গরমে কাজের নজির দুই আদালতে

নজির তৈরি করলেন বহরমপুর ও লালবাগের আইনজীবীরা। হাইকোর্ট-সহ রাজ্যের নানা আদালতে যখন গরমের জন্য দফায় দফায় কর্মবিরতি পালন করছেন আইনজীবীরা তখন নিয়মিত আদালতে আসছেন ওই দুই আদালতের উকিলরা। তাঁরা জানান, আদালতের থেকেও বেশি গরম তো জেলের ভিতর ও লক আপে। ফলে গরমের অজুহাত দেখিয়ে আদালতের কাজ বন্ধ রাখলে বিচারাধীন বন্দিদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৫ ০১:৪৬
Share:

গাউন ছাড়াই কাজ করছেন আইনজীবীরা।— নিজস্ব চিত্র।

নজির তৈরি করলেন বহরমপুর ও লালবাগের আইনজীবীরা। হাইকোর্ট-সহ রাজ্যের নানা আদালতে যখন গরমের জন্য দফায় দফায় কর্মবিরতি পালন করছেন আইনজীবীরা তখন নিয়মিত আদালতে আসছেন ওই দুই আদালতের উকিলরা। তাঁরা জানান, আদালতের থেকেও বেশি গরম তো জেলের ভিতর ও লক আপে। ফলে গরমের অজুহাত দেখিয়ে আদালতের কাজ বন্ধ রাখলে বিচারাধীন বন্দিদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন দূরদুরান্ত থেকে আসা বিচারপ্রার্থীরা। সেটাও মানবাধিকার হরণ। এই সব দিক বিবেচনা করেই তাঁরা গরমকে উপেক্ষা করেই নিয়মিত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

Advertisement

সম্প্রতি হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের কর্মবিরতির সিদ্ধান্তে আদালত যে ক্ষুব্ধ তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতির মন্তব্যেই। প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর প্রশ্ন করেন, ‘‘গরমে চিকিৎসক, নার্সরা কাজ করছেন না? তাঁদের কাজের জায়গা কি পুরোপুরি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত? স্কুলের বাচ্চাদের মতো আপনারা কেবল ছুটি চান কেন?’’ বেঞ্চের অন্য বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী আইনজীবীদের কাছে জানতে চান, ‘‘ট্রাফিক পুলিশ, ট্রাফিক সার্জেন্টরা রাস্তায় নেমে কাজ করছেন না?’’

তারপরেও কিন্তু কারও টনক নড়েনি। হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন-সহ জেলার বেশ কয়েকটি নিম্ন আদালতেও কর্মবিরতি চলেছে। আগামী সোমবার পর্যন্ত ফের কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুর্শিদাবাদেরই জঙ্গিপুর আদালত। তবে ওই আদালতের আইনজীবীরা সেই প্রথম থেকেই দাবি করে আসছেন যে, আদালতে মামলার পাহাড় জমছে। বিচারপ্রার্থীরা হয়রান হচ্ছে। তারই প্রতিবাদে তাঁদের এই কর্মবিরতি। কিন্তু কর্মবিরতি পালন করে কী ভাবে সমস্যার সমাধান হবে সে প্রশ্নের অবশ্য কোনও সদুত্তর মেলেনি ওই আদালতের আইনজীবীদের কাছে।

Advertisement

স্রোতে গা না ভাসিয়ে কর্মবিরতির উল্টো পথে হাঁটা বহরমপুর ও লালবাগ আদালতের আইনজীবীদের বক্তব্য, কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর ডিভিশন বেঞ্চের মতামতকেও তাঁরা মান্যতা দিয়ে বিচার-ব্যবস্থা চালু রেখেছেন। আইনজীবীরা জানান, গরমকালে গরম পড়বে সেটাই স্বাভাবিক। সকলেই এমন পরিবেশে কাজ করছেন। ফলে গরমের দোহাই দিয়ে আদালতে কর্মবিরতি তাঁরা সমর্থন করেন না। তবে গরমের কারণে বাধ্যতামূলক ভাবে কালো গাউন পরা থেকে আইনজীবীরা অব্যাহতি পেয়েছেন।

