কলের মুখ ভাঙা। কে সি দাস রোডে। নিজস্ব চিত্র
পুর নাগরিকদের জন্য জলপ্রকল্প চালু হয়েছে আগেই। কিন্তু এখনও শহরের সর্বত্র জল সরবরাহের ব্যবস্থা করে ওঠা যায়নি।
২০১৫ সাল নাগাদ পরিস্রুত পানীয় জল প্রকল্প চালু করা হয়েছিল শান্তিপুরে। কিন্তু এখনও শহরের ২৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে বেশ কিছুতে জল সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁধেরপাড়ার আলপনা হাজরা, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নতুনপাড়ার তিনু হালদারেরা বলছেন, “আমাদের এলাকায় জল সরবরাহের কোনও ব্যবস্থা নেই। আমাদের টিউবওয়েলের উপরেই ভরসা করতে হয়। রাস্তার ট্যাপকলের ব্যবস্থাও নেই। ফলে বেশ কিছু দূর গিয়ে জল আনতে হয়।” ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সুত্রাগড় মাঠেরপাড়ার বাসিন্দা বাবলু বিশ্বাসও বলেন, “আমাদের এলাকায় জল সরবরাহের জন্য পাইপ বসানোই হয়নি। দলিল আছে, কর দিই। কিন্তু পরিস্রুত জল পাওয়া থেকে আমরা বঞ্চিত।”
আবার অনেক জায়গায় রাস্তার কল থেকে অঝোরে পড়ে যাচ্ছে জল। রাস্তার সেই ট্যাপকল থেকে কেউ বা কারা কলের মুখ খুলে নেয় বা কখনও তা ভেঙে যায়। ফলে সেখান থেকে জলের অপচয় হয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। এর আগে শান্তিপুরের একটি সামাজিক সংস্থা রাস্তার ধারের এই সব ট্যাপকলে মুখ বসানোর কাজ করেছিল। কিন্তু অনেক জায়গাতেই এখনও কলের মুখ ভাঙা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। শহরে এই জলের অপচয় বন্ধ করার জন্যও সরব হয়েছেন অনেকে। বার্তা দেওয়া হয়েছে পুরসভার তরফেও। কিন্তু অবস্থার কোনও বদল এখনও হয়নি।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৫ সালে পরিস্রুত পানীয় জলের প্রকল্প চালু করার জন্য শান্তিপুরের স্টিমার ঘাটে একটি ‘ইনটেক পয়েন্ট’ করা হয়েছে। সেখানে ভাগীরথী থেকে জল তোলা হয়। পাইপলাইন মারফত সেই জল পৌঁছে দেওয়া হয় সাড়াগড়ের তেঁতুলতলা এলাকায় ‘ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’-এ। সেখানে জল পরিশ্রুত হওয়ার পরে তা সরবরাহ করা হয় বিভিন্ন ওয়ার্ডে। পুর এলাকায় প্রায় ছয় হাজারের মতো জলের সংযোগ রয়েছে। জলাধার আছে পাঁচটি। প্রতি দিন সকালে এবং দুপুরে দু’ঘণ্টা করে এবং বিকেলে এক ঘণ্টা জল সরবরাহ করার কথা পুরসভার। গরমকালে, এপ্রিলের শেষের দিক থেকে জুন পর্যন্ত রাতের দিকে আরও আধঘন্টা জল সরবরাহ করার কথা। ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে পাঁচটি পাম্প আছে। এর মধ্যে একটি রিজার্ভে থাকে। আবার ইনটেক পয়েন্টেও রয়েছে আরও দু’টি পাম্প।
কিন্তু বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, বিশেষত গ্রীষ্মে মাঝেমধ্যে জলের গতি বেশ কমে যায়। সুতোর মতো জল পড়ে। আবার অনেক সময় জল সরবরাহ হঠাৎ করে বা নির্ধারিত সময়ের আগেই বন্ধ হয়ে যায়। তবে পুরকর্তাদের দাবি, বিদ্যুতের সমস্যার কারণে আগে জলের গতি ধীর হয়ে যেত। বিদ্যুতের সেই সমস্যা এখন সমাধান করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, সমস্যা আর থাকবে না। যে সব জায়গায় এখনও জলের সংযোগ পৌঁছে দেওয়া যায়নি, সেখানেও সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে।