ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
শতাব্দী প্রাচীন বহরমপুর পুরসভার বাসিন্দাদের জলকষ্ট মিটল না একুশ শতকেও। ২৮ ওয়ার্ডের পুরসভার অধিকাংশ ওয়ার্ডে জল তো দূরের কথা জলের পাইপই পৌঁছয়নি কোথাও। যেখানে জলের পাইপ বসানো হয়েছে সেখানে জলের নিয়মিত সরবরাহ হয় না, এমন অভিযোগও রয়েছে। পাঁচ বছর অন্তর ভোট আসে, এক সময়ে চলেও যায়। শাসক-বিরোধি সব দলের প্রতিশ্রুতির তালিকায় সবার উপরে ঠাঁই পেয়েছে ঘরে ঘরে পরিস্রুত পানীয় জল পৌছে দেওয়া। তবে, ভোট মিটলেই আস্তাকুঁড়ে চলে যায় রং বেরংয়ের সেই প্রচারপত্র। পরিবর্তনের হাওয়াতেও বদলায়নি সেই চিত্র। বহরমপুরের এক পুরবাসিন্দা রুপা দাস বলেন “নীল সাদা আলো দিয়ে শহরের বেশ কিছু রাস্তা আলো সাজানো হয়েছেই, ওই পর্যন্ত। কিন্তু, প্রদীপের নিচেই সেই অন্ধকার। আমাদের তেষ্টা আর মিটল না!’’
২৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩, ৬, ৯, ১০, ১১, ২৫ নম্বর ওয়ার্ড বাদ দিয়ে বাকি ওয়ার্ডগুলোর কোথাও পরিস্রুত পানীয় জল পৌছয়নি। আসন্ন পুরভোটেও শাসক বিরোধী সব পক্ষই তাই চেনা আশ্বাস নিয়ে ভোট ইস্তেহারে সেই পানীয় জলের কথা লিখেছেন। কাশিমবাজার বহু পুরনো এলাকা। এখানকার রাস্তাঘাটের কিছুটা উন্নতি হলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঘরে ঘরে পানীয় জল এখনও স্বপ্ন। এটি পুরসভার ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডভূক্ত এলাকা। ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আকাশ সরকার বলেন, “আমাদের ওয়ার্ডে পুরসভার পানীয় জলের কোন সুবিধাই নেই।” ওই ওয়ার্ডের মতো একই অভিযোগ ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গির্জাপাড়া, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ৮৪ পাড়া, ৫ নম্বরের গঙ্গাধর বস্তি, কুপিলা মাঠ— কোনটা ছেড়ে কোনটার কথা বলা যাবে। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের হোতাসাঁকো, কান্তনগরের বিস্তীর্ণ এলাকায় পানীয় জলের ব্যবস্থা করে উঠতে পারেনি পুরসভা। একই ভাবে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের লিচুবাগান, ১১ নম্বরের জেলেপাড়া, ১২ নাম্বার ওয়ার্ডের শ্মশানঘাট জলকষ্টে ভুগছে।
২০ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর কংগ্রেসের সমর হাজরা বলেন, “আমাদের সাংসদ জলের প্রতিশ্রুতি দিলেও রাজ্য সরকার সেইসময় পুরসভাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেনি। ভোটের আগে সেই সরকারই লোক দেখাতে এখন দু চার জায়গায় জলের পাইপ বসানোর কাজ শুরু করেছে।” ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের জয়ন্ত প্রামাণিক পাল্টা বলেন, “কিছু সমস্যা আছে ঠিকই তবে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরালে সমাধান করা হবে।’’
যা শুনে স্থানীয় বাসিন্দারা হাসছেন— ‘‘তা হলে ক্ষমতাই জলের উৎস!’’