একশো দিনের কাজে বিস্তর গরমিল, ক্ষোভ

একশো দিনের কাজে কয়েক লক্ষ টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠল সিপিএম পরিচালিত পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে। কোথাও কাজ না করিয়ে আবার কোথাও পরিমাণ মতো কাজ না করে প্রচুর টাকা তছরুপ করার অভিযোগ উঠেছে নদিয়া জেলার নাকাশিপাড়া ব্লকের সিপিএম পরিচালিত বীরপুর-১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে। স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে বিডিও-র গড়া তদন্ত কমিটির রিপোর্টেও ওই দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নাকাশিপাড়া শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৪ ০০:০৫
Share:

একশো দিনের কাজে কয়েক লক্ষ টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠল সিপিএম পরিচালিত পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে। কোথাও কাজ না করিয়ে আবার কোথাও পরিমাণ মতো কাজ না করে প্রচুর টাকা তছরুপ করার অভিযোগ উঠেছে নদিয়া জেলার নাকাশিপাড়া ব্লকের সিপিএম পরিচালিত বীরপুর-১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে।

Advertisement

স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে বিডিও-র গড়া তদন্ত কমিটির রিপোর্টেও ওই দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। নাকাশিপাড়ার বিডিও হেমন্ত ঘোষ বলেন, “তদন্ত কমিটির রিপোর্টে গরমিল ধরা পড়ার পর ওই পঞ্চায়েতের প্রধান ও নির্মাণ সহায়ককে শো-কজ করা হয়েছিল। জবাবে অসঙ্গতি থাকায় দ্বিতীয়বার শো-কজ করা হয় ওঁদের। তারপর বিষয়টি জেলায় একশো দিনের কাজের দায়িত্বে থাকা আধিকারিককে লিখিত ভাবে জানিয়েছি।”

গত পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে সিপিএম একক ভাবে বীরপুর ১ পঞ্চায়েতের দখল নেয়। ১১টি আসনের মধ্যে ৭টি পায় বামেরা। প্রধান নির্বাচিত হন শ্যামল হালদার। উপপ্রধান হন ডালিম বিশ্বাস। কুর্সিতে বসার মাসখানেক পরই প্রধান বিভিন্ন জায়গায় জোরকদমে একশো দিনের প্রকল্পে উন্নয়নের কাজ শুরু করে দেন। অভিযোগ, এর মধ্যে অন্তত তিনটি প্রকল্পে অনিয়ম হয়েছে।

Advertisement

ওই পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান তৃণমূলের রেজাউল হক মণ্ডল বলেন, ‘‘পটুয়াভাঙার রসুল শেখের দোকান থেকে নদীর ঘাট অবধি প্রকল্পে এক ঝুড়িও মাটি পড়েনি। অথচ দেখানো হচ্ছে ওই প্রকল্পে কাজ হয়েছে। একই অবস্থায় শনি মন্দির থেকে নদীর ঘাট, বড়পোতা থেকে জলঙ্গি নদীর ঘাট রাস্তায় মাটি ফেলার প্রকল্পেও। বীরপুর হরলাল হাইস্কুলের এবড়ো-খেবড়ো খেলার মাঠে মাটি ফেলার ক্ষেত্রেও সে ভাবে কাজ হয়নি।’’

মাস খানেক আগে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের পটুয়াভাঙার বাসিন্দা মিয়াফল মণ্ডল-সহ শ’খানেক গ্রামবাসী নাকাশিপাড়ার বিডিও, জেলাশাসক ও নদিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতির কাছে একশো দিনের কাজে এই ‘দুর্নীতি’র প্রতিবাদে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগের ভিত্তিতে নাকাশিপাড়ার বিডিও হেমন্ত ঘোষের নিযুক্ত প্রতিনিধিদল ঘটনার তদন্ত করে। ওই রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, ‘বীরপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক পটুয়াভাঙা-বরোপোতা থেকে জলঙ্গি নদীর ঘাট অবধি মাটি ফেলার জন্য স্কিম তৈরি করেন। এর জন্য অর্থ বরাদ্দ হয় ১ লক্ষ ৯৯ হাজার ৪৩৩ টাকা। কিন্তু, বরোপোতা থেকে কাজ শুরু হয়নি। কাজ হয়েছে উল্টো দিক থেকে। রসুল শেখের বাড়ি থেকে নদীর ঘাট অবধি দু’টি স্কিমের মাধ্যমে ৫৯৫ মিটার রাস্তায় মাটি ফেলার কথা হলা হয়েছে পঞ্চায়েতের তৈরি স্কিমে। কিন্তু, দু’টি স্কিম আলাদা হতে পারে না। প্রথম স্কিমের মধ্যেই পড়ে দ্বিতীয়টি। এ ছাড়াও ওই রাস্তার দৈর্ঘ্য মেরেকেটে ১৫০ মিটার হবে। সরেজমিনে না দেখে ওই স্কিম তৈরি করেছে পঞ্চায়েত।’

এ দিকে, ওই পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক প্রসেনজিৎ সেন মজুমদার লিখিত ভাবে নাকাশিপাড়ার বিডিও হেমন্ত ঘোষকে জানিয়েছেন, তিনি প্রধান, উপপ্রধান ও সিপিএম সদস্যদের গা-জোয়ারির ভয়ে ভুয়ো মাস্টার রোলে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়েছেন।

মৃত ব্যক্তির নামে মাস্টার রোল তৈরি করে টাকা তোলা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে ওই পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে। মিয়াফলের অভিযোগ, ‘‘মোতালেব মোল্লা, মাবিয়া মণ্ডল, অনিল দাস প্রমুখরা গত হয়েছেন অনেক দিন আগেই। কিন্তু তাঁদের নাম রয়েছে মাস্টার রোলে।’’ শুধু মৃত ব্যক্তিই নয়, পটুয়াভাঙা বুনিয়াদি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুজিবর রহমান মণ্ডলের নামও রয়েছে পঞ্চায়েতের তৈরি মাস্টার রোলে। বিডিও-র প্রতিনিধিদলের পেশ করা রিপোর্টেও এই অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ রয়েছে, ‘‘প্রধান নিজে মোতালেব মোল্লার মৃত্যু শংসাপত্র ইস্যু করেছেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, তাঁর নাম মাস্টার রোলে রয়েছে।’’

অভিযোগের কথা আংশিক স্বীকার করে প্রধান শ্যামল হালদারের সাফাই, ‘‘আমরা সদ্য ক্ষমতায় এসেছি। একশো দিনের কাজ করানোর পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। তার উপর অতিরিক্ত কাজ করানোর জন্য বিডিও-র লাগাতার তাগাদার ফলে তাড়াহুড়ো করে স্কিম তৈরি করা হয়েছিল। ফলে সামান্য ভু্লচুক হয়েছে।’’ তা বলে মৃত ব্যক্তির নাম মাস্টার রোলে ঠাঁই পেল কী করে? প্রধানের জবাব, ‘‘মৃতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের পরিবারের লোকজনের জব কার্ড নেই। অথচ তাঁরা মাটি কেটেছেন। তাঁদের পারিশ্রমিক প্রদানের ক্ষেত্রে মাস্টার রোলে তাঁদের মৃত আত্মীয়ের নাম ঢোকানো হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement