ফরাক্কায় নিয়ন্ত্রণহীন বাসের ধাক্কায় মৃত দুই

নিয়ন্ত্রণহীন একটি বাস পরপর ধাক্কা মারল মোটর বাইক ও দাঁড়িয়ে থাকা লরিতে। মঙ্গলবার বেলা ১২টা নাগাদ ফরাক্কার খোসালপুর এলাকায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে ওই দুর্ঘটনায় মোটর বাইক চালক ও লরি চালকের মৃত্যু হয়েছে। জখম আরও তিন। হতাহতরা সকলেই স্থানীয় এলাকার বাসিন্দা। দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই ঘটনাস্থলে জড়ো হতে শুরু করেন তাঁদের পরিজন, পড়শিরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ফরাক্কা শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৪৩
Share:

দুর্ঘটনার পরে। —নিজস্ব চিত্র

নিয়ন্ত্রণহীন একটি বাস পরপর ধাক্কা মারল মোটর বাইক ও দাঁড়িয়ে থাকা লরিতে।

Advertisement

মঙ্গলবার বেলা ১২টা নাগাদ ফরাক্কার খোসালপুর এলাকায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে ওই দুর্ঘটনায় মোটর বাইক চালক ও লরি চালকের মৃত্যু হয়েছে। জখম আরও তিন। হতাহতরা সকলেই স্থানীয় এলাকার বাসিন্দা। দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই ঘটনাস্থলে জড়ো হতে শুরু করেন তাঁদের পরিজন, পড়শিরা। উত্তেজিত জনতা ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে পুলিশকে মৃতদেহ তুলতে বাধা দেয়। ভাঙচুর করে বাসটিতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ এলে জনতার সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠি, কাঁদানে গ্যাসের শেল, এমনকী শূন্যে এক রাউন্ড গুলিও চালিয়েছে বলে অভিযোগ।

পুলিশ সুপার সি সুধাকর অবশ্য লাঠি বা গুলি চালানোর কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “দুর্ঘটনার পর অবরোধ করা হয় সড়ক। পুলিশ গিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে অবরোধ তুলে দেয়।” ঘটনাস্থল থেকে ৮ জন বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দুপুর ১২ নাগাদ নিজের মোটর বাইকে করে ঝাড়খণ্ডের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে মোটর বাইকে স্ত্রী রুমেশা বিবি ও ৬ বছরের মেয়ে ইস্মিতা খাতুনকে নিয়ে কুলিগ্রামে বাড়ি ফিরছিলেন সফিকুল ইসলাম (৩৮)। খোসালপুর সেতু পেরিয়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে বাইকটি সবে উঠেছে, ঠিক তখনই দ্রুতগতিতে ফরাক্কা থেকে রঘুনাথগঞ্জগামী একটি বাস ধাক্কা মারে মোটর বাইকে। রাস্তায় ছিটকে পড়ে বাইকের তিন যাত্রীই গুরুতর জখম হন। বাসটি তখন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাঁধানো ডিভাইডার টপকে উল্টে দুই লেনের রাস্তায় উঠে পড়ে। সেই লেনের এক পাশে দাঁড়িয়েছিল ধান বোঝাই একটি লরি। লরির পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন সেটির চালক রামরামপুর গ্রামের বাসিন্দা ফটিক শেখ (৪০) ও মালিক নজরুল ইসলাম। বাসের ধাক্কায় লরি গিয়ে পড়ে রাস্তার পাশের গর্তে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় চালকের। জখম হন মালিক।

খোসালপুরের মোড়ে এক চায়ের দোকানে সেই সময় আড্ডা দিচ্ছিলেন ফরাক্কার গোয়ালমারি গ্রামের আনিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, “আমরা ছুটে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করি। বাসের যাত্রীরা তখন তারস্বরে আর্ত চিৎকার শুরু করেছেন। ধীরে ধীরে তাঁদের বাস থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে।” আহত ১৩ জন বাসযাত্রীকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তারাপুর কেন্দ্রীয় হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হলেও বাইক আরোহী মা ও মেয়ে এবং লরি মালিককে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

দুর্ঘটনার পরপরই আশপাশের গ্রাম থেকে হাজার কয়েক বাসিন্দা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। বাস আটকে ভাঙচুর শুরু করেন তাঁরা। বাসের চালক অবশ্য ততক্ষণে পালিয়েছেন। শুরু হয় অবরোধ। ফরাক্কা থানার পুলিশ এসে অবরোধ সরাতে গেলে জনতার সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ভয়ে পিছু হঠে পুলিশ। পরে বড় বাহিনী নিয়ে নিয়ে দুর্ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছন জঙ্গিপুরের এসডিপিও-সহ আশপাশের থানার ওসি ও আইসিরা। শুরু হয় লাঠিচার্জ। পাল্টা পুলিশের দিকে ঢিল, পাটকেল ছুড়তে থাকেন গ্রামবাসী। ঘণ্টা দুয়েক পরে রণে ভঙ্গ দিয়ে পিছু হঠতে বাধ্য হন অবরোধকারীরা।

স্থানীয় বাসিন্দা আলাইপুরের গোলাপ হোসেন জানান, ক’দিন আগেই ওই জায়গায় লরির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে স্থানীয় ভবানীপুরের বাসিন্দা আলতাফ শেখের। মঙ্গলবার দুর্ঘটনার ঘণ্টা দুই আগে ঠিক এই জায়গাতেই আর একটি বাইকের সঙ্গে লরির সংঘর্ষ ঘটার উপক্রম হয়েছিল। বাইক চালক পড়ে গেলেও মাথায় হেলমেট থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। গোলাপ হোসেনের কথায়, “প্রায় প্রতিদিনই এখানে দুর্ঘটনা ঘটছে। সেতু থেকে নামার সময় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে একটি গর্ত পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক করে তুলছে।”

এই এলাকারই বাসিন্দা মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি ওবাইদুর রহমান। তিনি মেনে নেন, “এখন চার লেন হওয়ায় যানের গতি বেড়েছে। একটু অসতর্ক হলেই তা মারাত্মক হয়ে উঠছে। খোসালপুর সেতু ও ৩৪ নম্বর সড়কের মধ্যে সংযোগ পথটুকু বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।” তিনি বলেন, “বার বার একই জায়গায় দুর্ঘটনা ঘটছে কেন দেখতে হবে। জেলা পরিষদ নির্মাণকারী সংস্থার সঙ্গে কথা বলবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement