সারাদিন ব্যস্ততার মধ্যেই কাটালেন জঙ্গিপুর কলেজের নবনিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নবকুমার ঘোষ। বুধবার ১১টা নাগাদ আসেন অধ্যক্ষের ঘরে। আধ ঘন্টা মতো সেখানে কাটিয়ে প্রাথমিক কাজকর্ম সারতে কলেজের হিসেবরক্ষককে সঙ্গে নিয়ে জঙ্গিপুর সাব-ট্রেজারিতে যান। নববাবু বলেন, “কোনও দিন কোনও প্রশাসনিক কাজে থাকিনি। কথা দিয়েছেন সকলেই সহযোগিতা করবেন। ছাত্র সংগঠনগুলির সঙ্গেও আলোচনায় বসব। আশা করছি তারাও আন্দোলন করবে সংযত ভাবেই। ফলে কলেজ চালাতে অসুবিধে হবে না।” তিনি আরও জানান, আজই কলকাতায় শিক্ষা দফতরে যাবেন কলেজের নয়া টিআইসি হিসেবে অনুমোদনের জন্য।
ছাত্রভর্তি নিয়ে ক্রমাগত ছাত্র সংগঠনগুলির ঘেরাও, অধ্যক্ষকে তালাবন্দি করে রাখা ও বিক্ষোভে জেরবার হয়ে সম্প্রতি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অসীম মণ্ডল পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার জন্য কলেজ পরিচালন কমিটির কাছে দরখাস্ত জমা দিয়েছিলেন। তা নিয়ে আলোচনার জন্য পরিচালন সমিতির বৈঠক ডাকা হয় মঙ্গলবার। যদিও অসীমবাবুর জানিয়েছেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে কলেজের প্রশাসনিক কাজ সামলাতে পারছিলেন না। তাই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চাইছেন। তবে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেয়ে অসীমবাবু ছাত্র সংগঠনগুলির উদ্দেশ্যে আবেদন জানান, “ছাত্র আন্দোলন আগেও ছিল। ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু তাদের উচিত শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া।”
মঙ্গলবারের ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন অসীমবাবু-সহ সমিতির ১৩ জন সদস্যের মধ্যে ১১ জনই। সভাতেই কলেজের পরবর্তী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে কলেজেরই রসায়নের বিভাগের শিক্ষক নবকুমার ঘোষকে। তিনি কলেজ হোস্টেলের সুপার পদেও রয়েছেন। পরিচালন সমিতির ডাক পেয়ে এ দিনের সভায় সম্মতি জানাতে কিছুক্ষণের জন্য হাজির হন তিনি। কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি ভজন সরকার বলেন, “স্কুল, কলেজে কোনও শিক্ষককে তালাবন্দি করে রাখা, ঘেরাও করা কোনও আন্দোলন নয়। এই বেপরোয়া মনোভাবকে কেউই সমর্থন করেন না।” সভাপতি জানান, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর স্থায়ী অধ্যক্ষ অবসর নেওয়ায় নয়া অধ্যক্ষ চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে ২৫ জানুয়ারি। কিন্তু স্থায়ী অধ্যক্ষ কবে পাওয়া যাবে বা আদৌ পাওয়া যাবে কিনা কারওই জানা নেই। এভাবে কলেজটা চলবে কি করে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিচালন সমিতির সদস্যরা।
সভায় ছিলেন দুই ছাত্র নেতা ওই কলেজেরই ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন জিএস বিকাশ নন্দ ও বর্তমান জিএস এসএফআইয়ের ইঞ্জামুল হক। বিকাশ বলেন, “আমরাও কলেজে আন্দোলন করেছি। কিন্তু অধ্যক্ষকে তালা মেরে ঘরে আটকে রাখার মতো হঠকারিতা করিনি। অসীমবাবুর সঙ্গে যা করা হয়েছে তা নিন্দনীয়।” অন্য দিকে, ইঞ্জামুল বলেন, “সবসময় ছাত্র আন্দোলনের উপর নেতাদের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তাই কিছু কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে যায়। স্বাভাবিক ভাবেই তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। জঙ্গিপুর কলেজেও তা ঘটেছে।” জঙ্গিপুরের পুরপ্রধান মোজাহারুল ইসলাম বলেন, “এবার ছাত্র আন্দোলনের উপর লাগাম টানার কথা ভাবতে হবে ডান, বাম সব দলকেই। তা নাহলে আজ জঙ্গিপুর কলেজে যা ঘটেছে কাল অন্য কলেজেও তাই ঘটবে। টিআইসি বদল করে এর সমাধান হবে না।”