নওদা থেকে চার বার বিধায়ক হওয়ার রেকর্ড রয়েছে আরএসপি-র জয়ন্ত বিশ্বাসের। কংগ্রেসের আবু তাহের খান এ বার জয়ী হলে সেই রেকর্ডের ভাগীদার হবেন তিনিও।
সেই দৌড়ে অবশ্য অনেকটাই এগিয়ে কংগ্রেসের আবু তাহের। কিন্তু আরএসপি নওদা পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি আবদুল বারি মোল্লাকে ওই আসনে দাঁড় করিয়েছে। মুর্শিদাবাদে যে পাঁচটি আসনে আরএসপি-র সঙ্গে কংগ্রেসের জোট হয়নি, তার একটি নওদা। এক সময়ে নওদায় আরএসপি এবং জয়ন্ত বিশ্বাসের নাম একই সঙ্গে উচ্চারিত হত। পরে জলঙ্গি নদী দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। তাঁর এক সময়ের সঙ্গী-সাথিরাও হাত ছেড়ে তৃণমূলে ঠাঁই নিয়েছেন। তিনি বৃদ্ধ হয়েছেন। এখন অশক্ত শরীরে ঠিক মতো হাঁটাচলাও করতে পারেন না।
কিন্তু আরএসপি প্রার্থী আবদুল বারি মোল্লা তাঁর ভোট প্রচারে টেনে আনছেন জয়ন্ত বিশ্বাসের আমলে হওয়া উন্নয়নের প্রসঙ্গকেই। কিন্তু সে সবে আমল দিতে রাজি নন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর টগবগে ঘোড়া আবু তাহের। গুরুত্ব দিচ্ছেন না তৃণমূলের ‘বহিরাগত’ প্রার্থী মাসুদ করিমকেও। আবু তাহের বলেন, ‘‘আরএসপি, তৃণমূল, বিজেপি সব এক দিকে আর আমি এক দিকে। আমার জয় নিশ্চিত।’’
বেলডাঙা-১ ব্লকের ভাবতা গ্রামে বাড়ি পেশায় ‘হাতুড়ে’ চিকিৎসক মাসুদ করিমের। এই প্রথম তিনি সংসদীয় রাজনীতিতে। কিন্তু কোন জাদুবলে তিনি বিধানসভার প্রার্থী তা নিয়ে দলের অভ্যন্তরে ফিসফাস রয়েছে। এক সময়ের যুবা তৃণমূলের জেলা সভাপতি মাসুদ করিমের সঙ্গে ‘ভাইপো’র সুসম্পর্কের জেরেই নাকি প্রার্থী, তাই স্থানীয় নেতৃত্ব প্রার্থী হিসেবে তাঁকে গিলতে এক প্রকার বাধ্য হয়েছে। ফলে ভাঙা মন নিয়ে প্রচারেও বের হতে হচ্ছে তাঁদের। ভোটের ব্যস্ততায় মাসুদ করিমের অবশ্য কথা বলার অবসর নেই।
শাসক দলের প্রার্থীর ঠিক উল্টো পথে আরএসপি প্রার্থী। তাঁর কথা বলতে কোনও আপত্তি নেই। কথা মানেই তাঁর কাছে ‘জয়ন্তদা’র আমলে এলাকার উন্নয়নের ফিরিস্তি। বলেন, ‘‘জয়ন্তদা বিধায়ক থাকাকালীন নওদায় হাসপাতাল গড়েছেন। স্কুল-কলেজ হয়েছে। রাস্তাঘাট হয়েছে।’’
কিন্তু ভোটের অঙ্কে যে তিনি অনেকটাই পিছিয়ে, সে কথা কি তিনি জানেন না! নওদা বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে নওদা ব্লকের ১০টি পঞ্চায়েত এবং বেলডাঙা-১ ব্লকের চারটি মোট ১৪টি পঞ্চায়েত। তার মধ্যে ৯টি কংগ্রেসের দখলে এবং ৫টিতে রয়েছে বামফ্রন্ট ক্ষমতায়। নওদা পঞ্চায়েত সমিতি কংগ্রেসের দখলে। মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের তিনটে আসনের সব ক’টিতেই কংগ্রেস প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। কিন্তু ওই বাস্তব চিত্রের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আরএসপি প্রার্থী ১৯৭৭ সালে, ১৯৮২ সালে, ১৯৮৭ সালে এবং ১৯৯৬ সালে জয়ী হওয়া ‘জয়ন্তদা’র আমলে পড়ে রয়েছেন।
অতীতের কথা ভোলেননি অবশ্য এলাকার মানুষও। তাঁরা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ২০০১ সালে কংগ্রেসের তৎকালীন নওদা পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ মোসলেম শেখকে ইঁটভাটায় ডেকে নিয়ে গিয়ে খুনের ঘটনায় জড়িয়ে গিয়েছিল আরএসপি প্রার্থীর নাম। ওই ঘটনার পরে তিনি দু’বছর এলাকাছাড়াও ছিলেন। গ্রামবাসীরা আপোসে মীমাংসা করে দেওয়ায় মামলা তুলে নেওয়া হয়। তিনি নিজেকে ‘নির্দোষ’ বলে জানান।
জোট না হলেও ওই আসনে স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্ব কোন দিকে হেলে রয়েছে তার উপরে অবশ্য জয়-পরাজয় নির্ভর করছে না। নির্ভর করছে বামফ্রন্টের প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান কতটা কমবে! কারণ ২০০১ সালে ‘নির্দল’ প্রার্থী হিসেবে আবু তাহেরের জয়ের ব্যবধান ছিল যা, পরের দু’বার সেই ব্যবধান লাফিয়ে বেড়েছে। সেই ধারা অব্যাহত থাকলে জয়ের ব্যবধান আরও বাড়িয়ে বরং চার বারের বিধায়ক হওয়ার রের্কড করারই কথা তাঁর।