—ফাইল চিত্র।
সময় চলে যাচ্ছে। আর ততই ফিকে হয়ে যাচ্ছে কৃষ্ণনগর থেকে নবদ্বীপ ধামের রেললাইন তৈরির সম্ভাবনা। প্রশ্ন উঠছে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া এই জট খোলা সম্ভব কি না? ভোটের অঙ্ক মাথায় রেখে কারা ভোটারদের তুষ্ট রাখার লাইন মেনে চলছে?
ফকিরতলায় দরগা ও মঠের কাছে এসে যখন রেললাইন তৈরির কাজ যখন মুখ থুবড়ে পড়ে, তখন থেকেই শুরু ভোটের রাজনীতির। ২০১৩ সাল, পঞ্চায়েত ভোটের ঠিক আগে। এই এলাকায় সংখ্যালঘু ভোট বড় ‘ফ্যাক্টর’। আবার হিন্দুদেরও একটা অংশ দরগা ভাঙার বিপক্ষে ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রের দাবি, গোড়া থেকেই দরগার প্রতি স্থানীয় মানুষের আবেগের কথা তুলে সেটি না ভেঙে রেললাইন পাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়ার দাবি তুলতে থাকেন স্থানীয় সিপিএম নেতারা। ওই সময়ে রেললাইন তৈরির ক্ষেত্রে উদ্যোগী এক স্থানীয় তৃণমূল কর্মীর দাবি, “নবদ্বীপের বিধায়ক নন্দ (পুণ্ডরীকাক্ষ) সাহা কৃষ্ণনগর থেকে স্বরূপগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইন তৈরির ক্ষেত্রে প্রথম থেকে উদ্যোগী ছিলেন। কিন্তু একটা সময় তিনিও ধীরে চলার নীতি নিলেন।” অর্থাৎ তৃণমূলও ভোট হাতছাড়া করার ঝুঁকি নিতে পারল না।
নবদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, তৃণমূলের হরিদাস দেবনাথ অবশ্য দাবি করেন, “আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম সমস্যার সমাধান করতে। কিন্তু ভোটের জন্য সিপিএম বাগড়া দিল।” সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সুমিত বিশ্বাসের পাল্টা, ‘‘আমরা এখনও চাই, স্বরূপগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইন হোক, কিন্তু দরগাতলা অক্ষত রেখে। কারণ এই দরগার সঙ্গে মানুষের আবেগ জড়িয়ে আছে। বাঁ দিকে অনেকটাই জায়গা আছে। একটু ঘুরিয়ে রেললাইন পাতাই যায়।”
সে না-হয় হল। কিন্তু বিকল্প পথ?
তেওরখালির বাসিন্দারা জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা ভিটেমাটি দেবেন না। গোড়ায় তৃণমূল মানুষকে রাজি করানোর চেষ্টা করলেও পরে পিছিয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা জুলহক শেখ বলেন, “আমরা ভিটেজমি দেব না। তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা আমাদের সমর্থন করেছিলেন। তাঁরা পাশে না থাকলে কি আর আমরা আটকাতে পারতাম?” আবার ইনায়েক শেখ বলেন, “সামনে থেকে না হলেও সিপিএমও আমাদের পাশে থেকেছে।”
গৎখালি মৌজার মহিশুরা গ্রামেও জমি সমীক্ষার সময়েই বাধা আসে। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, এখানেও সিপিএমের লোকজন প্রথম থেকে উসকানি দিয়ে প্রতিরোধ তৈরি করেছিল। স্থানীয় এক সূত্রের দাবি, পিছনে কাজ করেছে ‘সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন’ নামে একটি সামাজিক সংগঠন। তাতেই নাকি প্রমাদ গুনে গত লোকসভা ভোটের আগে পিছু হটে তৃণমূল। কারণ লোকসভা ভোটে যে ভাবে মেরুকরণ হয়েছিল, তাতে মুসলিম ভোট হাতছাড়া করতে চাননি দলের নেতারা।
লোকসভা ভোটে রানাঘাট কেন্দ্রে বিজেপি জেতার পরে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। সাংসদ জগন্নাথ সরকার রেললাইন তৈরির বিষয়ে সক্রিয় হতে শুরু করেছেন। তাতেও শঙ্কিত হয়ে পড়েছে তৃণমূল। কারণ এ বার যদি রেললাইন হয়, কৃতিত্ব নেবে বিজেপি। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে যা তৃণমূলের কাছে কোনও ভাবেই কাম্য নয়।
জগন্নাথের দাবি, “মানুষ জমি দিতে রাজি। প্রয়োজন শুধু রাজ্য সরকার তথা শাসক দলের স্বদিচ্ছা। কিন্তু তৃণমূল তা চাইছে না। তারা নানা ভাবে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে।” যা শুনে নন্দ সাহা বলছেন, “আমরা প্রথম থেকে চেয়েছি রেললাইন হোক। কিন্তু সেটা করতে হবে বাস্তব ভিত্তির উপরে দাঁড়িয়ে, মানবিক জায়গা থেকে। মানুষ জমি দিতে রাজি। রেল বা কেন্দ্র যদি তাদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয় তা হলেই আর কোনও সমস্যা হবে না।”
মানুষ কাদের কথা বিশ্বাস করবে, তা তারাই জানে। রেললাইন শেষমেশ হবে কি না, তা বলবে মানুষই।