ফরাক্কায় তোলাবাজির দাপটে বন্ধ কিসান মান্ডির কাজ

কাটোয়ার পরে এ বার ফরাক্কা। ফের তোলা চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প কিসান মান্ডির কাজে বাধা দিল দুষ্কৃতীরা। এ বার অবশ্য তৃণমূলের পাশাপাশি রয়েছে কংগ্রেস ও সিপিএম-আশ্রিত দুষ্কৃতীরাও। বুধবার মুর্শিদাবাদের ফরাক্কার বল্লালপুরের ওই ঘটনায় বিডিও-র কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন কৃষি বিপণন দফতরের এক কর্তা।

Advertisement

বিমান হাজরা

ফরাক্কা শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:১৮
Share:

কাটোয়ার পরে এ বার ফরাক্কা।

Advertisement

ফের তোলা চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প কিসান মান্ডির কাজে বাধা দিল দুষ্কৃতীরা। এ বার অবশ্য তৃণমূলের পাশাপাশি রয়েছে কংগ্রেস ও সিপিএম-আশ্রিত দুষ্কৃতীরাও। বুধবার মুর্শিদাবাদের ফরাক্কার বল্লালপুরের ওই ঘটনায় বিডিও-র কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন কৃষি বিপণন দফতরের এক কর্তা।

মাসখানেক আগে বর্ধমানের কাটোয়ায় শ্রীখণ্ড গ্রামে প্রথমে ফোনে ঠিকাদারকে তোলা চেয়ে হুমকি, তা দিতে না চাওয়ায় নির্মীয়মাণ কিসান মান্ডির কাজ আটকে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল-আশ্রিত লোকজনের বিরুদ্ধে। সেখানে দু’দিন কাজ বন্ধ থাকার পরে পুলিশি পাহারায় ফের কাজ শুরু হয়েছিল।

Advertisement

তবে বল্লালপুরে বৃহস্পতিবারেও দুষ্কৃতীদের ভয়ে কাজ শুরু করতে পারেননি ঠিকাদার।

রাজ্যের কৃষি বিপণন দফতরের উদ্যোগে বল্লালপুরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে সরকারি কৃষি ফার্মে চার একর জমিতে তৈরি হচ্ছে ওই কিসান মান্ডি। তার জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৫ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা। ওই কাজের বরাত পেয়েছে ফরাক্কার একটি ঠিকাদার সংস্থা। বুধবার স্থানীয় শ্রমিকদের নিয়ে বেলা এগারোটা নাগাদ ওই ফার্মে গিয়েছিলেন ঠিকাদার ও কৃষি বিপণন দফতরের কর্তারা। তখনই জনা কুড়ি দুষ্কৃতী এসে সাফ জানিয়ে দেয়, সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা থেকে কিছু ভাগ না পেলে তারা কাজ করতে দেবে না।

ঠিকাদার সংস্থার মালিক নুরুল ইসলাম বলেন, “ওদের খুনের হুমকি ও আস্ফালন দেখে আমরা আর কেউ ঝুঁকি নিয়ে কাজ করিনি। স্থানীয় শ্রমিকদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি, দুষ্কৃতীদের মধ্যে কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম সব দলেরই লোকজন ছিল।” নুরুল জানান, রাজ্য কৃষি বিপণন দফতরের কর্তারা বলেছিলেন, কাজ করতে বাধা পেলে পুলিশের কাছে না গিয়ে তাঁদেরকে আগে জানাতে। সেই মতো দফতরের সহকারি বাস্তুকার বিমল দাসকে গোটা ঘটনা ফোন করে জানান নুরুল। বিমলবাবুর নির্দেশে ওই দফতরের সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সন্তু বেরা বৃহস্পতিবার প্রথমে জঙ্গিপুরের মহকুমাশাসকের সঙ্গে দেখা করেন। পরে তিনি ফরাক্কার বিডিওকে লিখিত অভিযোগ জানান। দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ দিনই কলকাতায় ফেরেন সন্তুবাবু।

বিডিও সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, “বল্লালপুরে যে কিসান মান্ডি তৈরি হচ্ছে সে ব্যাপারে আমরা কিছুই জানতাম না। অভিযোগ পেয়েছি। উন্নয়নের পথে বাধা দিলে তা কড়া হাতে মোকাবিলা করবে প্রশাসন।” দ্রুত বল্লালপুরে কিসান মান্ডির কাজ শুরু হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন বিডিও।

রাজ্য কৃষি বিপণন দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার বিমল দাস বলেন, “দুষ্কৃতীদের হুমকিতে কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনকে সব ঘটনা জানানো হয়েছে।” দফতরের মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “দফতরের কাছ থেকে রিপোর্ট চাইব। মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলেছি।”

প্রত্যাশিত ভাবেই সবক’টি রাজনৈতিক দলের জেলা নেতারা ওই দুষ্কৃতীদের দলে নিজেদের লোক থাকার কথা অস্বীকার করে অন্যদের প্রতি আঙুল তুলেছেন। তৃণমূলের জেলা কমিটির সহ সভাপতি সোমেন পাণ্ডে, সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আবুল হাসনাত খান ও ফরাক্কার বিধায়ক কংগ্রেসের মইনুল হক দাবি করেন, দুষ্কৃতী যে দলেরই হোক, কড়া ব্যবস্থা নিক পুলিশ।

মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “এখনও পর্যন্ত এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগ জানাননি। অভিযোগ পেলেই দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে পুলিশ কড়া পদক্ষেপ করবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement