Firecracker Market

বাজি ব্যবসার হিসাবের খাতায় নতুন নাম কার, উত্তরের খোঁজে পুলিশ

মোচপোলের বিস্ফোরণে ইতিমধ্যেই ন’জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। সেখানে ওই বেআইনি কারখানায় বাজির আড়ালে বোমাও তৈরি হত কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি এখনও।

Advertisement

চন্দন বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৭:০৩
Share:

মজুত: দত্তপুকুরের মোচপোলে বিস্ফোরণস্থলের অদূরে একটি দোকানের ভিতরে বাজির সরঞ্জামের সন্ধান পেয়ে জল দিচ্ছেন দমকলকর্মীরা। শুক্রবার, বারাসতে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

এই বাজি-গড়ে তিনি যেন ‘মেঘনাদ’! নাম জানা আছে, কিন্তু ধামের হদিস নেই। লন্ডভন্ড ইটভাটায় পড়ে থাকা কাগজ ও ডায়েরির ছত্রে ছত্রে নাম রয়েছে তাঁর। গ্রামবাসীদের ভাঙচুরের পরে ইটভাটায় পড়ে থাকা বাজি কারবারের হিসাবের ডায়েরিতে কোথাও তাঁর নাম লেখা রয়েছে একের পর এক রাসায়নিক সরবরাহের হিসাবের পাশে। কোথাও আবার লেখা রয়েছে তাঁর নামে লক্ষাধিক লেনদেনও। কিন্তু ‘মেঘনাদ’ নুর হোসেন কে? সেটাই বলতে পারছেন না দত্তপুকুরের মোচপোলের বাসিন্দারা। ওই নামে তাঁদের এলাকায় কেউ নেই বলেই দাবি করছেন তাঁরা। গত রবিবার মোচপোলে বিস্ফোরণের ঘটনায় ‘পণ্ডিত’ নামে এক রহস্যময় ব্যক্তির নাম সামনে এসেছিল। গোটা চক্রে তাঁর বড়সড় ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ। এমনকি, গোটা এলাকায় রাসায়নিক সরবরাহের দায়িত্ব ওই পণ্ডিতই সামলাতেন বলে খবর। সেই রহস্য না কাটতেই ফের সামনে এল আরও একটি নাম।

Advertisement

মোচপোলের বিস্ফোরণে ইতিমধ্যেই ন’জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। সেখানে ওই বেআইনি কারখানায় বাজির আড়ালে বোমাও তৈরি হত কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি এখনও। মোচপোলে ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণের পরে স্থানীয়দের রোষ গিয়ে পড়ে এলাকার একটি পরিত্যক্ত ইটভাটার উপরে। ভিন্ জেলা থেকে লোকজন এনে বাজি তৈরির আড়ালে সেখানে বোমা তৈরি করা হত বলে অভিযোগ। ঘটনার দিন সেখানে ঢুকে ছোটখাটো একটি ল্যাবরেটরির হদিস মেলে। বিভিন্ন যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে রাসায়নিক ভর্তি ড্রামও রাখা ছিল। গোটা বিষয়টি দেখার পরেই গ্রামবাসী থেকে শুরু করে তদন্তকারী আধিকারিকদের প্রশ্ন, বাজি তৈরির জন্য ল্যাবরেটরি আর এত যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হত কেন?

ইটভাটা ঘিরে বেআইনি কারবারের অভিযোগের সূত্রে বার বারই উঠে এসেছে আব্দুল মহিদ নামে এলাকার প্রভাবশালী এক ব্যক্তির নাম। তিনিই ইটভাটার গোটা কারবার চালাতেন বলে অভিযোগ। কিন্তু ইটভাটার বেআইনি কারবারের হিসাবের খাতায় নতুন করে পাওয়া নাম নুর হোসেন কে, তা নিয়ে বাড়ছে রহস্য। ওই ডায়েরির পাতা উল্টে দেখা গিয়েছে, সোরা, পিভিসি, বেরিয়াম-সহ একাধিক রাসায়নিক সরবরাহ করার ক্ষেত্রে নাম রয়েছে নুর হোসেনের। রয়েছে তারিখ ধরে কয়েক কেজি ‘মশলা’র কথাও। সাঙ্কেতিক ভাষায় নুর হোসেনের নাম লিখে নানা রাসায়নিক সরবরাহের হিসাবও রয়েছে ওই খাতায়। রয়েছে তারিখ ধরে ধরে লক্ষ লক্ষ টাকা লেনদেনের হিসাবও। স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য ওই নামে এলাকার কাউকে চেনেন না। এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘এই নামে এখানে কেউ নেই।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ইটভাটার বেআইনি কারবারে একাধিক অংশীদারিত্ব ছিল। বাইরের অনেকের মদত ছিল। মাঝেমধ্যে গাড়ি ভর্তি করে বিভিন্ন ড্রাম আসত ইটভাটায়। কে কী দায়িত্বে ছিলেন, সবটাই অজানা।’’

Advertisement

তা হলে কি রাসায়নিক সরবরাহের বড় দায়িত্ব সামলাতেন নুর হোসেন‌? ডায়েরিতে তাঁর নম্বরও আছে। তবে তাতে যোগাযোগ করা যায়নি। যা রহস্য বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ। বারাসত পুলিশ জেলার এক তদন্তকারী পুলিশকর্তা বলছেন, ‘‘আমরা সবটাই খতিয়ে দেখছি। গোটা ঘটনার রহস্যভেদে একাধিক জনের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তবে আপাতত কোনও নাম সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement