দিনকয়েক আগেই হকার উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কান্দির মহকুমা প্রশাসন। কিন্তু বৃহস্পতিবার হকার উচ্ছেদের ‘বহর’ দেখে বিস্মিত এলাকার মানুষ।
পরিকল্পনা মতোই এদিন পূর্ত দফতর এনেছিল পেলোডার ও দিনমজুর। পুরসভার পক্ষ থেকে ব্যবস্থা করা হয়েছিল ট্রাক্টরের। আর আইন-শৃঙ্খলার অবনতি যাতে না ঘটে সেজন্য মোতায়েন করা হয়েছিল বিশাল পুলিশ বাহিনীও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হকার উচ্ছেদের নামে যা হল তা প্রহসন বলেই মনে করছেন কান্দির মানুষ। কী হল এদিন? প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ঘটনাস্থলে হাজির ছিলেন কান্দির মহকুমাশাসক প্রদীপ বিশ্বাস-সহ মহকুমা প্রশাসনের অন্যান্য আধিকারিকরা। সিদ্ধান্ত হয়েছিল, কান্দি বাসস্ট্যান্ড থেকে মহকুমা আদালত সংলগ্ন একটি কালভার্ট পর্যন্ত পূর্ত দফতরের প্রায় দু’কিলোমিটার রাস্তা হকারমুক্ত করার। কিন্তু ওই এলাকার কিছু জায়গায় মাটি সমান করা ছাড়া আর দু’একটি দোকানের কিছু অংশ ভেঙে দেওয়া ছাড়া তেমন কিছুই করা হয়নি। সবথেকে বেশি সমস্যা হয় কান্দি মহকুমা হাসপাতালের সামনে। কারণ সেখানেই হকারদের ভিড় বেশি। অথচ ওই এলাকা হকার-মুক্ত করার জন্য কোনও পদক্ষেপই করেনি প্রশাসন। এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মহকুমাশাসক বলেন, “কারও রুজি-রুটিতে হাত দেওয়ার মতো ক্ষমতা আমার নেই। রাস্তা তৈরি করতে যে অতিরিক্ত জায়গায় প্রয়োজন সেইটুকুই নেওয়া হয়েছে।”
সম্প্রতি ওই দু’কিলোমিটার রাস্তা মেরামত করতে গিয়ে পূর্ত দফতর দেখে রাস্তার দু’ধারে অধিকাংশ জায়গা দখল করে ব্যবসা করছে হকাররা। ওই হকারদের উচ্ছেদ না করলে রাস্তা তৈরি সম্ভব নয় বলে কান্দির মহকুমাশাসককে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়ার আর্জি জানান পূর্ত দফতরের কান্দি মহকুমার সড়ক বিভাগের আধিকারিক প্রবীর বাগচি। তারপরেই মহকুমাশাসক গত শনিবার পুলিশ, পূর্ত দফতরের আধিকারিক, বিডিও, সমস্ত রাজনৈতিক দল, কান্দি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও কান্দি পুরসভার কর্তাদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয় কান্দি শহরে পুর্ত দফতরের রাস্তা দখল করে যাঁরা ব্যবসা করছেন তাঁদের উচ্ছেদ করা হবে। কিন্তু এদিন উচ্ছেদের বহর দেখে কান্দি পুরসভার পুরপ্রধান কংগ্রেসের গৌতম রায় বলেন, “সবাইকে ডেকে ঘটা করে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত হল একরকম। আর বাস্তবে হল আর একরকম। রাস্তা দখল করে থাকা দোকানগুলি ভাঙার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু পরে মহকুমাশাসক কার সঙ্গে বৈঠক করে ওই সিদ্ধান্ত বদল করেছেন তা আমার জানা নেই।”
কান্দি পৌর হকার্স ঐক্য পুনর্বাসন কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সম্পাদক বিশ্বনাথ মণ্ডল। তিনি বলেন, “মহকুমাশাসকের কাছে আবেদন করেছিলাম আমাদের যাতে উচ্ছেদ না করা হয়। আমাদের দোকানগুলি না ভাঙায় আমরা খুশি।” আর কান্দি মহকুমার সড়ক বিভাগের আধিকারিক প্রবীর বাগচি বলেন, “রাস্তা হয়তো কোনওরকমে করা যাবে। তবে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সমস্ত হকার উচ্ছেদ করতে পারলে সুবিধা হত।”