অনাস্থায় তলবি সভা ডাকার ‘২৪ ঘণ্টা’ আগে নোটিশ জারি করে সভার স্থগিত রাখার নিদের্শ দিয়েছিলেন মহকুমাশাসক প্রিয়াঙ্কা শিংলা। কিন্তু তাতেও তৃণমূলের ক্ষুব্ধ সদস্যদের আটকানো যায়নি। সিপিএম ও কংগ্রসের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে হাত মিলিয়ে তৃণমূলের ১১ সদস্য পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আকলেমা বিবির বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে তাঁকে অপসারণ করেন। এই অপসারণ আদৌ বৈধ কি না তা নিয়ে ভাবতে রাজি নন তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, যাদবপুর যেমন ভোট দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে যে পড়ুয়ারা উপাচার্যকে চাইছেন না। তেমনই তাঁরাও বুঝিয়ে দিলেন যে, প্রশাসনের এই তলবি সভা স্থগিত করাটা ছিল আসলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনের ওই তলবি সভায় তৃণমূলের ১১ জন সদস্য ছাড়াও সিপিএমের ৭ ও কংগ্রেসের ৪ জন সদস্য হাজির ছিলেন। সাগরদিঘি ব্লক অফিসের কমিউনিটি ভবনে এই অনাস্থা সভায় অবশ্য এ দিন প্রশাসনের কোনও প্রতিনিধি হাজির ছিলেন না। কারণ বৃহস্পতিবার দুপুরেই শুক্রবারের এই অনাস্থা সভা স্থগিত করে নোটিশ জারি করেছিলেন জঙ্গিপুরের মহকুমা শাসক প্রিয়াঙ্কা শিংলা। কিন্তু উপস্থিত ২২ জন সদস্য ওই সভা স্থগিতের নোটিশ হাতে পাননি বলে দাবি করেন। অন্য দিকে, এদিন তলবি সভার উপস্থিত থাকতে হাজির হন কয়েকশো তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। গোলমালের আশঙ্কায় মোতায়েন করা হয় পুলিশ। হাজির ছিলেন সাগরদিঘি থানার ওসি ও জঙ্গিপুরের সারকেল ইনস্পেক্টর পার্থ সিকদারও। তবে বিডিও দেবব্রত সরকার এ দিন উপস্থিত ছিলেন না।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২২ জন পঞ্চায়েত সদস্য পঞ্চায়েত সমিতির কমিউনিটি ভবনে ঢুকে নিজেরাই অনাস্থা সভা শুরু করেন। প্রায় পৌনে দু’ঘণ্টা ধরে সভা চলে। এ দিনের অনাস্থার আহ্বায়ক সাগরদিঘি পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ দলনেতা কিনার হোসেন বলেন, “নোটিশ জারি করে ২৪ ঘণ্টা আগে এভাবে তলবি সভা বন্ধ করা যায় না। সব কিছুর জন্যই একটা আইনি প্রথা রয়েছে। কিন্তু শাসক দল হিসেবে তৃণমূলের এ জেলার নেতারা সাগরদিঘিতে প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে আইন লঙ্ঘন করে তলবি সভা বন্ধ করার চেষ্টা করেছেন। তাই আমরা নিজেরাই ২২ জন সদস্য একত্রে বসে পঞ্চায়েত সভাপতিকে অপসারণ করে আমাদের সিদ্ধান্তের কথা প্রশাসনের সমস্ত আধিকারিককে তা ইমেল করে জানিয়ে দিয়েছি।” তিনি আরও বলেন, “এই সভার বৈধতা আছে কী নেই সেটা বড় প্রশ্ন নয়। তার ফয়সালা করতে মহকুমা শাসকের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাচ্ছি আমরা। কিন্তু এ দিনের সভায় সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে সাগরদিঘির মানুষের গণআদালতের কাছে এই বার্তাই পৌঁছে দিতে পেরেছি যে তৃণমূলের প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কোনও আস্থা নেই।”
অনাস্থা সভায় হাজির পঞ্চায়েত সদস্য কংগ্রেসের সুপ্রভাস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এদিনের গণঅনাস্থা প্রমাণ করেছে যে সাগরদিঘিতে তৃণমূলের প্রতি মানুষের ধিক্কার কতটা তীব্র। প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে মানুষের এই আস্থা ফেরানো যাবে না।” মোট ৮ জন কংগ্রেস সদস্যের মধ্যে এ দিন ৪ জন হাজির ছিলেন। সুপ্রভাতবাবুর দাবি, বাকিরা অনুপস্থিত থাকলেও তাঁরাও অনাস্থার পক্ষেই রয়েছেন। এ দিনের গণঅনাস্থাকে সমর্থন জানাতে হাজির ছিলেন সিপিএমের ৭জন পঞ্চায়েত সদস্যের সকলেই। সাগরদিঘি জোনাল কমিটির সদস্য রজব আলি মল্লিক বলেন, “সাগরদিঘিতে যাবতীয় কুকাজের প্রশ্রয়দাতা পঞ্চায়েত সমিতি। গত এক বছরে সাগরদিঘির মানুষ হাড়ে হাড়ে তা বুঝেছেন। এটা বুঝতে পেরেই তৃণমূলের সদস্যরাই দল ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন। শাসক দলের পঞ্চায়েতকে বাঁচাতে প্রশাসনিক কর্তারা অনাস্থা সভা স্থগিত করেছেন সম্পূর্ণ আইন ভেঙে। অনাস্থা সভায় উপস্থিতি দেখিয়ে দিয়েছে সাগরদিঘির মানুষ আর তৃণমূলের সঙ্গে নেই।”
এদিনের সভা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে না চাইলেও জঙ্গিপুরের মহকুমা শাসকের সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, “পরিস্থিতি বুঝেই সভা স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছি,” বিডিও দেবব্রত সরকার বলেন, “যা করা হয়েছে হায়ার অথরিটির কথা মতোই।” ‘গণ অনাস্থায়’ অপসারিত তৃণমুলের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আকলেমা বিবি এদিন ব্লক অফিসে আসেননি। মোবাইলেও তাঁকে ধরা যায়নি। তৃণমূলের জেলা সভাপতি মান্নান হোসেন অবশ্য বলেন, “যাঁরা অনাস্থা এনেছেন তাঁদের সকলেই তৃণমূলের। যে কোনও কারণেই হোক তাঁরা ক্ষুব্ধ হয়ে কংগ্রেস ও সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই অনাস্থা এনেছেন।” তিনি আরও বলেন, “তবে এতে প্রমানিত হয়না যে, সাগরদিঘিতে তৃণমূল মানুষের আস্থা হারিয়েছে। তবে দলের কিছুটা ক্ষতি তো হচ্ছেই। বিক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা হচ্ছে। তাঁদের দলের মূল স্রোতে ফেরাতেই হবে।”