটেছে ব্যাঙ্ক ব্যবস্থার নামগন্ধ না শুনে। কিন্তু জীবিকার প্রয়োজনে ব্যাঙ্কের প্রয়োজনীয়তা বুঝেছেন বয়স বাড়তেই। কারণ সরকারি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সরাসরি উপভোক্তার কাছে পৌঁছয় ব্যাঙ্কের মাধ্যমে। তাই পঞ্চায়েত এলাকায় একটি ব্যাঙ্কের দাবি দীপকদের বহুদিনের। কিন্তু এত দিন হাজার আবেদন-নিবেদনেও সুরাহা হয়নি। শেষ পর্যন্ত গণ স্বাক্ষর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি পাঠান দীপক। সেই আবেদন গ্রাহ্য হয়েছে। পেয়েছেন নারায়ণগড়ের কামারপুর গ্রামে ব্যাঙ্ক খোলার আশ্বাস। ঘটনাচক্রে প্রধানমন্ত্রী মোদীও নিজের শৈশবে চা বিক্রি করতেন বলে জানা যায়।
পেশায় চা বিক্রেতা দীপক একই সঙ্গে সরকারি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পেতে গ্রামবাসীদের প্রয়োজনীয় ফর্মপূরণ থেকে শুরু করে ব্যাঙ্ক, পঞ্চায়েত কার্যালয়ে দরবার করে থাকেন। পঞ্চায়েত এলাকায় একটি ব্যাঙ্ক হলে যে কী সুবিধা তা জানেন ভালমতোই। কামারপুর গ্রামের সবচেয়ে কাছের ব্যাঙ্কের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। এলাকায় একটি ব্যাঙ্কের দাবিতে আগে স্টেট ব্যাঙ্কের কর্তাদের চিঠি দিয়েছেন দীপক। কিন্তু জবাব আসেনি। শেষ পর্যন্ত ২০২১-এর ফেব্রুয়ারিতে গ্রামেরই ক্লাবের নামাঙ্কিত পাতায় নিজের বক্তব্য লিখে, আর পাঁচ জনকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে পাঠিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সেই চিঠির প্রাপ্তি স্বীকারই শুধু করেনি, স্টেট ব্যাঙ্ককে নির্দেশ দিয়েছে ওই এলাকায় ব্যাঙ্কের একটি শাখা খোলার। প্রসঙ্গত, এই নারায়ণগড় থেকেই দীর্ঘদিন ভোটে জিতেছেন সিপিএমের বর্তমান রাজ্য সম্পাদক তথা বাম জমানার মন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র।
এক মাসের মধ্যে স্টেট ব্যাঙ্কের জেনারেল ম্যানেজার দীপকের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, একটি ব্যাঙ্কের শাখার বদলে তারা এই অঞ্চলে একটি ‘কাস্টমার কেয়ার সেন্টার’ করতে চলেছেন। পরবর্তীতে তাকেই পুরোদস্তুর শাখার রূপ দেওয়া হবে।
এই খবরে গ্রামবাসীদের মধ্যে আনন্দের বন্যা। কিন্তু নারায়ণগড়ের চা-ওয়ালা খুশি নন। তিনি বলছেন, ‘‘স্টেট ব্যাঙ্ক থেকে জানিয়েছে, এখানে এখনই ব্যাঙ্কের শাখা খুলতে না পারলেও আপাতত একটি কাস্টমার সার্ভিস সেন্টার খুলবেন। কিন্তু এতে আমি খুশি না। তাই এ বার অর্থ মন্ত্রকে চিঠি লিখেছি। আমার বিশ্বাস, তাতে কাজ হবে।’’