West Bengal Lockdown

সুদিন ফিরবেই, আশায়

Advertisement

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

বেলডাঙা শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২০ ০৩:০৩
Share:

গোপাল কর্মকার। নিজস্ব চিত্র

দশ ফুট বাই দশ ফুট খুপচি একটা ঘর। সেখানেই কয়েক জন বসে কাজ করছেন। কেউ নাকছাবিতে ঝাল দিচ্ছে, কেউ সোনা গলানোর কাজ করছেন। কেউ আবার নাকছাবির ওপর পাথর বসাচ্ছেন। কয়েক মাস আগেও বেলডাঙার ঘরে ঘরে এই দৃশ্য আকছার চোখে পড়ত। মাসকয়েক আগে নয়া নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে হওয়া গোলমালের জেরে নাকছাবি শিল্পে ধাক্কা লেগেছিল। সেই ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই করোনা-আতঙ্কে একেবারে নুইয়ে পড়েছে বেলডাঙার বিখ্যাত নাকছাবি শিল্প। মাসের পর মাস কাজ না থাকায় ধুঁকছেন এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত গোপাল কর্মকারও।

Advertisement

গত প্রায় এক মাস ধরে দোকান-পাট বন্ধ। শনিবার বাড়িতে বসে গোপালবাবু বলছিলেন, ‘‘গত কয়েক মাস ধরেই নাকছাবি শিল্পে ভাটা চলছিল। তা-ও বিয়ের মরসুমে টুকটাক কিছু অর্ডার পাচ্ছিলাম। কিন্তু করোনা সংক্রমণের ভয়ে দেশজুড়ে লকডাউন চলায় সব মাটি হয়ে গেল। ধারদেনা করে অনেকেই ব্যবসায় লগ্নি করেন। তাঁদের যে কী অবস্থা সে বলে বোঝানো যাবে না।’’

বেলডাঙা পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কামারপাড়া এলাকার বাসিন্দা গোপালবাবু। ২৫ বছর ধরে তিনি নাকছাবি তৈরির কাজ করেন। তাঁর দক্ষ হাতের নাকছাবি এবং সোনার গয়নার এলাকায় দারুণ চাহিদা ছিল কিছু দিন আগেই। দূর দূর থেকে পাত্রী কিংবা পাত্রের বাড়ির লোক তাঁর কাছে গয়না তৈরির অর্ডার দিতে এসেছেন গত বছরও। কিন্তু এ বার সব বন্ধ লকডাউনের জেরে। রুজিতে তালা পড়ায় সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা তাঁর। তিনি বললেন, “রেশনে সরকার চাল-আটা দিচ্ছে। কিন্তু সেই দিয়ে কি গোটা মাস চলে? আমার রেশন কার্ড আরএসকেওয়াই-১। তাতে ছ’ কেজি চাল, পাঁচ প্যাকেট আটা পেয়েছি। কিন্তু আমাদের তিন জনের ওই চাল,আটায় সারা মাস চালানো মুশকিল। কবে যে এই অবস্থা পাল্টাবে!’’

Advertisement

গোপালবাবু জানালেন, তাঁর স্ত্রী স্নায়ুর রোগে ভুগছেন। কলকাতায় নিয়ে নিয়মিত চিকিৎসা করাতে হয়। স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য মাসে মোটা টাকার ওষুধ কিনতে হয় তাঁকে। কিন্তু রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেই ওষুধ কিনতে গিয়েও সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে তাঁকে। ছেলের উচ্চশিক্ষার জন্যও জমিবিক্রি করতে হয়েছে। ফলে সঞ্চিত অর্থও বিশেষ নেই। এই অবস্থায় তাঁদের সংসার চালানোই মুশকিল হয়ে পড়েছে। তবে সম্প্রতি বেলডাঙার স্বর্ণশিল্পীদের সংগঠন সম্প্রতি এলাকার বেশ কিছু গয়নাশিল্পীকে খাদ্যসামগ্রী দিয়ে সাহায্য করেছে। তাতে কিছুটা সুরাহা হয়। তবে এখনই ভেঙে পড়তে রাজি নন গোপালবাবু এবং তাঁর মতো অনেক নাকছাবি এবং গয়নাশিল্পীই। প্রত্যেকেই বলছেন, বেলডাঙার নাকছাবি শিল্পের এক সময় ভারতজোড়া খ্যাতি ছিল। এখন ব্যবসায় মন্দা চললেও সেই সুখের দিন আবার ফিরে আসবে। সুদিন ফিরবে শিল্পীদের পরিবারেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement