নিহতের বাড়িতে ক্ষোভের মুখে শিক্ষকরা

ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদে ছাত্র খুনের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত কালু দত্ত ও গোবিন্দ দাসকে গ্রেফতার করল শান্তিপুর থানার পুলিশ। তাদের বাড়ই ফুলিয়ার প্রফুল্লনগরে। বৃহস্পতিবার রাতে মোবাইল ফোনের টাওয়ারের সূত্র ধরে দিব্যডাঙা গ্রামের একটি আম বাগান থেকে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। শুক্রবার ধৃতদের রানাঘাট আদালতে তোলা হলে বিচারক সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ফুলিয়া শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৪ ০০:৫৮
Share:

ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদে ছাত্র খুনের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত কালু দত্ত ও গোবিন্দ দাসকে গ্রেফতার করল শান্তিপুর থানার পুলিশ। তাদের বাড়ই ফুলিয়ার প্রফুল্লনগরে। বৃহস্পতিবার রাতে মোবাইল ফোনের টাওয়ারের সূত্র ধরে দিব্যডাঙা গ্রামের একটি আম বাগান থেকে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। শুক্রবার ধৃতদের রানাঘাট আদালতে তোলা হলে বিচারক সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।

Advertisement

বুধবার ঘটনার দিন রাতেই মূল অভিযুক্ত, ফুলিয়া শিক্ষা নিকেতনের একাদশ শ্রেণির ছাত্র দুর্জয় সরকার ওরফে দেবব্রতকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই খুনের ঘটনায় যুক্ত অভিযোগে নিহত অজয় ঘোষের সহপাঠী ও ফুলিয়া বিদ্যামন্দিরের ছাত্র সাধন সরকারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তদন্তে নেমে পুলিশ সাধন সরকারের আত্মীয় গোবিন্দ দাস ও তার সঙ্গী কালু দত্তের নাম জানতে পারে। এর পরেই মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে কালু ও গোবিন্দের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়। জেলার পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র বলেন, “দুই স্কুল পড়ুয়া সহ এখনও পর্যন্ত মোট চার জনকে আমরা গ্রেফতার করেছি। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তে যদি আরো কারও নাম উঠে আসে তাদেরও গ্রেফতার করা হবে।”

ধৃতদের আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে (বাঁ দিকে)।
ফুলিয়ায় বন্ধ বাজার, সুনসান রাস্তা। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত কালু ও গোবিন্দ এলাকায় সমাজবিরোধী বলে পরিচিত। তাদের বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ রয়েছে তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।

বুধবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা দিয়ে বের হওয়ার পরেই স্কুল চত্বরের ভিতরে খুন হয় ফুলিয়া বিদ্যামন্দিরের ছাত্র অজয় ঘোষ (১৭)। ঘটনার দু’দিন আগে স্কুল চত্বরের ভিতরে পাশের স্কুল ফুলিয়া শিক্ষানিকেতনের ছাত্র দুর্জয় সরকার নিহত ছাত্র অজয়ের এক সহপাঠিনীকে উত্যক্ত করে বলে অভিযোগ। অজয় তার প্রতিবাদ করলে তাকে তখনই মারধর করা হয় এবং প্রাণে মারারও হুমকি দিয়ে যায়। ওই গণ্ডগোলের জেরেই এই খুনের ঘটনা বলে তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে।

ধরা পড়ার পরে জেরার মুখে দুর্জয় নিজের অপরাধের কথা কবুল করার পাশাপাশি ঘটনার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের কথাও জানিয়ে দেয় বলে পুলিশের দাবি। শুক্রবার সাধন সরকারকে কৃষ্ণনগর জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে হাজির করা হয়। কিন্তু সাধন সরকারের বয়স ১৮ বছরের বেশি হওয়ায় মামলাটি রানাঘাট আদালতে স্থানান্তরিত করার নির্দেশ দিয়েছেন জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের বিচারক। সরকার পক্ষের‌ আইনজীবী অরুণ পাইক বলেন, ‘‘জন্ম শংসাপত্র ও মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ডের জন্ম তারিখ অনুযায়ী অভিযুক্তের বয়স ১৮ বছরের বেশি হওয়ায় এই মামলাটি রানাঘাট আদালতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। শনিবার তাকে রানাঘাট আদালতে হাজির করানো হবে।’’


শুক্রবার সন্ধ্যায় ফুলিয়ায় মোমবাতি মিছিল করেন এলাকার মানুষ। মিছিলে যোগ দেন
নিহত ছাত্র অজয় ঘোষের মা রমাদেবীও। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

অজয়ের খুনের ঘটনার পর ফুলিয়াতে একটা চাপা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়। বৃহস্পতিবার সকালে বেশ কিছু স্থানীয় বাসিন্দা দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবিতে একটা মিছিল বের করেন। সেই মিছিলে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদেরও দেখা যায়। বিকেলে অজয়ের মৃতদেহ তার ফুলিয়ার বুঁইচা-ব্যাঙগর্ত কলোনির বাড়িতে নিয়ে এলে এলাকার আতঙ্কিত ছাত্র-ছাত্রীরা কেউ ধারে কাছে ঘেঁষার সাহস দেখায়নি। কিন্তু শুক্রবার সকাল থেকে পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টাতে থাকে এদিন সকালে ফুলিয়া বাজার,বাসস্ট্যান্ড ও স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় একটি মিছিল বের হয়। মিছিলে হাঁটতে দেখা যায় এলাকার বাসিন্দা ও শান্তিপুর বিধানসভা উপনির্বচনের সিপিএম প্রার্থী অনুপ ঘোষ সহ একাধিক সিপিএম নেতাকে। তবে নিহত অজয়ের স্কুল ফুলিয়া বিদ্যামন্দিরের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন এলাকার মানুষ। এ দিন ওই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা অজয়ের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের লোককে সমবেদনা জানাতে গেলে রীতিমতো ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় তাঁদের। গ্রামের মানুষ ও পরিবারের লোকেরা সরাসরি স্কলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। নিহত ছাত্রের মা রমাদেবী বলেন, ‘‘স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভূমিকা আমাদের কাছে খুবই অমানবিক বলে মনে হয়েছে। প্রথম দিন খবর পেয়ে আমি যখন স্কুলে গিয়ে কান্নাকাটি করছিলাম তখন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা দূরে দাঁড়িয়েছিলেন। আমার কাছে কেউ একবার এসে শান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেননি। শুধু তাই নয় স্কুলের ভিতরে আমার ছেলে গুলি খেয়ে রক্তাক্ত আবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেও স্কুলের কেউ এগিয়ে এলেন না। তাঁরা হাসপাতালেও যাননি।” কেউ গেলেন না’’ তিনি বলেন, ‘‘ভাবতে অবাক লাগছে আমার ছেলের মৃতদেহে একটা ফুলের মালা পর্যন্ত স্কুল থেকে কেউ দিতে এলেন না। আজ তিন দিন পরে সব কিছু মিটে যাওয়ার পরে এসেছেন দেখা করতে।’’

স্কুলের প্রধানশিক্ষক অসিত মণ্ডল অবশ্য বলেন, “গোটা ঘটনার জন্য আমরা অজয়ের পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি। আমাদের উচিত ছিল আগেই অজয়ের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর।” কিন্তু কেন সেটা করা হল না? অসিতবাবুর সাফাই, ‘‘আসলে আমাদের স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। তাছাড়া সকলেরই মাধ্যমিকের খাতা দেখা ও জমা দেওয়ার ব্যস্ততা থাকায় সবাইকে একত্রিত করা যাচ্ছিল না।’’

এদিন সন্ধ্যায় ফুলিয়া বাজার, স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় মোমবাতি মিছিল করেন এলাকার মানুষ। দোষীদের চরম শাস্তির দাবিতে মিছিলে পা মেলান বিভিন্ন বয়সের মানুষ। পা মেলান নিহত ছাত্র অজয় ঘোষের মা, দাদা ও পরিবারের লোকজন। শুক্রবার ওই খুনের ঘটনার প্রতিবাদে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে ফুলিয়ায় দোকান, বাজার সবই এ দিন বন্ধ ছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement