রোদ থেকে বাঁচতে। বহরমপুর কোর্ট স্টেশনে তোলা নিজস্ব চিত্র।
কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের কিছু জেলায় বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে বৃহস্পতিবারও দেখা মিলল না মেঘের। প্রচণ্ড গরম আর আর্দ্রতায় হাঁসফাঁস অবস্থা জেলাবাসীর।
রাস্তাঘাটে চলাফেরা করা দায়। তাই গরমের প্রত্যক্ষ প্রভাবটা সবচেয়ে বেশি পড়েছে পরিবহণ ব্যবস্থায়। মুর্শিদাবাদের বাস মালিক সংগঠনের সম্পাদক তপন অধিকারী বলেন, “অত্যধিক গরমে বাড়ির বাইরে অনেকেই বের হতে চাইছেন না। সকাল ১১টার পর থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত বাসে যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। বাসে যাত্রীর সংখ্যা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই কমে গিয়েছে। সব মিলিয়ে লোকসান হচ্ছে আমাদের।” তার উপরে এত গরমের মধ্যে চালকদের পক্ষে বাস চালানোও কষ্টকর হয়ে পড়ছে। ইঞ্জিনের গরম, কাঁচের উপরে রোদের তাপ, রাস্তার গরম হাওয়াসব মিলিয়ে প্রাণান্তকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে চালকদের। ডিস্ট্রিক্ট মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সম্পাদক জয়দেব মণ্ডলের দাবি, “দিনভর রোদে ঝলসানোর পর বাড়ি ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন চালকরা।” এই পরিস্থিতিতে বাসও এখন অনেক কমে গিয়েছে রাস্তায়। মুর্শিদাবাদ জেলা নিত্য বাস যাত্রী সমিতির পক্ষে সমরেন্দ্র ভট্টাচার্য বলেন, “প্রকৃতির কারণে সব দিক থেকেই অব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। এখন সঠিক সময়ে বাস পাওয়া যাচ্ছে না, বিশেষ করে দুপুরের দিকে বাসের অপ্রতুলতা রয়েছে। সকালের দিকে ভিড়ে ঠাসা বাসে অফিসে পৌঁছতে ঘাম ছুটছে।”
ঝলসানো রোদে বহরমপুরের রাস্তায় রিকশা ভাড়াও অসম্ভব হারে বেড়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে কমে গিয়েছে রিকশা সংখ্যা। বহরমপুর রিকশা চালক সমিতির পক্ষে শান্তিপদ দত্ত বলেন, “দুপুরের দিকে রোদের তেজে কেউ বাড়ির বাইরে বের হতে চাইছেন না। ফলে যাত্রী হচ্ছে না। এজন্য ওই সময়ে রিকশা চলছে কম। এছাড়াও অল্পেতে রিকশা চালকরা কাহিল হয়ে পড়ছেন। তাঁরাও রোদ এড়াতে দুপুরের দিকটি এড়িয়ে চলছেন।” সারা দিন রোদ মাথায় রিকশা চালানোর ফলে সন্ধ্যার পরে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
চড়া রোদের তাপ এড়াতে মুখে রুমাল বেঁধে ও মাথায়-গলায় বড় রুমাল জড়িয়ে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও সরকারি-বেসরকারি কর্মীদের বহরমপুরের রাস্তায় মোটর বাইক ও স্কুটার চালিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। দুপুরের পর থেকে শহরের রাস্তা প্রায় খাঁ-খাঁ করছে। বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া কৃষ্ণনাথ রোডে পথচারীদের জল খাওয়ানোর জন্য বন্দোবস্ত করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। ওই রাস্তায় ধারে ছাতা দিয়ে আড়াল করে দুটো মাটির বড় কুঁজোয় জল ভরে রাখা হয়েছে। পথচলতি মানুষ ওই জলে তেষ্টা মেটাচ্ছেন। সন্ধ্যার পর বাড়ি থেকে বেরিয়ে ভাগীরথীর পাড় লাগোয়া রাস্তায় হাঁটতে ও ব্যারাক স্কোয়ার ময়দানে অনেক রাত পর্যন্ত বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে পুরবাসীদের।
এমনকী গরমের কারণে দিনমজুররা কাজে আসছেন না এখন। বহরমপুরের পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য বলেন, “জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দিনমজুর যাঁরা প্রতি দিন বহরমপুরে আসেন, গরমের কারণে তাঁরা আসছেন না। ফলে বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কাজ শ্রমিকের অভাবে থমকে রয়েছে।”