আন্দোলেন চাকরি না-পাওয়া টেট উত্তীর্ণেরা। বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগরে। ছবি: প্রণব দেবনাথ
রাজ্যে স্কুল শিক্ষক নিয়োগ ঘিরে নজিরবিহীন দুর্নীতির অভিযোগে নাজেহাল শিক্ষা দফতর। নিয়ম বহির্ভূত ভাবে নিয়োগ ঘিরে পাহাড় প্রমাণ অভিযোগের তদন্তে নেমেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। এ দিকে নদিয়ার বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকদের শূন্যপদের বহর দেখলে চমকে উঠতে হয়। সরকার পোষিত কোনও স্কুলে অনুমোদিত ৬২টি পদের মধ্যে ৩০টি শূন্য। আবার কোথাও ৪৭টি পদের মধ্যে ২৭টি শূন্য! ওই সব স্কুলের পঠনপাঠনের কী হাল তা সহজেই অনুমেয়।
জেলার বিদ্যালয় প্রধানেরা জানাচ্ছেন, প্রায় সব স্কুলেই একাধিক শিক্ষকপদ শূন্য রয়ে গিয়েছে। অসংখ্য পদে বছরের পর বছর শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতিতে আবার কবে শিক্ষক নিয়োগ হবে তা কেউ জানেন না। তথ্য বলছে, নদিয়ার শহর বা শহর ঘেঁষা এলাকার তুলনায় গ্রামীণ স্কুলের শূন্য পদের সংখ্যা অনেক বেশি। করোনাকালীন সময়ে ‘উৎসশ্রী পোর্টাল’ চালু হওয়ার পর সঙ্কট বেড়েছে গ্রামীণ এলাকার স্কুলগুলির। শিক্ষকদের একটা বড় অংশ বদলির সুযোগ নিয়ে শহরমুখী হয়েছেন। গ্রামীণ স্কুলগুলি শিক্ষকহীন হয়েছে। এমন স্কুলের সন্ধানও মিলেছে, যেখানে অনুমোদিত শিক্ষক পদের অর্ধেকেরও বেশি ফাঁকা। আবার কোনও স্কুলে এক দশক ধরে শূন্যপদে শিক্ষক আসছেন না।
নদিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চল পলাশির মীরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসিতকুমার মণ্ডল জানান, এই মুহূর্তে স্কুলে ৬ জন শিক্ষকের পদ শূন্য। পলাশি হাই স্কুলের ছাত্রছাত্রী প্রায় তিন হাজার। শিক্ষক রয়েছেন ৩০ জন। স্কুলের অনুমোদিত শিক্ষক পদ ৬১টি।
প্রায় একই ছবি জুরানপুর ডিএস হাই স্কুলের। বিরাট সংখ্যক পড়ুয়ার জন্য আছেন ২৭ জন শিক্ষক। ওই স্কুলে অনুমোদিত শিক্ষক পদের সংখ্যা ৪৭টি। জেলার সীমান্ত সংলগ্ন স্কুল করিমপুর জগন্নাথ হাই স্কুলের প্রায় দু’হাজার পড়ুয়ার স্কুলে শূন্যপদের সংখ্যা ৭টি। প্রধান শিক্ষক রজতকুমার সরকার বলেন, “আমাদের ওই সাতটি শূন্যপদের মধ্যে দু’টি কমার্সের। আপাতত ওই কমার্সের পঠনপাঠন বন্ধ থাকায় পাঁচ জন শিক্ষকের পদ শূন্য।”
বিদ্যালয় প্রধানেরা জানাচ্ছেন, উৎসশ্রীর মাধ্যমে যাঁরা অন্য বিদ্যালয় খুঁজছেন, তাঁরা দু’টি বিষয়ে আগ্রহী। এক, স্কুল হবে শহর বা শহর সংলগ্ন। দুই, ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা হবে স্বল্প। ফলে সমস্যায় পড়ছে সেই সব স্কুল, যাদের ছাত্রছাত্রী সংখ্যা বিপুল এবং ভৌগলিক ভাবে যারা শহর থেকে দূরের। কৃষ্ণনগর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক উৎপল ভট্টাচার্য বলেন, “নবদ্বীপ, কৃষ্ণনগর, শান্তিপুর, রানাঘাট, চাকদহ বা কল্যাণীর মতো শহুরে স্কুলে শূন্যপদ থাকলেও দু:এক জায়গা ছাড়া সমস্যা ততটা নয়। কিন্ত গ্রামীণ স্কুলে অবস্থা শোচনীয়।’’
শহরের স্কুল হিসাবে শূন্যপদের সংখ্যা অবাক করার মতো নবদ্বীপ বালিকা বিদ্যালয়ে। ৩১টি অনুমোদিত শিক্ষিকা পদের মধ্যে শূন্যপদ ১০টি। শূন্যপদ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে প্রধান শিক্ষিকা শ্রুতি লাহিড়ী বলেন, “এত জন শিক্ষিকা না:থাকায় পঠনপাঠন দুরূহ হয়ে পড়েছে। উৎসশ্রীর মাধ্যমে চার জন শিক্ষিকা চলে গিয়েছেন। কিন্তু মাত্র এক জন এসেছেন। আমাদের স্কুলে ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে তৈরি হওয়া শূন্যপদ এখনও পূরণ হয়নি।”
শান্তিপুর মিউনিসিপাল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কিংশুক চক্রবর্তী বলেন, “বাংলা মাধ্যমে তিন জন শিক্ষকের পদ ফাঁকা আছে। পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যমে ৭টি অনুমোদিত পদের মধ্যে এক জন শিক্ষকও আমরা পাইনি এখনও পর্যন্ত। যদিও তিন বছর হয়ে গেল।” ভালুকা হাইস্কুলের পড়ুয়া সংখ্যা ২২৫৯ জন। সব মিলিয়ে ৭টি পদ শূন্য। উচ্চ মাধ্যমিকের তিন জন জীববিদ্যার শিক্ষকের মধ্যে একজনও নেই।