পরিবারের সঙ্গে শানু। নিজস্ব চিত্র
প্রায় এক মাস ধরে ঘরেই বন্দি। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরোচ্ছেন না। কিন্তু বাড়িতে চালও যে বাড়ন্ত। এই অবস্থায় আর কতদিন ঘরে বসে কাটাতে হবে, তা ভেবেই আকুল বহরমপুরের লিয়াকত বাগানের শানু মণ্ডল। রবিবার বাড়িতে বসেই বলছিলেন, ‘‘টোটো চালিয়ে সংসার চালাই। গত কয়েক মাস ধরে রোজগার এমনিতেই কমে গিয়েছে। এখন লকডাউনে রোজগার বন্ধ। এই অবস্থা আর কিছুদিন চললে অনাহারেই মরতে হবে বোধহয়।’’
আদতে বীরভূমের রামপুরহাটের বাসিন্দা শানু। বছর কয়েক আগে পরিচিত একজনকে বিয়ে করে সংসার পাতেন। কিন্তু পরিবারের লোকজন সেই বিয়ে মেনে নেননি। কন্যা মাহির জন্মের পর বাড়ি ছেড়ে পাকাপাকি ভাবে বহরমপুরে চলে আসেন বছর চব্বিশের শানু। লিয়াকত বাগানের বস্তিতে খুপরি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকা শুরু করেন। তবে নতুন জায়গায় প্রথমে রোজগারপাতি কিছুই ছিল না। পড়শি খাসপাড়ার বাসিন্দা এক বন্ধুর পরামর্শে এক ব্যক্তির কাছে দৈনিক ভাড়ায় একটি টোটো নেন শানু। তারপর সেটিই চালাতে শুরু করেন। তা-ও প্রায় এক বছর হয়ে গিয়েছে। শানুর কথায়, “স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে কষ্টেসৃষ্টেই দিন চলছিল। টোটো চালিয়ে আর আগের মতো রোজগার হয় না। তা-ও মালিককে ভাড়া দিয়ে কয়েকশো টাকা থাকত। কিন্তু করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় সেই যে লকডাউন শুরু হল, তারপর থেকে একেবারে বসে গিয়েছি। হাতে টাকাপয়সাও কিছু নেই। জমানো টাকা ভেঙেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে হচ্ছে।’’ শানু জানান, লকডাউন অমান্য করে অনেকেই রাস্তায় নিয়ম ভেঙে টোটো বের করছেন। দু’দিন আগেও অনেকে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েই দিব্যি টোটো নিয়ে রাস্তায় ঘুরছিলেন। কিন্তু শত অসুবিধা সত্ত্বেও নিজের প্রিয়জনদের কথা ভেবেই বাড়িতে থাকাই শ্রেয় বলে মনে করেছেন তিনি। শানুর কথায়, ‘‘প্রতিদিনই করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বাড়িতে ছোট মেয়ে রয়েছে। ওর কথা চিন্তা করে সব সতর্কতা মেনে চলছি। মাস্ক না পরে বাড়ির বাইরে বেরোচ্ছিও না।’’ আপাতত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির দেওয়া ত্রাণের খাদ্যসামগ্রী খেয়ে চালাচ্ছেন। তবে রোজগার শূন্য হয়ে যাওয়ায় চিন্তিত শানুর পরিবার। তাঁর স্ত্রী কোয়েল বললেন, ‘‘এ ভাবে চলতে থাকলে এ বার বোধহয় ছোট মেয়েকে বাড়িতে ফেলে রেখে আমাকেও কাজের খোঁজে বেরোতে হবে।’’