পর্যটকদের ভিড় হাজারদুয়ারিতে। — ফাইল চিত্র।
‘পায়ের তলায় সর্ষে’ কথাটা হয়তো ভ্রমণপিপাসু বাঙালির জন্যই সর্বাধিক প্রযোজ্য। দিন সাতেক আগে থেকেই পর্যটকদের ভিড় জমতে শুরু করেছে লালবাগ শহরে। এ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও পুর কর্তৃপক্ষ একাধিকবার পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ী ও ইউনিয়ানের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন। শুক্রবার মুর্শিদাবাদ পুরসভার পুরপ্রধান ও সিটি ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃত্বরা আবারও আলোচনায় বসেন আগামী দিনগুলিতে কি ভাবে আরও উন্নতমানের পরিষেবা দেওয়া যায়, সে বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা হয় এ দিনের সভায়।
স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হতেই গত কয়েক দিন ধরে কয়েক হাজার পর্যটকের সমাগম হচ্ছে বলে জানালেন হাজারদুয়ারির এক আধিকারিক চুনচুন কুমার।
তিনি বলেন, ‘‘প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার পর্যটক এলেও শনিবার প্রায় পাঁচ হাজর ও রবিবার আট হাজরের অধিক পর্যটক হাজারদুয়ারি মিউজিয়াম দেখতে এসেছেন (বিক্রিত টিকিটের হিসেবে অনুযায়ী)। প্রতিদিন জেলা ও জেলার বাইরে থেকে বহু স্কুল পড়ুয়ারা হাজারদুয়ারি দেখতে আসছে। অনূর্ধ্ব ১৫ বছরের কিশোর-কিশোরিদের প্রবেশ মূল্য না থাকার কারণে পর্যটক সংখ্যা নিদিষ্ট ভাবে বলা যায় না।’’
মুর্শিদাবাদ টাঙা চালক ইউনিয়ানের সম্পাদক মনু শেখের দাবি শনিবার ও রবিবার লালবাগ শহরে প্রায় আট থেকে দশ হাজার পর্যটকের দেখা মিলেছে। তিনি বলেন, ‘‘মরসুমের শুরুতেই ভাল পর্যটক আসছে লালবাগে। এ দু'দিনে পাঁচ থেকে ছ’হাজার ছোট গাড়ি ও ৭০টি পর্যটকদের বাস আসে শহরে। তবে অন্য বছরের তুলনায় পুলিশ প্রশাসন ও পুর প্রশাসন খুব সক্রিয়। শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে ও পর্যটকদের উন্নতমানের পরিষেবা দেওয়ার জন্য অনেকগুলো পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’
মুর্শিদাবাদ হোটেল ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক স্বপন দাস এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘হাজারদুয়ারি সংলগ্ন কমবেশি অধিকাংশ হোটেল জানুয়ারি পর্যন্ত বুকিং হয়ে আছে।তবে যে সব পর্যটক লালবাগ শহরে রাত্রিবাস করে, তাদের কাছে মতিঝিলের 'লাইট ও সাউন্ড' একটি অন্যতম আকর্ষণের বিষয়বস্তু যা, কার্যত দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ হয়ে আছে। বহু পর্যটক সেখানে গিয়ে সেখান থেকে নিরাশ হয়ে ফিরছে।’’
হাজারদুয়ারি চত্বরের এক ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী সাজু শেখ অভিযোগের সুরে বলেন, ‘‘হাজারদুয়ারি কর্তৃপক্ষের নিত্যনতুন আইন প্রণয়নের ফলে পর্যটকদের যথেষ্ট ভুগতে হচ্ছে। হাজারদুয়ারির পূর্ব ও পশ্চিমে দু'টি প্রবেশদ্বার থাকার কারণে যে কোনও পথ দিয়ে হাজারদুয়ারিতে প্রবেশ করা যেত কিছুদিন আগেও। পশ্চিমের পথটা হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে পর্যটকদের অনেকটা পথ অতিক্রম করে পূর্বদিকে যেতে হচ্ছে।’’
মুর্শিদাবাদ সিটি ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক স্বপন কুমার ভট্টাচার্য বলেন, "গত ১৫ বছর ধরে লালবাগ শহরে পর্যটকদের সাহায্যার্থে স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতি 'পর্যটক সহায়তা কেন্দ্র' খুলেরেখেছে। এ বছর পুরসভা আমাদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এগিয়ে এসেছে। আগামী দিনে শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে একাধিক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।"মুর্শিদাবাদ পুরসভার পুরপ্রধান ললিতা দাস নন্দীর কথায়, ‘‘শহরের বিভিন্ন প্রান্তে অতিরিক্ত সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। কোনভাবেই যাতে কোনরকমের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে।"