ফাইল চিত্র।
নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনে যুক্তদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহার শুরু করল রাজ্য সরকার। পর্যবেক্ষকদের ধারণা, বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখেই এই প্রক্রিয়া শুরু করেছে শাসক শিবির। ক্ষমতায় আসার সময়ই আন্দোলনকারীদের নামে চলা মামলা প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তৃণমূল সরকার। ‘চার্জশিট’ জমা হয়ে গেলেও অভিযোগ প্রত্যাহারে সরকারি আইনজীবীরা আপত্তি না করায় মামলাগুলি আর থাকছে না।
জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে নন্দীগ্রাম ও খেজুরি সহ গোটা এলাকায় ব্যাপক আন্দোলন হয়েছিল ২০০৬-৭ সালে। কৃষি জমি রক্ষার মানুষের সেই আন্দোলনে স্থানীয়দের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা করে পুলিশ। ক্ষমতায় আসার পর দীর্ঘদিন ধরেই শাসক শিবিরে এই মামলা প্রত্যাহার নিয়ে টানাপড়েন চলেছে। প্রায় ৮ বছর পরে প্রতিশ্রুতিমতো সেই সব মামলা প্রত্যাহারের কাজ শেষ করল রাজ্য প্রশাসন। কৃষিজমি আন্দোলনের আন্দোলনের নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর কথায়, ‘‘প্রায় সাড়ে চার হাজার পরিবার দীর্ঘ লড়াই থেকে মুক্তি পেয়েছে। আন্দোলনের সৈনিক হিসেবে আমাদের দায়বদ্ধতা ছিল। সেই প্রতিশ্রুতি রাখায় নন্দীগ্রামের তরফে মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’’
সরকারি কাজে বাধা, হিংসা ও সরকারি সম্পত্তি নষ্টের মতো অভিযোগে মোট ৪০৬ টি মামলা হয়েছিল আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। তার মধ্যে একটি বাদে সব কটি মামলাই প্রত্যহার হয়ে গিয়েছে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী অবশ্য মনে করেন, বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে পুলিশ ও প্রশাসনকে দিয়ে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘নন্দীগ্রাম এখন আর তৃণমূলের হাতের মধ্যে নেই। শাসকের চেহারা যত সামনে আসছে, তত মানুষ বিক্ষুব্ধ হচ্ছেন। তা সামাল দিতে এই পথ নিয়েছে তৃণমূল। ওখানে আমাদেরও অনেকে খুন হয়েছেন। তাঁরা কি বিচার পাবেন না?’’
আরও পড়ুন: সুরক্ষার সব ব্যবস্থা রেখেই খুলবে ধর্মস্থান
তৃণমূলের রাজনৈতিক সাফল্যের পথে নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলন ছিল অন্যতম প্রধান পুঁজি। সেক্ষেত্রে এই মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার চাপও ছিল তাদের উপরে। ক্ষমতায় আসার পরে বিষয়টি নিয়ে রাজ্য মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত হলেও তা সম্পূর্ণ করতে ৮ বছরের বেশি সময় লেগে গিয়েছে। গত মে মাস পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চালিয়ে একটি মামলা ছাড়া সবগুলি প্রত্যাহার হয়ে গিয়েছে। সিপিএম নেতা নবকুমার সামন্ত তাঁর অভিযোগ প্রত্যাহার করতে না চাওয়ায় একমাত্র মামলাটি ঝুলে রয়েছে।
রাজনৈতিক মহলের ধারণা, পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নন্দীগ্রামের প্রত্যাশাপূরণে বাড়তি সক্রিয়তা দেখিয়েছে তৃণমূল সরকার। শুভেন্দু অবশ্য বলেন, ‘‘সিপিএমের নির্দেশে পুলিশ এই সব মিথ্যা মামলা করেছিল। সেই অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। সরকারি আইনজীবীরা তাতে আপত্তি করেননি।’’
নন্দীগ্রামে আন্দোলনের সময় পুলিশের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ ছিল, তার নিষ্পত্তি এখনও হয়নি। আন্দোলনের অন্যতম নেতা হিসেবে শুভেন্দুও একাধিকবার তাঁদের শাস্তির দাবি তুলেছেন। শুভেন্দু এ দিন বলেন, ‘‘এ রকম বড় বড় বহু ঘটনার বিচার অনেক পরেও হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও এখনও হয়নি মানে হবে না, তা নয়।’’