বহরমপুর বার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি পীযূষ ঘোষ জানান, উকিলসভার সিদ্ধান্ত মতো গরমের কারণে কালো গাউন পরা থেকে আইনজীবীদের অব্যাহতি দেওয়ার জন্য মুর্শিদাবাদ জেলা বিচারক প্রসেনজিৎ বিশ্বাসের কাছে আবেদন করা হয়। তিনি সেই আবেদন মঞ্জুর করেছেন। কিন্তু আদালত চলছে নিয়ম মতোই। গরমের কারণে কোনও বিচারপ্রার্থীকে বিচার না পেয়ে বহরমপুর আদালত থেকে চলে যেতে হচ্ছে না। গরমের ছুটির বিষয়ে গত শনিবার বহরমপুর ও লালবাগ আদালতের উকিলসভার জরুরি বৈঠক ডাকা হয়।

বহরমপুর বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তথা পাবলিক প্রসিকিউটর আবু বক্কর সিদ্দিকি ও লালবাগ উমাসুন্দরী বার অ্যসোসিয়েশনের সভাপতি সওকত আলি বলেন, ‘‘এই গরমে চিকিৎসক, নার্স, ট্রাফিক পুলিশ-সহ সবাই যদি কাজ করতে পারেন তাহলে আমরা কাজ বন্ধ করে বসে থাকব কেন? আমরা কাজ বন্ধ করে দিলে দূরদুরান্ত থেকে আসা বিচারপ্রার্থীরা হয়রান হবেন। লঙ্ঘিত হবে বিচারাধীন বন্দিদের মানবাধিকারও। তাই আমরা ওই পথে হাঁটিনি।’’

তবে গরমের অজুহাতে কর্মবিরতি না করার সিদ্ধান্ত কিন্তু খুব সহজ পথে আসেনি। বহরমপুর ও লালবাগ উমাসুন্দরী বার অ্যসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, আইনজীবীদের একটা বড় অংশ অন্য আদালতের মতোই কর্মবিরতির পক্ষে জোর সওয়াল করেছিলেন। কিন্তু বিচারপ্রার্থীদের কথা ভেবে সেই প্রস্তাব খারিজ হয়ে যায়।

এ দিন বহরমপুর আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলায় ব্যারাকপুর থেকে এসেছিলেন এক মহিলা ও বিদ্যুত চুরির মামলায় জলঙ্গি থেকে এসেছিলেন এক প্রৌঢ়। তাঁরা জানান, ভাগ্যিস এই আদালতে কর্মবিরতি চলছে না! নাহলে খুব হয়রান হতে হত। লালবাগ আদালতের আইনজীবী নকিবুদ্দিন জানান, ভাড়া করা জেনারেটর নানা কারণে হামেশাই বন্ধ থাকে। বিকল থাকায় গত বৃহস্পতিবার সারাদিন জেনারেটর চলেইনি। তবু গরমের মধ্যেই আইনজীবীরা কাজ চালিয়ে গিয়েছেন।

তবে গরমের ছুটির বিষয়ে একটি ভিন্ন প্রস্তাব তুলেছেন লালবাগের উমাসুন্দরী বার অ্যসোসিয়েশনের সভাপতি সওকত আলি। তিনি বলেন, ‘‘পুজোর ৩৩ দিনের ছুটি দু’ভাগ করে এক ভাগ গ্রীষ্মের ছুটি দিলে সমস্যাটা মেটে।’’ পিপি আবু বক্কর সিদ্দিকি অবশ্য অন্য কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘‘বেশ কয়েক বছর আগে একই রকম একটি প্রস্তাব নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রাজ্যের সব উকিলসভার প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন। ৩৩ দিনের মধ্যে সে বার গরমের ছুটি দেওয়া হয়ছিল ১৫ দিন। আর ১৮ দিন পুজোর ছুটি। কিন্তু দেখা গেল ১৫ দিনের গরমের ছুটি শেষ হওয়ার পরে গরম বাড়তে থাকল। প্রকৃতির খেয়াল মানুষ আগাম বুঝবে কী করে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement