মদের দোকান খুলতেই প্রশাসনিক নির্দেশের তোয়াক্কা না করে লম্বা লাইন ক্রেতাদের। কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
খবরটা ছড়িয়ে পড়েছিল হাওয়ার বেগে। সেই মতো অনেকেই সোমবার সকাল ১০টা বাজতে না বাজতে হাজির হয়েছিলেন মদের দোকানের সামনে। কিন্তু একি? দোকানের দরজা যে বন্ধ! ব্যাজার মুখেই ফিরে আসতে হয় সকলকে।
কারণ, শেষ মুহূর্তে খবর আসে যে ১০টা নয়, মদের দোকান খেলা হবে দুপুর ৩টে থেকে। সেই মতো জেলার বিভিন্ন প্রান্তের পাশাপাশি কৃষ্ণনগর শহরেও ৩ টে থেকে দোকান খোলা হয়। তবে সব দোকান কিন্তু খোলার অনুমতি পায়নি। নানা দিক বিচার করে কৃষ্ণনগরের আনন্দময়ীতলা ও গোদাডাঙা এলাকায় মদের দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হয়। দোকান খোলার অনেক আগে থেকেই দোকানগুলোর সামনে লম্বা ভিড় হতে শুরু করে। নির্দেশ আছে, ন্যূনতম ছ’ফুট পারস্পরিক দূরত্ব রক্ষা করতে হবে। কিন্তু প্রায় সর্বত্রই সেই নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গা ঘেঁষাঘেষি করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ক্রেতাদের। এমনি গোদাডাঙা এলাকার দোকানের সামনে লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে সামান্য অশান্তিও হয় বলে স্থানীয়দের দাবি।
প্রায় একই অবস্থা জেলার অন্যত্রও। নবদ্বীপ শহরে যেমন ১১টি দোকানের মধ্যে প্রতিদিন পর্যায়ক্রমে দু’টি করে দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সেখানেও দোকান খোলার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়তে থাকে। সীমান্ত ঘেঁষা করিমপুরেও দু’টি দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সেখানে সকালের দিকে লোকজন ভিড় করেছিল। কিন্তু দোকান বন্ধ থাকায় হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়েছে। তবে ৩ টে নাগাদ দোকান খোলা হলে প্রথম দিকে তেমন ভিড় না হলেও বিকেলের দিকে থেকে ভিড় বাড়তে থাকে।
চাপড়ার দইয়ের বাজার এলাকার একটি মদের দোকানের মালিক সৌভিক সরকার বলেন, “সোমবার বিকেলে আমাদের কাছে একটা নির্দেশিকা এসেছে যে, প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে সন্ধে ৭টা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকবে। আমরা সরকারের সমস্ত নির্দেশকা অক্ষরে অক্ষরে পালন করব। যাতে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোনও রকম সমস্যা তৈরি না হয়।”
তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এত দিন মদের দোকান বন্ধ থাকায় মদ খাওয়া যে বন্ধ ছিল, তা নয়। কারণ, ঘুরপথে অনেক বেশি দামে মানুষের হাতে পৌঁছে যাচ্ছিল মদ। তবে সেটা পরিমাণে অনেক কম। আবার দামও অনেক বেশি হওয়ায় অনেকেই কিনতে পারছিলেন না। ফলে মদের দোকান খোলার খবর আসতে অনেকেই যেন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন।
এমনই একজন কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা বলেন, “কুড়ি বছর ধরে মদ খাচ্ছি। এমন কঠিন অবস্থার মধ্যে কোনও দিন পড়তে হয়নি। মানুষ মাছের দোকানে, রেশনের দোকানে ঘেঁষাঘেষি করে দাঁড়িয়ে থাকছে, তাতে কোনও ক্ষতি নেই। করোনা যেন কেবলমাত্র মদের দোকানের সামনেই ওঁত পেতে থাকে।”
জেলা জুড়ে বেছে বেছে হাতেগোনা মদের দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কৃষ্ণনগর সদর জোনে যেমন মাত্র ১৭টি দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ভিড়ের কথা মাথায় রেখে দোকানের সামনে ছ’ফুট অন্তর গোল গোল দাগ কেটে দিয়েছেন অনেকেই। কিন্তু একটা সময় পর সেই দাগ যেন কোথায় হারিয়ে যায়।
জেলার আবগারি দফতরের সুপার সৌরভ ভদ্রকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তবে নদিয়া লিকার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুমিত তরফদার বলেন, “পারস্পরিক দূরত্ব যাতে রক্ষা হয় তার জন্য আমাদের সমস্ত সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনকি আমরা দোকানের সামনে গোল গোল দাগ পর্যন্ত কেটে দিয়েছি। এরপর মানুষকেও একটু সচেতন হতে হবে।”
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)