—ফাইল চিত্র।
দিনের আলো নিভে যেতে না যেতেই বন্ধ মদের দোকান ও বার কাম হোটেলগুলির চারপাশে মুখে মাস্ক লাগানো কিছু জনকে ঘুরঘুর করতে দেখা যাচ্ছে। সেখানে দাঁড়িয়ে কেউ নাগাড়ে ফোন করে চলেছেন হোটেল মালিককে, কেউ আবার মদ ব্যবসায়ীকে। যদি কোনও ভাবে হিল্লে হয়ে যায় একখানা বোতলের!সেই জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে কয়েক জন মদ ব্যবসায়ী ফোন নম্বর পর্যন্ত বদলে ফেলেছেন। জিয়াগঞ্জের মদের দোকান লাগোয়া বাড়ির কর্তা বাধ্য হয়েছেন ‘এখানে কোনও মদ পাওয়া যায় না’ বলে হাতে লেখা পোস্টার নিজের বাড়িতে সাঁটিয়ে দিতে। কিন্তু তার পরেও সুরাপ্রেমীদের সামলানো যাচ্ছে না। তারা ভিড় করছে চোলাইয়ের দোকানে। আর তাতেই চিন্তিত প্রশাসন।
লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই বন্ধ হয়েছে জেলার সমস্ত মদের কাউন্টার ও বারগুলো। তার পরে দিন দু’য়েক লুকিয়ে মদ পাওয়া গেলেও এখন তা আর মিলছে না। সোসাইটি ফর দি ওয়েলফেয়ার অফ ওয়েস্টবেঙ্গল ফরেন লিকার লাইসেন্স সংস্থার মুর্শিদাবাদ জেলা সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় মোট ১৮০টি মদের দোকান রয়েছে। বর্তমানে সব ক’টিই বন্ধ। কাজেই সুরাপ্রেমীরা ঝুঁকছেন চোলাইয়ের দিকে। কিন্তু চোলাই যে ভাবে তৈরি হয়, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন সকলেই। লালবাগ মহকুমার মূলত নবগ্রাম, মুর্শিদাবাদ ও জিয়াগঞ্জ থানা এলাকায় বেশ কয়েকটি জায়গায় লুকিয়ে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে চোলাই তৈরি হচ্ছে বলে খবর। আজিমগঞ্জের এক চোলাই কারবারি জানাচ্ছেন, চোলাই তৈরি করতে লাগে ভাত, আখের গুড়, ও পাঁউরুটিতে দেওয়া ইস্ট। কিন্তু তা তৈরি করতে লাগে অভিজ্ঞ হাত। কোনটা কতটা করে কীসের সঙ্গে মেশাতে হবে, তার পরিমাণ গোলমাল হয়ে গেলে বড় বিপদ ঘটতে পারে। চোলাই কারবারিরাই জানাচ্ছে, তার উপরে এখন উপকরণের অভাব রয়েছে। তাই বিকল্প ব্যবহার করলে, বিপদ হতে পারে।
লকডাউন ঘোষণার পরে মুর্শিদাবাদ থানা এলাকার এলাহিগঞ্জ, কাপাসডাঙা, ডাহাপাড়ার দুই জায়গায় ও নতুন গ্রামের একটি জায়গায় চোলাইয়ের ঠেক ভেঙে ফেলে তারা। লকডাউনের পর ২৫ লিটার চোলাই উদ্ধার হয়েছে। যদিও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। নবগ্রামে লকডাউনের পর থেকে শুক্রবার পর্যন্ত বেশ কয়েকটি চোলাইয়ের ঠেকে হানা দিয়ে পুলিশ ১০ জনকে গ্রেফতারও করেছে। জিয়াগঞ্জের তিনটে জায়গায় হানা দিয়ে চোলাইয়ের ভাটি ভেঙেছে পুলিশ। গঙ্গা পার করে চোলাই আসছিল, পুলিশ তাড়া করে ৪০ লিটার চোলাই উদ্ধার করে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তন্ময় সরকার বলেন, ‘‘খবর পেলেই চোলাইয়ের ঠেক ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। চোলাইয়ের মতো মদ তৈরি আগেও প্রশ্রয় দেওয়া হয়নি, এখনও হবেনা।’’ জেলা আবগারি দফতরও জানিয়েছে, চোলাইয়ের খবর পেলেই অভিযান চালানো হচ্ছে।