ছাত্রী বিক্ষোভে উস্কানি কতটা, বিতর্ক ফুলিয়ায়শিক্ষিকাদের চুড়িদার পরে স্কুলে আসা নিয়ে ফুলিয়া বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী-বিক্ষোভে বিতর্ক দানা বাঁধছে এলাকায়। মঙ্গলবার ছাত্রীদের একাংশ চুড়িদার পড়ে আসা জনা পাঁচেক শিক্ষিকাকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রেখে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। পরে ঠিক হয় ওই শিক্ষিকারা চুড়িদার পরে স্কুলে এলেও ক্লাস নেবেন শাড়িতে। গণ্ডগোলের ভয়ে শিক্ষিকারা এই নিয়ে মুখ না খুললেও ব্যক্তিগত অধিকারে ছাত্রীদের এই হস্তক্ষেপ ভাল চোখে দেখছেন না অনেকেই। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে, এটা কি নেহাতই ছাত্রীদের স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ নাকি এর পিছনে অন্য কারও উস্কানি আছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা পদ্মা বসাকের দাবি, “এটা নেহাতই ছাত্রীদের বিষয়। এর আগেও ওরা আমার কাছে লিখিত ভাবে শিক্ষিকাদের চুড়িদার পড়া নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল। আমি তখন তাদের এই সব বিষয় নিয়ে না ভেবে পড়াশুনোয় মন দিতে বলি। পরে শিক্ষিকাদের সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। তবে বারণ করিনি।”
১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বালিকা বিদ্যালয়ে বর্তমানে ছাত্রী সংখ্যা প্রায় আটত্রিশশো। গত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ২২ জন নতুন শিক্ষিকা স্কুলে যোগ দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে জনা পাঁচেক শিক্ষিকা চুড়িদার পড়ে স্কুলে আসছিলেন। আর এতেই আপত্তি জানাতে থাকে ছাত্রীদের এক অংশ। তারা লিখিত ভাবে তাদের আপত্তির কথা স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও ছিল। মূলত একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীরাই মঙ্গলবার বিক্ষোভ দেখিয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। তাদের দাবি, যেহেত স্কুলের নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রীদের শাড়ি পড়েই স্কুলে আসতে হয়, তাই শিক্ষিকাদের না-আসারছাত্রী বিক্ষোভে উস্কানি কতটা, বিতর্ক ফুলিয়ায় কোনও কারণ নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী বলেন, “আমাদেরও শাড়ি পড়ে কষ্ট করে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসতে হয়। স্কুলের বাকি সমস্ত শিক্ষিকা শাড়ি পড়ে আসেন। সেখানে নতুন আসা ওই শিক্ষিকাদের কিসের অসুবিধা?”
চুড়িদার পরিহিতা ওই শিক্ষিকারা অবশ্য মুখ খুলতে চাননি। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, স্কুলের কয়েকজন শিক্ষিকারও আপত্তি ছিল ওই পাঁচ জনের চুড়িদার পড়ে আসা নিয়ে। প্রকাশ্যে না হলেও তারা ছাত্রীদের পাশেই ছিলেন। প্রধান শিক্ষিকার ঘরে বৈঠকের সময় অভিভাবক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সৈকত দাস। তিনি বলেন, “স্কুলের সামনে পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে গিয়ে দেখি ছাত্রীরা কয়েকজন শিক্ষিকাকে ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছে না। পরে প্রধান শিক্ষিকার ঘরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সময় দেখি শিক্ষিকাদেরই এক অংশ চুড়িদার পড়ার বিরোধিতা করছেন।”
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন এলাকার বাসিন্দা শান্তিপুর কলেজের ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি টিএমসিপি-র পরেশ বিশ্বাস। তিনি বলেন,“খবর পেয়ে আমরা স্কুলে গিয়ে ছাত্রীদের বোঝাই, যে এটা ঠিক হচ্ছে না। কে, কী পড়বেন, সেটা একান্তই তাঁর নিজের বিষয়।” ছাত্রীদের এই আন্দোলনের নিন্দা করে স্কুলেরই এক অভিভাবক তথা শান্তিপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তৃণমূলের রঘুনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিশ্বায়নের যুগে শিক্ষিকাদের পোশাক নিয়ে ছাত্রীদের এই আচরণ কখনই মেনে নেওয়া যায় না।”
শাড়ি পড়ার পক্ষে কিছু আবেগও রয়েছে এলাকায়। স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র নদিয়া জেলা পরিষদের বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূলের রিক্তা কুণ্ডু বলেন, “আমাদের স্কুলটি অনেক পুরনো। এলাকার মানুষের একটা আবেগ কাজ করে এই স্কুলের প্রতি। এত দিন সব শিক্ষিকারাই শাড়ি পড়ে এসেছেন। আমরাও চাই সকল শিক্ষিকারাই শাড়ি পড়ে আসুক। যে সব শিক্ষিকা এই স্কুলে পড়াতে আসেন তাঁদেরও উচিত এলাকার মানুষের আবেগকে সম্মান জানানো। তবে তার জন্য জোর করাকে সমর্থন করি না।”
নদিয়া জেলার মাধ্যমিক স্কুল পরিদর্শক কৌশিক রায় বলেন,“কোনও শিক্ষিকার পোশাক নিয়ে কেউ কিছু বলতে পারেন না। ওই স্কুলে ঠিক কী হয়েছে তা খোঁজ নিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”