প্রতীকী ছবি।
মাদক, গোরু, অস্ত্র পাচারের সঙ্গে অনেক আগেই নাম জড়িয়েছে মুর্শিদাবাদের। সীমান্ত উজিয়ে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে যেমন গরু, মাদক পাচার হয়, তেমনই মুর্শিদাবাদ ও পড়শি জেলায় অস্ত্র পাচারের জন্য কারবারিরা সক্রিয়। আর ধীরে ধীরে মাদক ও অস্ত্র কারবারে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারা জড়িয়ে পড়ছেন। মুর্শিদাবাদ থেকে গত কয়েক বছরে বেআইনি অস্ত্র কারবারে ও মাদক পাচারের অভিযোগে একাধিক মহিলা গ্রেফতার হয়েছেন।
কেন মহিলাদের এ ভাবে জড়িয়ে ফেলা হচ্ছে? মুর্শিদাবাদ রেঞ্জের ডিআইজি মুকেশ কুমার বলছেন, ‘‘লাগাতার অভিযানের ফলে একের পর অস্ত্র কারবারি ধরা পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে অস্ত্র কারবারিরা পুলিশের চোখে ধুলো দিতে মহিলাদের ব্যবহার করছে।’’ দু’দিন আগে বহরমপুর থেকে ৪০০ রাউন্ড গুলি সহ হরিহরপাড়ার বহড়ানের মানোয়ারা খাতুন নামে এক মহিলা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন। পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন মানোয়ারা পুলিশকে জানিয়েছেন, আর্থিক সমস্যার কারণেই তিনি অস্ত্র কারবারে মতো বিপজ্জনক কাজে জড়িয়ে পড়েছেন। গত পাঁচ মাসে তিন বার মুঙ্গেরের অস্ত্র কারবারির কাছ থেকে ২৫টি অস্ত্র ও ৩০০ রাউন্ড গুলি নিয়ে নদিয়ার করিমপুরের একটি ডেরায় পৌঁছে দিয়েছেন। মূলত অস্ত্র বাহক হিসেবে কাজ করতেন তিনি।
ডিআইজি-র দাবি, ‘‘পুলিশ যথেষ্ট সক্রিয়। যার জেরে পুরুষদের পাশাপাশি অস্ত্র বা মাদক কারবারে যুক্ত মহিলারাও গ্রেফতার হচ্ছেন।’’
গত বছরও বহরমপুর থানার পুলিশ জ্যোৎস্নাবিবি নামে এক মহিলাকে গাঁজা পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার করেছিল। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে অস্ত্র কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগে দৌলতাবাদের কালুপুর থেকে নুরুন্নেসা বিবি ওরফে চামেলি বিবি নামে এক মহিলাকে বহরমপুর থানার পুলিশ গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি, নুরুন্নেসার স্বামী মাদক কারবারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। স্বামী মাদক কারবারের মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পরে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে নিয়মিত বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে যেতেন নুরুন্নেসা। সেখানে নুরুন্নেসার সঙ্গে মুঙ্গেরের অস্ত্র কারবারিদের যোগাযোগ হয়। স্বামীর অবর্তমানে গ্রামের সরল মহিলা নুরুন্নেসা অস্ত্র কারবারে জড়িয়ে পড়ে। পুলিশের দাবি, নুরুন্নেসা বর্তমানে ওই মামলায় জামিনে রয়েছেন।
অক্টোবরে ফরাক্কার রামরামপুর থেকে অস্ত্র কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগে ফুরকান বিবি নামে এক মহিলাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। পুলিশ জানতে পেরেছে পটনার এক মহিলা অস্ত্র কারবারির সঙ্গে যোগাযোগ করে ফুরকান ও তাঁর স্বামী অস্ত্র কারবার চালাতেন। এ বারে মানোয়ারা অস্ত্র মামলায় গ্রেফতার হওয়ায় হরিহরপাড়ার বহড়ানের বাসিন্দারা অবাক হয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, ওর মতো সরল মহিলা এভাবে অস্ত্র কারবারে জড়িয়ে পড়বেন তা কখনও গ্রামের লোকজন ধারণা করতে পারেনি।
জেলা পুলিশের এক কর্তা জানাচ্ছেন, বরাবরই মুর্শিদাবাদে অস্ত্র কারবারিরা সক্রিয়। পুলিশও সক্রিয় হয়েছে। বহু অস্ত্র কারবারিও গ্রেফতার হচ্ছেন। তাই পুলিশের চোখে ধুলো দিতে মহিলাদের ব্যবহার শুরু হয়েছে।