West Bengal Lockdown

১৯ ঘাটে তালা, স্তব্ধ ১০ গ্রাম

ফেরি বন্ধ থাকায় রোজগার বন্ধ। মাঝিদের এমন কিছু পুঁজি থাকে না, যা ভাঙিয়ে চলবে।

Advertisement

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

ডোমকল শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২০ ০১:৫৩
Share:

এ ভাবেই পারাপার। নিজস্ব চিত্র

মাস্ক কেনার সামর্থ্য নেই, মুখে গামছা বেঁধে দাঁড়িয়ে ছিলেন ডোমকলের জয়রামপুর ফেরিঘাটের অন্যতম মালিক হৃদয় মাঝি। কিছুটা ক্ষুণ্ণ স্বরেই বললেন, ‘‘আমরা না হয় উপোস করে জল বাতাসা খেয়ে কোনক্রমে দিন কাটিয়ে দিচ্ছি, কিন্তু কচিকাঁচাদের মুখের দিকে তাকিয়েই যে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে এলাকার মানুষের কষ্টটাও বুঝুন।’’

Advertisement

সেটা কী রকম?

হৃদয় বললেন, ‘‘কাছাকাছি গ্রামের লোকেরা আনাজ বিক্রি করতে নৌকা করে নদিয়া যান। তাঁরা তা যেতে পারছেন না।’’ স্থানীয় আনাজ চাষি গোলাম রসুলেরও বক্তব্য, ‘‘নৌকা বন্ধ থাকায়, আমাদের এলাকায় ফসল বিক্রি করে দিতে হচ্ছে।’’ মোট ১৯টা ঘাট বন্ধ। তাই অন্য জরুরি প্রয়োজনেও মানুষকে ঘুরপথে যেতে হচ্ছে।

Advertisement

ফেরি বন্ধ থাকায় রোজগার বন্ধ। মাঝিদের এমন কিছু পুঁজি থাকে না, যা ভাঙিয়ে চলবে। কিন্তু সাহায্য পাবেন কার কাছ থেকে? অন্য বাসিন্দারাও নিজেদের খাবার জোটানো নিয়েই চিন্তায় আছেন, ফলে কিছু ঘোরাঘুরি করে সন্ধ্যায় খালি হাতে ঘরে ফেরা ছাড়া উপায় নেই হৃদয়ের।

কেবল হৃদয় নন, লকডাউনে নাজেহাল অবস্থা এলাকার বিভিন্ন ফেরিঘাটের মালিকদের। কারণ তাদের ঘাট দিয়ে আর কেউ পারাপার করছিল না লকডাউনের ফলে। আর তারপরে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো অবস্থা জেলার সীমান্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ায়। ওই ঘটনার পর ঘাট থেকে একেবারে হাত তুলে নিতে হয়েছে মাঝিদের। এমনকি খরার মরসুমে বাঁশ দিয়ে তৈরি মাচা উল্টিয়ে রাখা হয়েছে, যাতে কেউ যাতায়াত করতে না পারেন। জয়রামপুর ফেরিঘাটের এক মাঝি বলছেন, ‘‘লকডাউনের পরেও কিছুটা যাতায়াত চলছিল, ফলে দিনের শেষে পেটের ভাতটা হয়ে যাচ্ছিল আমাদের। কিন্তু জেলা সীমানা বন্ধ করে দেওয়ার পরে একেবারেই রুজিতে টান পড়েছে আমাদের।’’ কিন্তু করোনাভাইরাস রুখতে এটাই যে পথ, তাও তাঁরা বুঝছেন।

ডোমকলের মহিষমারি ঘাট এবং গড়াইমারি ঘাটের ইজারাদার আনন্দকুমার দাস। কেবল একটা ঘাটের জন্য সরকারকে বছরের ৭ লক্ষ টাকা দিতে হয় আনন্দকে। আনন্দ বলেন, ‘‘এখন সেই টাকা দূরের কথা, কিভাবে সংসারটা চলবে সেটাই ভেবে উঠতে পারছি না’’

ডোমকল ফেরিঘাট পাটনি সমবায় সমিতির সম্পাদক সঞ্জয় মণ্ডল বলছেন, ‘‘এলাকার ১৯ টা ঘাট নিয়ে আমরা এমন একটা পরিস্থিতির পড়েছি যেটা বলে বোঝানো কঠিন। একদিকে প্রশাসনের চাপ অন্য দিকে সাধারণ মানুষের চাপ। সাধারণ মানুষ চাইছেন ঘাট পেরিয়ে এপার-ওপারের যেতে, আর প্রশাসনের কড়া নির্দেশ ঘাট বন্ধ রাখতে হবে। তারপরে আবার সঙ্কট দেখা দিয়েছে সংসারে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement