বহরমপুরে অভিযুক্ত স্কুল মালিক

যৌন নিগ্রহের অভিযোগের পরেই স্কুল ছাড়ার হিড়িক

বহরমপুরের বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যমের একটি স্কুলের মালিকের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ওঠার পরেই ছাত্রীদের স্কুল ছেড়ে চলে যাওয়ার হিড়িক পড়েছে। রবিবার দুপুরে ওই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির আবাসিক এক জন ছাত্রী বিষয়টি প্রকাশ্যে আনে। এরপর গত দু’দিনে আবাসিক পাঁচ ছাত্রী স্কুল ছেড়ে গিয়েছে। তার মধ্যে এক জন প্রথম শ্রেণির, দু’জন পঞ্চম ও দু’জন সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৫৯
Share:

বহরমপুরের বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যমের একটি স্কুলের মালিকের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ওঠার পরেই ছাত্রীদের স্কুল ছেড়ে চলে যাওয়ার হিড়িক পড়েছে। রবিবার দুপুরে ওই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির আবাসিক এক জন ছাত্রী বিষয়টি প্রকাশ্যে আনে। এরপর গত দু’দিনে আবাসিক পাঁচ ছাত্রী স্কুল ছেড়ে গিয়েছে। তার মধ্যে এক জন প্রথম শ্রেণির, দু’জন পঞ্চম ও দু’জন সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। এরই মধ্যে মঙ্গলবার সকালে বহরমপুর থানার পুলিশের কাছে স্কুলের মালিক সুশান্ত কুমার দে’র বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহ চালানোর অভিযোগ দায়ের করেন চার জন আবাসিক ছাত্রী। যে চার জন ছাত্রী লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন, তাদের মধ্যে অষ্টম শ্রেণির দু’জন, এক জন দশম ও এক জন দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী রয়েছেন। ওই চার জন পৃথক ভাবে পুলিশের কাছে লিখিত বয়ানও জমা দিয়েছে। স্কুলের পক্ষ থেকে সহ-অধ্যক্ষ গণেশ চক্রবর্তীও অন্য একটি অভিযোগ দায়ের করেন। ওই অভিযোগ পেয়ে পুলিশ সুনির্দিষ্ট ধারায় অভিযুক্ত ওই স্কুল মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।

Advertisement

মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “ছাত্রীদের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়েছে।” তবে ওই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর রবিবার থেকে অভিযুক্ত সুশান্তকুমার দে পলাতক। যদিও ফোনে তিনি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে জানা গিয়েছে।”

এ দিকে, আইসি অরুণাভ দাস ঘটনার তদন্তে এ দিন সকালে স্কুলে যান। সেখানে গিয়ে তিনি ‘স্কুল যেমন চলছে, ঠিক তেমনি ভাবে চালানোর’ পরামর্শ দেন। সেই সঙ্গে সহ-অধ্যক্ষকে উদ্দেশ্য করে আইসি জানান, “স্কুলের মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় তিনি কোনও ভাবে স্কুলে ঢুকবেন না। তবে সুষ্ঠু ভাবে স্কুল চালানোর জন্য যদি কোনও আলোচনার প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে পরিচালন সমিতির সদস্য এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারা বহরমপুরে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন।” আইসি’র ওই ভূমিকা নিয়ে এলাকার বাসিন্দা থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের কথায়, যেখানে ছাত্রীরা তাদের উপরে যৌন নিগ্রহ চালিয়েছে বলে লিখিত অভিযোগ করছে, সেখানে আইসি’র ওই মন্তব্য কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। অবিলম্বে গ্রেফতার করা বা তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা না বলে পুলিশ অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। আইসি অবশ্য বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু এখনও ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনও মামলা দায়ের হয়নি।” সেক্ষেত্রে আবার প্রশ্ন উঠেছে, জেলা পুলিশ সুপার যেখানে মামলা দায়ের করার কথা বলছেন, সেখানে আইসি উল্টো পথে কেন হাঁটতে চাইছেন? তাহলে মামলা দায়ের করার কথা বলে জেলা পুলিশ সুপারকেও কী তিনি ভুল তথ্য পরিবেশন করেছেন?

Advertisement

বেসরকারি ওই স্কুল সিবিএসই বোর্ডের অধীনে রয়েছে। স্কুলে নার্সারি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় আটশো। তবে স্কুলে আবাসিক ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৫০। তার মধ্যে ৯ জন ছাত্রী এবং বাকিরা ছাত্র। আবাসিক ছাত্রীরা মুর্শিদাবাদের বহরমপুর, জিয়াগঞ্জ, সালার ছাড়াও যাদবপুর, সোনারপুর, বারাসত, মালদহ, পলাশি, কাটোয়া ও নলহাটি এলাকার বাসিন্দা। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি রবিবার ছুটির দিন দুপুর তিনটে থেকে পাঁচটা পর্যন্ত দু’ঘন্টার জন্য আবাসিক ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে তাদের অভিভাবকদের দেখা করার সুযোগ থাকে। সেই মতো রবিবার দুপুরে জিয়াগঞ্জের এক জন অভিভাবিকা তাঁর মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তখনই পঞ্চম শ্রেণির ওই ছাত্রী-আবাসিক তার মায়ের কাছে অভিযোগ করে, গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার তিন দিন ধরে তার উপরে যৌন নিগ্রহ করেছেন স্কুলের মালিক। তার পরেই ওই অভিভাবিকা বিষয়টি নিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তখন মালিক পক্ষ ও অভিভাবিকার মধ্যে তুমুল তর্কবিতর্ক শুরু হয়ে যায়। ওই দিনই মেয়েকে স্কুল থেকে বাড়ি নিয়ে চলে যান ওই অভিভাবিকা। বিষয়টি জানাজানি হতেই সোমবার দুপুর থেকে এলাকার বাসিন্দা থেকে অভিভাবক সকলেই এক যোগে ওই স্কুলে চড়াও হয়ে বিক্ষোভ দেখান। তখন স্কুল কর্তৃপক্ষ থানায় খবর দেন। পুলিশ এসে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে।

সাফাই বহরমপুরে। মঙ্গলবার ১০টায় ঝাঁটা হাতে রাস্তায় নেমে পড়েন শ’দুয়েক বিজেপি কর্মী। দুপুর ২টো পর্যন্ত চলে সাফাই অভিযান। বহরমপুর শহর লাগোয়া ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উত্তরপাড়া মোড়, খাগড়াঘাট স্টেশন চত্বর, রাধারাঘাটে তাঁরা সাফাই অভিযান চালান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement