প্রতীকী ছবি
নদিয়ায় কিশোরীর ধর্ষণ-মৃত্যুর মামলায় রাজ্য পুলিশের ভূমিকা খতিয়ে দেখছে সিবিআই। সোমবার স্থানীয় থানার ওসি-কে কৃষ্ণনগরে সিবিআইয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পে ডেকে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর আগে ওই থানার অন্য দুই অফিসার ছাড়াও কিশোরীর গ্রামের সিভিক ভলান্টিয়ার ও ভিলেজ পুলিশকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
গত ৪ এপ্রিল তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য সমরেন্দু গয়ালির ছেলে সোহেল ওরফে ব্রজ গয়ালির বাড়িতে জন্মদিনের পার্টিতে মদ খাইয়ে চোদ্দো বছরের মেয়েটিকে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। প্রবল রক্তক্ষরণের জেরে পরের দিন ভোরে নিজের বাড়িতেই মেয়েটি মারা যায়। সকালে বাড়ির কাছেই একটি অনুমোদনহীন শ্মশানে ডাক্তারি সার্টিফিকেট ছাড়াই দেহ দাহ করা হয়, যে কারণে প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। এর চার দিনের মাথায় চাইল্ড লাইনের হস্তক্ষেপে মৃতার মা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে, মাঝের এই চার দিন কি পুলিশ কিছুই জানতে পারেনি? গ্রাম থেকে চাইল্ড লাইনে খবর গেল অথচ স্থানীয় থানা খবর পেল না? শাসক দলের একাংশের চাপে কি পুলিশ সব জেনেও চুপ করে ছিল? না কি পুলিশ কর্মীদের একাংশ এই প্রমাণ লোপাটের ঘটনায় সরাসরি জড়িত?
গত শনিবার ওই গ্রামের সিভিক ভলান্টিয়ার রাজু বিশ্বাস এবং ওই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ভিলেজ পুলিশ গোবিন্দ ঢালিকে ক্যাম্পে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। ঘটনাচক্রে রাজু স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য চঞ্চল বিশ্বাসের জেঠতুতো ভাই এবং গোবিন্দ সমরেন্দু গয়ালির ভাগ্নে। রাজুর দাবি, তিনি সকাল ৭টায় থানায় চলে যান, রাতে বাড়ি ফিরে খেয়ে-দেয়ে শুয়ে পড়েন। তাই তিনি কিছু জানতে পারেননি। আর গোবিন্দ এই বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনও কথাই বলতে চাননি। দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদের পরে ছেড়ে দেওয়া হলেও সিবিআই তাঁদের দু’জনের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেছে।
রবিবার ডেকে পাঠানো হয় স্থানীয় থানার সেকেন্ড অফিসার এবং এই মামলার তদন্তকারী অফিসারকে। তাঁদেরও দীর্ঘ সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ ছাড়া সংবাদমাধ্যমের তিন প্রতিনিধিকেও ক্যাম্পে ডেকে তাঁদের থেকে বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করেন সিবিআই অফিসারেরা। সংবাদমাধ্যমের একাংশ আগাগোড়া পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। যদিও ৯ এপ্রিল অভিযোগ পাওয়ার পরেই পুলিশ ব্রজ গয়ালি ও তার এক মামাতো ভাইকে গ্রেফতার করে। মাত্র দু’দিনের মধ্যে ১১ জনের গোপন জবানবন্দি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নথিভুক্ত করায়। এর পরেই আদালতের নির্দেশে সিবিআই তদন্তভার নেয়। কিন্তু চাইল্ড লাইনের হস্তক্ষেপের আগে সেই পুলিশই এত ‘নিষ্ক্রিয়’ হয়ে রইল কেন, সিবিআই আপাতত তারই উত্তর খুঁজছে।