ভাঙচুরের পর। — নিজস্ব চিত্র
সন্ধ্যা নামলেই বদলে যায় পাড়ার চেনা মাঠের চেহারাটা। মদ আর জুয়ার আসরে সেই মাঠ পাড়ার বাসিন্দাদের কাছে অগম্য হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভ জমছিল এলাকার বাসিন্দাদের কাছে। সেই পাড়ার এক যুবককে প্রতিবাদের মাশুল দিতে হল বোমায়। অবাধে লুঠপাঠ চলল বাড়িতে। এই ঘটানায় চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এলাকার বাসিন্দারা।
বৃহস্পতিবার রাতে শান্তিপুর ডাকঘর ঘোষপাড়ায় এই ঘটনা ঘটেছে। মদ আর জুয়ার আসরের প্রতিবাদ করেছিলেন এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা। তাঁদেরই একজন দেবাশীষ ঘোষ। বৃহস্পতিবার তাঁর বাড়িতে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। মোট পাঁচ জনের বিরুদ্ধে শান্তিপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে অভিুক্তরা পলাতক বলে পুলিশ জানিয়েছে।
দিন দুয়েক আগেও রাতে ওই দুষ্কৃতীরা দেবাশিস ঘোষকে মারধর করেছিল। বৃহস্পতিবার রাতেও ক্লাবের ভিতরে ঢুকে তাকে হুমকি দেওয়া হয়। এভাবে বাড়িতে হামলা চালানোয় আতঙ্কিত গোটা পরিবার। আতঙ্কিত তাঁদের পড়শিরাও।
দেবাশিসবাবু জানিয়েছেন, তিনি তখন ঘুমাতে যাবেন বলে তৈরি হচ্ছিলেন। সেই সময় আচমকা তাঁর বাড়ির দেওয়ালে বোমা পড়ে। তাঁর নাম ধরে গালিগালাজ করতে থাকে দুষ্কৃতীরা। তাদের হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল। বিপদ বুঝে পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যান তিনি। বাড়িতে একা পড়ে যান তাঁর মা।
দুষ্কৃতীরা পাঁচিল টপকে বাড়ির ভিতরে ঢোকে। তারপর গ্রিলের তালা ভেঙে ঘরের ভিতরে। দেবাশীষবাবুর মায়ের গলার সোনার হার ছিঁড়ে নেয়। দেরাজ থেকে লুঠ করা হয় টাকা। বাঁধা দিলে তাঁকেও ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় দুষ্কৃতীরা। এর পরে দুষ্কৃতীরা শাড়ি তৈরির কারখানায় যায়। সেখানে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়।
দেবাশিসবাবুর ছাপা শাড়ি তৈরির ব্যবসা। তাঁর অভিযোগ, পাড়ার রামকৃষ্ণ মন্দিরের মাঠে ফি রাতে মদ ও জুয়ার ঠেক বসে। সন্ধ্যায় পথ চলতি মেয়েদের সেখান থেকে কটুক্তিও করা হয়। তাঁর কথায়, ‘‘দিনের পর দিন পাড়ার ভিতরে এটা চলে আসছে। আম়রা কয়েকজন তার প্রতিবাদ করেছিলাম। সেই কারণে উল্টো রথের আগের দিন রাতে আমাকে মারধর করা হয়।’’ একই কারণে তাঁর বাড়িতে এই হামলা। অভিযোগ তাঁর। হল।
দেবাশীষবাবুর জ্যাঠতুতো দাদা বাপ্পা ঘোষ বলেন, ‘‘ওদের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ট। রাত হলেই মদ-জুয়ার আসর আর মেয়েদের লক্ষ্য করে কটুক্তি রোজকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এখন পাড়ার অনেকেই এর প্রতিবাদ করতে শুরু করেছে। সেই জন্যই ওরা বেপরোয়া হয়ে হামলা চালিয়েছে।’’।
পুলিশ জানিয়েছে, বেশ কিছু দিন ধরেই পাড়ার দুই দল যুবকের মধ্যে নানা কারণে রেষারেষি চলছিল। উল্টো রথের আগের দিন রাতে পিকনিক করার সময় দুই পক্ষের মধ্যে গন্ডগোল হয়। তারই জেরে এদিন দেবাশিস ঘোষের বাড়িতে হামলা চালায় এলাকারই কিছু যুবক। তবে, তাদের দলে বাইরের এলাকার দুই সমাজবিরোধী ছিল বলে প্রাথমিক ভাবে জানা যাচ্ছে। অভিযুক্তরা পলাতক বলে পুলিশ জানিয়েছে।