চিকিৎসকের চেম্বারে পিটিয়ে খুন যুবক

বহরমপুরে লালদিঘির পাড়ে পরিচিত একটি ওষুধের দোকানেই চেম্বার ছিল স্থানীয় এক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:১২
Share:

ঘটনার পরে তড়িঘড়ি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসকের চেম্বার। নিজস্ব চিত্র

গণপিটুনি রুখতে বিধানসভায় বিল পাশ হয়েছে সদ্য, সপ্তাহ ঘোরার আগেই সেই আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ফের গণধোলাই এবং ভর দুপুরে ডাক্তারের ভরা চেম্বারে পিটিয়ে খুন করা হল এক যুবককে।

Advertisement

বহরমপুর শহরের লালদিঘি এলাকায় বুধবার দুপুরে খবির শেখ (৩১) নামে ওই যুবককে পেটানো হয়েছে রীতিমতো হাত-পা বেঁধে। যা দেখে তদন্তকারীদের একাংশের অনুমান, আদতে গণধোলাইয়ের চেহারা দেওয়া হলেও এর পিছনে পূর্ব পরিকল্পনার ইশারা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এ দিন সন্ধ্যায় খবিরের দেহ নিয়ে তাঁর পাড়ার লোকেরা ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়র অবরোধ করে বিক্ষোভও শুরু করেন। তবে পুলিশ গিয়ে সেই অবরোধ তুলে দেয়। ওই ঘটনায় চিকিৎসকের সহযোগী-সহ তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ।

বহরমপুরে লালদিঘির পাড়ে পরিচিত একটি ওষুধের দোকানেই চেম্বার ছিল স্থানীয় এক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের। ছড়ানো চেম্বার। সেখানে প্রতি দিনের মতো এ দিনও ভিড় ছিল ভালই। দোকানের মালিক অশোক বড়াল বলেন, ‘‘দোকানে ছিলাম। লোকজনের ভিড় এবং হইচই শুনে বেরিয়ে আসি। এক জনকে মারধর করা হচ্ছে দেখে আমি বার বার পুলিশকে ফোন করি। তবে, কারা কেন ওকে পেটাতে শুরু করল, তা কিছুই জানি না।’’

Advertisement

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নিহতের স্বজনেরা। নিজস্ব চিত্র

মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে এখনও কোনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে সেই অনুযায়ী মামলা করা হবে।’’ অভিযোগ না হোক, পুলিশ তো ঘটনাটি সবিস্তারে জানে। স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে পুলিশই তো মামলা শুরু করতে পারে, আইন তো সে কথাই বলছে। সে ব্যাপারে পুলিশের কাছে কোনও উত্তর মেলেনি।

খাবির শেখ পেশায় রাজমিস্ত্রি। স্ত্রী আকলিমা বিবি খবর পেয়েই ছোট্ট দুই মেয়েকে নিয়ে থানায় ছুটে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘গ্রামেরই এক জনের বাড়িতে খবির এ দিন রাজমিস্ত্রির কাজে গিয়েছিল। একটা ফোন পেয়ে বেলা দশটা নাগাদ বাড়ি ফিরে আসে। তার পর, আমাদের এক প্রতিবেশীর মোটরবাইক চেয়ে বহরমপুরে দিকে রওনা দেয়। কিন্তু কী এমন করল যে ওকে পিটিয়ে মারল, কিছুই বুঝতে পারছি না।’’ উত্তরটা পুলিশের কাছেও স্পষ্ট হচ্ছে না।

লালদিঘি লাগোয়া পুরসভা ও ক্ষুদিরাম মূর্তির মাঝে ওই ওষুধের দোকানটি পুরনো। সেখানেই অন্য চিকিৎসকদের পাশাপাশি শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অমিয়কুমার ঘটক বসেন। খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ হন্তদন্ত হয়ে ওই দোকানে ঢোকে খবির। কর্মীদের তোয়াক্কা না করে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ে ওই চিকিৎসকের চেম্বারে। তার পরে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে এসি চালিয়ে দেয়। সেখানে বসেছিলেন চিকিৎসকের সহকারী রঞ্জিৎ বিশ্বাস। থানায় বসে তিনি বলেন, ‘‘অসম্ভব অস্বাভাবিক আচরণ করছিল ওই যুবক। আমি বারণ করার আগেই ঢুকে পড়ল চেম্বারে। তার পর, দরজা বন্ধ করে দুম করে টিউব লাইটটা ভেঙে দিল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দরজা খুলে ভিতর থেকে একটি স্ট্যান্ড-ফ্যান তুলে আমার দিকে ছুঁড়ে দিল। আমাদের তখন দিশেহারা অবস্থা। তার পরই ভিতর থেকে চেম্বারের দরজাটা বন্ধ করে দিল।’’

পুলিশের দাবি, ঘটনার সময় কাছাকাছি ডিউটিতে থাকা দু’জন ট্রাফিক ওয়ার্ডেন (পুরসভার অস্থায়ী কর্মী) সেখানে পৌঁছেছিল। পুলিশ খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে দেখে ওই যুবকের মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। উদ্ধার করে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা জানান পিটিয়েই মারা হয়েছে তাঁকে।

চেম্বারে বসেছিলেন সাহাজাদপুরের সাবিনা বিবি। তিনি বলেন, ‘‘হাত-পা বেঁধে ছেলেটাকে মারধর করছিল। ওর মুখে জল দেওয়ার কথা বললেও কেউ শোনেনি। তবে যারা পেটাচ্ছিল তাদের চিনি না।’’ আশপাশের দোকানের লোকজন জানান, ধাক্কাধাক্কি করায় মিনিট পনেরো পরে চেম্বারের দরজা খুলে বেরোতেই ওকে পেটাতে শুরু করে চেম্বারে বসে থাকা অনেকেই।

খাবির কেন বহরমপুরে এসেছিলেন? কেনই বা ওই শিশু রোগ বিশেষজ্ঞর চেম্বারে ঢুকলেন তা এখনও কুয়াশায় ঢাকা— তা কাটবে তো, প্রশ্ন এখন সেটাই!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement