জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় ওরা একা নয়, সঙ্গে শহর-গ্রাম, পুরো জেলাই। সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। পরীক্ষার্থীদের পাশাপাশি শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিখুঁত করতে দিনরাত এক করে ফেলেছেন বাবা-মায়েরাও। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড থেকে সামাজিক উৎসবে লাগাম টেনেছেন প্রশাসনের কর্তারা। বিয়েবাড়ি থেকে বারোয়ারি পুজো, বইমেলা থেকে নাট্য উৎসব পরীক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে সকলেই সতর্ক--- চুপ, সামনে মাধ্যমিক।
নবদ্বীপের আই সি তপনকুমার মিশ্র বলেন, “পরীক্ষা তো চলবে দুপুর বারোটা থেকে তিনটে পর্যন্ত। কিন্তু আমাদের পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে সকাল আটটা থেকেই। দোলের মরসুমে বাসস্ট্যান্ড, খেয়া ঘাট এবং শহরের পথঘাট যাতে যানজট মুক্ত থাকে সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। এছাড়াও এলাকায় যাতে কোনও অবাঞ্ছিত ঘটনা না ঘটে সেদিকেও লক্ষ রাখা হচ্ছে। জীবনের প্রথম পরীক্ষা যাতে নির্বিঘ্নে দিতে পারে পড়ুয়ারা তার জন্য আমরাও তৈরি। ইতিমধ্যেই জারি হয়ে গিয়েছে ১৪৪ ধারা।”
এ দিকে, মন্দিরনগরী নবদ্বীপের প্রধান উৎসব দোলের বাকি আর কটা মাত্র দিন। ইতিমধ্যে মন্দিরে মন্দিরে শুরু গিয়েছে তার প্রস্তুতি। দেশি বিদেশি পর্যটকেরা আসতে শুরু করে দিয়েছেন নবদ্বীপে। মঠ-মন্দির কর্তৃপক্ষ কী ভাবছেন? গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজের সম্পাদক অদ্বৈত দাস বলেন, “সাধারণত বড় মঠ বা মন্দির নিয়ম মেনেই চলে। কিন্তু কিছু ছোট মঠ বা মন্দির শব্দের ব্যাপারে সচেতন নন। আমরা গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজের তরফ থেকে এ ব্যাপারে প্রত্যেককে জানিয়ে দিয়েছি, যেন পরীক্ষার্থীদের সমস্যা না হয়।”প্রস্তুতিটা অবশ্য শুরু হয়েছিল সেই ডিসেম্বরেই। ভরা পিকনিকের মরসুমে শব্দের তাণ্ডব রুখতে রাতদুপুরে পথে নেমেছিলেন নবদ্বীপের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা। সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, “সামনেই মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। ছেলেমেয়েরা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই সময়ে কোনওরকম বেয়াদপি বরদাস্ত করা হবে না।” বলাই বাহুল্য, মন্ত্রীর এক হুঁশিয়ারিতে রাতারাতি শব্দ উধাও হয়ে শহর শান্ত হয়ে যায়। মাধ্যমিকের আগে মাইক সংক্রান্ত কোনও অনুরোধে কান দিচ্ছে না পুলিশ। পরীক্ষার জন্য পিছিয়ে গিয়েছে নবদ্বীপ বইমেলাও।
পরীক্ষার প্রস্তুতিতে তৈরি মুর্শিদাবাদও। বহরমপুরের মহকুমাশাসক সুপ্রিয় দাস বলেন, “মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন মাইকে প্রচার বন্ধ করার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। পরীক্ষার্থীরা সুষ্ঠু ভাবে যাতে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে পারে, তার জন্য যথেষ্ট সংখ্যক ট্র্যাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যানজট এড়াতে শহরের বেশ কিছু রাস্তা একমুখী করা হয়েছে।”
মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্র চক্রবর্তী জানান, পরীক্ষা চলাকালীন জেলার প্রতিটি থানার পুলিশ আধিকারিকদের সতর্ক থাকার জন্য বিশেষ নির্দেশ জারি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বহরমপুরের প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রের মোড়ে যানজট নিয়ন্ত্রণে পুলিশ আধিকারিক মোতায়েন রাখার কথাও বলা হয়েছে। ওসি (শিক্ষা) দেবব্রত বিশ্বাস বলেন, “পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের আধিকারিকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, যাতে সময় মতো পরীক্ষার্থীরা বাসে করে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে পারে। পরীক্ষা চলাকালীন বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যাহত না হয়, তা দেখার জন্য বিদ্যুৎ দফতরের কর্তাদেরও অনুরোধ করা হয়েছে। জেলার প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে স্বাস্থ্যকর্মী মোতায়েন থাকবে। সব মিলিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটুকু করা সম্ভব, তার সবই করা হয়েছে।”