জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলার কথা মাথায় রেখে আরও একটি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদ সৃষ্টি করা হল নদিয়াতে। এতদিন জেলায় একটি মাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের পদ ছিল। এ বার জেলার তেহট্ট মহকুমার পাঁচটি থানার পাশাপাশি কৃষ্ণনগর সদর মহকুমার চারটি থানার দায়িত্বে থাকবেন এই নতুন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ)।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি ভাবে এই নির্দেশিকা জেলায় পাঠানো হয়েছে। ওই নতুন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দফতর হবে তেহট্টে। সেখান থেকেই তিনি দায়িত্ব সামলাবেন। খুব শীঘ্রই নতুন পদে নিয়োগ করা করা হবে বলে জেলার পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।
জেলার চার মহকুমা, কল্যাণী, রানাঘাট, কৃষ্ণনগর সদর ও তেহট্টে মোট ২১টি থানা রয়েছে। তারমধ্যে তেহট্ট মহকুমার তেহট্ট, করিমপুর, মুরুটিয়া, হোগলবেড়িয়া ও থানারপাড়া থানার পাশাপাশি কৃষ্ণনগর সদর মহকুমার কালীগঞ্জ, নাকাশিপাড়া, চাপড়া ও ধুবুলিয়ার দায়িত্বে থাকবেন নতুন ওই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। এর ফলে ওই এলাকায় পুলিশের নজরদারি যেমন বাড়বে তেমনই অপরাধের সংখ্যাও কমবে বলে মনে করছেন জেলার পুলিশ কর্তারা। কিন্তু কেন এতদিন পরে ওই ন’টি থানার জন্য আলাদা করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নিযোগ করা হচ্ছে?
জেলা পুলিশের কর্তাদের দাবি, এর অন্যতম কারণ হল জেলা সদর থেকে ওই সব থানার দূরত্ব। জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘জেলা সদর থেকে হোগলবেড়িয়া থানার দূরত্ব প্রায় ১২০ কিলোমিটার। কোনও ঘটনা ঘটলে সেখানে পৌঁছতে অনেক সময় লাগে। প্রত্যন্ত এলাকা হলে তো আর কথাই নেই। একই কারণে অনেক সময়ই থানাগুলোয় নিয়মিত ‘ভিজিট’ করতে পারেন না জেলার কর্তারা।” তিনি বলেন, “বর্তমান এসডিপিও-র উপর মাত্রাতিরিক্ত চাপ কমানোর পাশাপাশি আরও একাধিক কারণে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।”
পুলিশ কর্তাদের দাবি, মুর্শিদাবাদ সংলগ্ন তেহট্ট, থানারপাড়া, কালীগঞ্জ, নাকাশিপাড়া এলাকায় পোস্ত, গাঁজা চাষ, বেআইনি মাদক ব্যবসার রমরমা রয়েছে। একাধিকবার অভিযান চালিয়ে কিছুটা রাশ টানা গেলেও পুরোপুরি নির্মূল করা যায়নি। ওই এলাকায় এক সময় মাওবাদীদেরও ভাল প্রভাব ছিল।
ওই এলাকায় বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। একটা সময় তেহট্ট, করিমপুর, মুরুটিয়া কিংবা হোগলবেড়িয়া এলাকার ওই সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামগুলোতে পাচারের রমরমার পাশাপাশি ডাকাতি, খুন ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। সে সব এখন বন্ধ হলেও পাচার কিন্তু এখনও বন্ধ হয়নি।
তাছাড়া সম্প্রতি বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণ-কাণ্ডের সুতোয় উঠে এসেছে করিমপুর, কালীগঞ্জ ও থানারপাড়ার। সব মিলিয়ে ওই এলাকাগুলোতে এখন কড়া নজরদারির প্রয়োজন। আর সেই কারণেই অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের এই পদ বলে দাবি পুলিশ কর্তাদের।
এর পাশাপাশি রয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতাও। মাস কয়েক আগে প্রকাশ্য দিবালোকে থানারপাড়ার নারায়ণপুর এলাকায় খুন হন তৃণমূলের আনিসুর রহমান। ওই ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই নারায়ণপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ঢুকে সিপিএম সদস্য আব্দুল হককে খুন করে দুষ্কৃতীরা। এ ছাড়াও বেশ কিছু এলাকায় এখনও পর্যন্ত সিপিএম ও তৃণমূলের সাংগঠনিক ক্ষমতা প্রায় সমান সমান। মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বিজেপিও। সব মিলিয়ে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে ওই এলাকায় রাজনৈতিক অস্থিরতা মাথাচাড়া দেওয়ারও একটা আশঙ্কা করছে খোদ পুলিশ মহল। ফলে অপ্রীতিকর কোনও পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগেই বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হচ্ছে জেলা পুলিশের তরফে। এই নতুন এএসপি-র বিষয়টিও সেই পদক্ষেপেরই একটি।
তবে থানা কিংবা পুলিশের সংখ্যা না বাড়িয়ে পরিস্থিতি কতটা নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, “অবিভক্ত করিমপুর থানায় একটা সময় আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছিল। পরে করিমপুর থানা ভেঙে আরও তিনটি থানা হওয়ার পরে পরিস্থিতি আয়ত্তে আসে। তেহট্ট থানার এলাকা নেহাত কম নয়। এই এলাকায় আমরা থানা বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছিও বহু দিন থেকে। সেটা না করে শুধু একটি পদ বাড়িয়ে এলাকার মানুষের কতটা উপকার হবে কিংবা ভোগান্তি কতটা কমবে তা বুঝতে পারছি না।”