ছাত্রীদের উপরে যৌন নিগ্রহের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পুলিশ এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি। উল্টে পুলিশের ভুলে আদালতে এসেও ‘গোপন জবানবন্দি’ দিতে পারল না ছাত্রীরা। ওই ঘটনায় অবশ্য পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় চার ঘন্টা ধরে মুর্শিদাবাদ সিজেএম আদালতে চক্বর কাটাতে বাধ্য হয় তারা। শেষ পর্যন্ত পুলিশ যখন গাড়িতে করে তাদের স্কুলে পাঠিয়ে দেয় তখন ঘড়িতে দুপুর আড়াইটে। দিনভর এই হয়রানির পরে ওই ছাত্রীরা ও তাদের অভিভাবকেরা পুলিশের ভূমিকায় ব্যাপক ক্ষুব্ধ।
বহরমপুরের বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যমের একটি স্কুলের মালিক সুশান্তকুমার দে’র বিরুদ্ধে গত রবিবার ছাত্রীদের উপরে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনায় মঙ্গলবার চার জন ছাত্রী বহরমপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। এর পাশাপাশি স্কুলের সহ-অধ্যক্ষও পৃথক একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পুলিশ ‘৭/৮ প্রোটেকশন অফ চাইল্ড ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্স অ্যাক্ট’ অনুযায়ী মামলা দায়ের করেছে। ওই আইনের যাবতীয় মামলার বিচার শোনার জন্য জেলা জজ আদালতের দ্বিতীয় অতিরিক্ত দায়রা বিচারকের বিশেষ আদালত হিসেবে নিযুক্ত রয়েছে। ওই আদালতের সরকারি আইনজীবী মিতাভ্র ধরগুপ্ত বলেন, “১৬ বছরের নীচে কোনও নাবালিকার উপরে যদি যৌন নির্যাতন হয়, তাহলে তার জন্য ‘প্রোটেকশন অফ চাইল্ড ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্স’ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। তাই পুলিশ ওই আইনে কোনও মামলা দায়ের করলে তারা যাবতীয় নথি ওই বিশেষ আদালতেই পাঠাতে হবে। সেক্ষেত্রে গোপন জবানবন্দির কোনও আবেদন যদি পুলিশ করে, তাহলে ওই আদালতের বিচারকের কাছে করতে হবে। তখন ওই বিচারক কোনও এক জন ম্যাজিষ্ট্রেটকে ওই গোপন জবাবনবন্দি নথিভূক্ত করার জন্য নির্দেশ দিতে পারেন।”
কিন্তু এক্ষেত্রে বহরমপুর থানার পুলিশ ওই বিশেষ আদালতের বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি নথিভুক্ত করার কোনও আবেদনই করেনি। পুলিশ সিজেএম আদালতের বিচারকের কাছে সরাসরি গোপন জবাবনন্দি নেওয়ার আবেদন জানায়। ফলে সিজেএম আদালতের বিচারক পুলিশের ওই আবেদন মঞ্জুর করেনি। আর সেই কারণেই এমন ভোগান্তি। স্কুলের শিক্ষিকা অনিন্দিতা চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “বহরমপুর থানার আইসি অরুনাভ দাস গত বৃহস্পতিবার স্কুলে গিয়ে গোপন জবানবন্দি নথিভূক্ত করার জন্য এ দিন ওই ছাত্রীদের আদালতে হাজির করানোর কথা বলেন। জবানবন্দি নথিভূক্ত করা হবে না জানার পরেই আদালত চত্বর থেকেই আইসি-কে ফোনে গোটা বিষয়টি জানাই। কিন্তু তিনি ফোনে আমার সঙ্গে অভব্য আচরণ করেন। তিনি শুরু থেকেই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আড়াল করার চেষ্টা করছেন বলে মনে হয়েছে।”
এ দিন সকালে ১০টা নাগাদ বহরমপুর থানার পুলিশের গাড়ি বানজেটিয়ার ওই স্কুলে যায়। সেখান থেকে সহ-অধ্যক্ষ এবং একজন শিক্ষিকা-সহ ওই চার জন ছাত্রীকে গাড়িতে তুলে বহরমপুর থানায় নিয়ে আসা হয়। সেখানে প্রায় ৪৫ মিনিট বসিয়ে রাখার পরে তাদের সিজেএম আদালতের পুলিশ লক-আপে নিয়ে যায় পুলিশ। এর পরে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় বিচারকের এজলাসে। কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশ ছাড়া ওই ছাত্রীদের কোনও গোপন জবানন্দি রেকর্ড করা সম্ভব নয় বলে সিজেএম আদালতের পক্ষ থেকে জানানোর পরে তাদের ফের আদালতের পুলিশ লক-আপে নিয়ে যায় পুলিশ। আবার সেখান থেকে আদালতের এজলাস এবং শেষে বহরমপুর থানা হয়ে স্কুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
গোটা বিষয়টি শুনে পুলিশের সমালোচনা করেন মুর্শিদাবাদের পাবলিক প্রসিকিউটর তথা বহরমপুর বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিকি। তিনি বলেন, “আইন সম্বন্ধে অজ্ঞতা থাকার কারণেই পুলিশ ওই ভুল করেছে।”
যদিও ‘ভুল’ স্বীকার করতে রাজি হননি বহরমপুর থানার আইসি অরুনাভ দাস। তিনি বলেন, “এর আগে ওই আইনে অন্য একটি মামলায় গোপন জবানবন্দি নথিভূক্ত করার জন্য সিজেএম আদালতে আবেদন করা হয়। তখন কিন্তু ওই আদালত জবানবন্দি নথিভূক্ত করেছে। এক্ষেত্রে কেন করেনি, জানি না। তবে সংশোধন করে সিজেএম আদালতের বদলে জেলা জজ আদালতের ওই বিশেষ আদালতে আবেদন করার নির্দেশ দিয়েছি।”