প্রতীকী ছবি।
লকডাউনে কর্মহীনতার হতাশায় নিজেকে শেষ করে দিতে হাতের শিরা কেটেছিলেন ভীমপুর থানার সন্ধামাঠপাড়ার বাসিন্দা এক তরুণ। তার পর সেই ছবি ফেসবুকে আপলোড করেছিলেন গত রবিবার রাতে। কিন্তু মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণের আগেই আশপাশের অনেকের তৎপরতায় বাঁচানো গিয়েছে তাঁকে।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হয়ে দ্রুত মেল করেছিল লালবাজার সাইবার ক্রাইম বিভাগে। তা পেয়েই একটুও সময় নষ্ট না করে পুলিশ ছেলেটির বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করে। জানানো হয় স্থানীয় কোতোয়ালি থানাকে। লালবাজারের ফোন পাওয়ার মিনিট পনেরোর মধ্যে ওই তরুণের বাড়়ি পৌঁছে তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর হাতে চারটি সেলাই পড়়ে। অবস্থা এখন স্থিতিশীল। মানসিক ভাবেও অনেকটা ঠিক হয়েছেন তিনি।
হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে ওই তরুণ বলেন, “আমার মতো বহু ছেলে কাজ হারিয়ে দিশেহারা। আমি চেয়েছিলাম, আমার মৃত্যুর দৃশ্য দেখে নড়়ে যাক সরকার। কাজহারা যুবকদের পাশে দাঁড়়াক।’’ তবে তাঁর পন্থা যে ভুল ছিল তা এখন স্বীকার করছেন ওই তরুণ। নিজেকে মানসিক ভাবে অনেকটা গোছাতেও পেরেছেন। বলেছেন, ‘‘আমি আর হেরে যেতে রাজি নই। এ বার লড়়াই করব জীবনের সঙ্গে।” পারিবারিক সূত্রের খবর, লকডাউনের পর থেকে ওই তরুণ কর্মহীন হয়ে বসেছিলেন বাড়িতে। চা খাওয়ার পয়সাটাও বাবার কাছ থেকে চাইতে হচ্ছিল। বাবারও আর্থিক অবস্থা শোচনীয়। তাঁর হোসিয়ারি ব্যবসা বেশ ভাল চলছিল। স্বচ্ছল পরিবার ছিল। কিন্তু লকডাউনে সেই ব্যবসা লাটে ওঠে। চাঁদমারি বাজারে রাস্তার ধারে ছোট্ট খাবারের দোকান দেন তাঁর বাবা। লকডাউনে সেটাও বন্ধ হয়ে যায়।
এ দিকে বহরমপুরে ওই তরুণ যে কাজ করছিলেন সেটাও চলে যায়। বাড়়ি ফিরতে বাধ্য হন। তাঁর মা অসুস্থ। মাসে প্রায় আট হাজার টাকার ওষুধ লাগে। সেটাও কিনতে পারছিলেন না। তাঁর বাবা বাধ্য হয়ে রাস্তার পা্শে মুরগির মাংস বিক্রি করতে শুরু করেন। ওই তরুণের কথায়, ‘‘এই পরিস্থিতি আর সহ্য করা যাচ্ছিল না।’’ তবে এক বার যখন সবার সাহায্যে দ্বিতীয় জীবন পেয়েছেন তখন আরেক বার লড়়াইটা লড়়ে যেতে চান তিনি।