প্রতীকী ছবি।
লকডাউনে পড়ুয়াদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ। কিন্তু লেখপড়া তো আর বন্ধ রাখা যায় না। অনলাইনে পড়াশোনার কথা শোনা যাচ্ছে সর্বত্র। সেই সঙ্গে অবশ্য প্রশ্নও উঠছে বেশ কিছু। আর্থিক বা সামাজিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে স্মার্ট ফোনে বিভিন্ন অ্যাপ ডাউনলোড করে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াটা কতটা বাস্তবসম্মত, এসেছে সে প্রশ্ন। কতজনই বা ইউটিউবে ডাউনলোড করা ক্লাস নিয়মিত দেখতে পারবে বা কত জনের বাড়িতে সেই পড়া বুঝিয়ে দেওয়ার লোক রয়েছে, অনেক শিক্ষাবিদ সে সব নিয়েও ভাবিত।
জেলার সরকারি বাংলামাধ্যম স্কুলগুলিতে বিভিন্ন আর্থসামাজিক কাঠামো থেকে ছেলেমেয়েরা আসে। তাদের স্মার্টফোনের মাধ্যমে পড়ানো চালিয়ে যেতে অনেক স্কুলই সমস্যায় পড়ছে। কারণ, অনেকের বাড়িতেই স্মার্টফোন নেই। অনেক বাংলামাধ্যম স্কুলের পক্ষেও অনলাইনে শিক্ষাদানের পরিকাঠামো তৈরি করা সমস্যার হচ্ছে। বিশেষ করে সমস্যায় পড়ছে প্রত্যন্ত প্রান্তের স্কুলগুলি। কারণ, এই সব এলাকায় ফোনের নেটওয়ার্কও সব সময় ভাল কাজ করে না। মাঝপথে যোগাযোগ বার বার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বা কথা আটকে যায়। এই ভাবে ক্লাস চালানোয় দুষ্কর হচ্ছে। অনেক পড়ুয়ারই আবার বাড়িতে একান্তে বসে ফোনে ক্লাস করার মতো জায়গা বা পরিবেশ নেই। অনেককে আবার বাড়িতে এত বেশি কাজ করতে হচ্ছে যে ফোনের সামনে নির্দিষ্ট সময় বসে ক্লাসের সুযোগ পাচ্ছে না।
এরই মধ্যে শিক্ষা দফতর থেকে লকডাউনের জন্য বিভিন্ন ক্লাস অনুযায়ী কিছু ওয়ার্কশিট বা টাস্ক দেওয়া হয়েছিল। বেশির ভাগ স্কুল তা ডাউনলোড করে ফটোকপি করে তুলে দিয়েছে পড়পয়াদের অভিভাবকের হাতে। যখন তাঁরা মিড ডে মিলের চাল আর আলু নিতে এসেছিলেন তখনই এটা করা হয়েছে। কিন্তু নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পডুয়ারা তো মিড ডে মিলের খাবার পায় না। তাই অনেক স্কুল স্থানীয় বিডিও-র অনুমতি নিয়ে ওই সব ক্লাসের অভিভাবকদের ডেকে এক সেট করে ওয়ার্কশিট তাঁদের দেওয়া শুরু করেছে।
কিছু কিছু স্কুল এর বাইরেও নিজেরা কিছু পরিকল্পনা নিয়েছে। যেমন, চাকদহের বিষ্ণুপুর হাইস্কুল। তারা প্রতিটি ক্লাসের সেকশন ধরে-ধরে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলেছে। সেখানেই নিয়মিত পঠনপাঠন চলছে। স্কুলের নিজস্ব ওয়েবসাইটে বিভিন্ন বিষয়ে পড়ানোর ভিডিও আপলোড করা হচ্ছে। তৈরি করা হয়েছে ইউটিউব চ্যানেল। স্কুলের নিজস্ব ফেসবুক পেজেও দেওয়া হচ্ছে শিক্ষকদের তৈরি বিভিন্ন ভিডিও। স্কুলের প্রধানশিক্ষক সুশীতাভ ভট্টাচার্য বলছেন, “এর জন্য যা খরচ হচ্ছে তা স্কুলের তহবিল থেকে দেওয়া হচ্ছে।”
রানাঘাট ভবানী হাইস্কুল হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে পঠনপাঠন শুরু করে দিয়েছে। তবে জেলা সদরে হলেও সেই অর্থে এ ব্যাপারে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে কৃষ্ণনগরের নামি স্কুলগুলি। অনেকেই এখনও পুরোদমে সব ক্লাসের পড়ুয়াদের জন্য অনলাইন পঠনপাঠন শুরু করতে পারেনি।
কৃষ্ণনগর কলিজিয়েট স্কুল যেমন শুধু নবম, দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে ক্লাস চালাচ্ছে। তা-ও মাত্র কয়েকটি বিষয়ের শিক্ষকেরা এটা করছেন। বাকি ক্লাসের পড়ুয়াদের জন্য কোনও ব্যবস্থা করে উঠতে পারেননি স্কুল কর্তৃপক্ষ।
কৃষ্ণনগর হাইস্কুলে প্রতিটি ক্লাসের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলেছে। কিন্তু সেখানে সব ছাত্রকে যুক্ত করা যায়নি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক উৎপল ভট্টাচার্য বলছেন, “আসলে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি থেকে পড়ুয়ারা আসে। সকলের কাছে এ ভাবে পড়াশনা চালানোর উপকরণ বা পরিবেশ নেই।”
গ্রামের দিকে অনেক নামি সরকারি বাংলা মাধ্যম স্কুল এখনও অনলাইনে পড়াশোনা চালাতে পারছে না, যেমন, করিমপুর জগন্নাথ হাইস্কুল। এখানকার সহকারি প্রধান শিক্ষক প্রিয়তোষ সরকার বলছেন, “আমরা শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত উপযুক্ত অ্যাপের সন্ধান না পাওয়ায় অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করে উঠতে পারিনি।”