রিকশায় বাড়ি ফেরার পথে দু’দল সমাজবিরোধীর গুলি চালাচালির মধ্যে পড়ে মারা গিয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া এক ছাত্র। মাস দুয়েক আগে, কৃষ্ণনগরের সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখল নদিয়ার অন্য এক শহর ফুলিয়া।
জেলা সদর কৃষ্ণনগর থেকে সাকুল্যে ত্রিশ কিলোমিটার দূরের ফুলিয়ায়, সোমবার রাতের গুলির লড়াই অবশ্য দু’ দল দুষ্কৃতীর নয়। এ ঘটনায় অভিযোগের আঙুল সরাসরি শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। শান্তিপুরের ফুলিয়া পাড়ার জনবহুল বাজার এলাকায় এ দিন রাত আটটা নাগাদ ওই ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছে বছর পনেরোর এক কিশোর। সুজন মণ্ডল নামে ওই কিশোরকে ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ভর্তি করানো হয়েছে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে। সুজনের বাবা জয়দেব মণ্ডল এ ব্যাপারে অভিযোগ দায়ের করেছেন শান্তিপুর কলেজের টিএমসিপি নেতা মনোজ সরকার-সহ ৭ জনের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ পেয়েই পুলিশ অবশ্য শাসক দলের ওই ছাত্র নেতাকে ‘আড়াল’ করার চেষ্টা শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন সুজনের পরিবার। ওই কিশোরের এক আত্মীয়ের দাবি, “অভিযোগ তো করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ তো এখনই ওই ছাত্র নেতাকে আড়াল করার চেষ্টা শুরু করেছে।” জেলা পুলিশ সুপার অর্ণব মণ্ডল বলছেন, “একটা ঘটনার কথা শুনেছি। কারা গুলি চালাচ্ছিল তা স্পষ্ট নয়। খোঁজ খবর করা হচ্ছে।”
নদিয়া জেলা জুড়ে ক্রমান্বয়ে বেড়ে ওঠা শাসক দল তথা দুষ্কৃতীদের ‘দৌরাত্ম্য’ জেলার নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিরোধীরা। নদিয়া জেলা বিজেপির মুখপাত্র সৈকত সরকারের অভিযোগ, “জেলা জুড়ে সাধারণের নিরাপত্তা তলানিতে।” তিনি জানান, দু’মাস আগে দুষ্কৃতীদের গুলিতে ছাত্র-মৃত্যু ঘটনায় মূল অভিযুক্ত নিতাই দাস এখনও অধরা। কেন? অর্ণববাবু বলছেন, ‘‘নিতাইয়ের খোঁজ চলছে।” সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সিপিএমের শান্তনু চক্রবর্তীও বলছেন, “নদিয়ার শাসক দলের কর্মী আর সমাজবিরোধী মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছে। যার দাম চোকাচ্ছেন সুজনের মতো সাধারণ মানুষ।”
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আহত কিশোর বলে, ‘‘মোটরবাইক নিয়ে নদীর পাড় থেকে ফুলিয়ার দিকে যাচ্ছিলাম। সেই সময় মনোজ সরকার গুলি চালাতে চালাতে এগিয়ে আসে। একটা গুলি আমার পায়ে লাগে।’’ জয়দেববাবুর আক্ষেপ, ‘‘নিতান্তই নিরীহ ছেলে আমার। রাজনীতির ধার কাছ দিয়ে যায় না। ওকে লক্ষ করে কেন গুলি চালাল বলুন তো?”
ফুলিয়ায় কেন গুলি চলল, তার কারণ অবশ্য পুলিশের কাছে ‘স্পষ্ট’ নয়। তবে, তৃণমূলের অন্দরের খবর, মনোজ এবং তার বিরোধী গোষ্ঠীর ‘লড়াই’য়ে অতিষ্ঠ ফুলিয়ার বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সম্প্রতি জমি কেনাবেচার ‘বখরা’ নিয়ে শান্তিপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের তপন সরকারের সঙ্গে সহ-সভাপতি রঘুনাথ চট্টোপাধ্যায়ের গোষ্ঠী বিবাদ প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। কালীপুজোর ভাসানের সময়ে তা নিয়ে বড় গণ্ডগোলও হয়। সোমবার রাতের ঘটনাও তারই জেরে বলে মনে করছেন স্থানীয় মানুষজন। জেলা তৃণমূলের এক নেতা জানান, এ দিন রঘুনাথ ঘনিষ্ঠ গগেন বিশ্বাসের বাড়িতে বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর লোকজন চড়াও হয়। মনোজের নেতৃত্বে পাল্টা আঘাত হানে গগেন।
পুলিশের খাতায় অবশ্য, শ্লীলতাহানি থেকে বেআইনি অস্ত্র রাখামনোজের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগে রয়েছে। এ দিন অবশ্য চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তার বিরোধী গোষ্ঠীর দাবি, দল ‘পাশে’ থাকায় পুলিশ মনোজকে ঘাঁটাতে সাহস করছে না। তৃণমূলের নদিয়া জেলার কার্যকরী সভাপতি অজয় দে-র কথাতেই তা স্পষ্ট, “পুলিশ তদন্ত করে দেখুক। তবে মনোজের বিরুদ্ধে তেমন কোনও অভিযোগ রয়েছে বলে শুনিনি।”