লকডাউনে স্কুটারে নতুন জামাকাপড় নিয়ে বিক্রেতাই চলে যাচ্ছেন বহরমপুরের পাড়ায় পাড়ায়। নিজস্ব চিত্র
মুর্শিদাবাদ জেলা অরেঞ্জ জ়োন। তাই বিধিনিষের কড়াকড়ি রয়েছে। তার মধ্যেই আসছে বাঙালির একটি বড় উৎসব ইদ। কিন্তু চৈত্র সেলের পরে এ বার ইদের বাজারেও ভিড় নেই। জেলায় ফিরেছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা। কিন্তু ফিরেছেন খালি হাতে। তাই এ বার আর মাত্র সপ্তাহখানেক বাকি থাকলেও ইদের বাজার খালি। তাতেই মাথায় হাত পড়েছে ব্যবসায়ীদের। তাঁরা জানাচ্ছেন, লকডাউন মানাটা আবশ্যিক। না হলে করোনাভাইরাসের আক্রমণ রোখা যাবে না। কিন্তু তার জন্য বাজারের পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছে, এটাও ঠিক।
লকডাউনের নিয়ম কিছুটা শিথিল হতেই নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হয় প্রশাসনের তরফে। তবে বেলডাঙা, ডোমকল, ইসলামপুরের মতো এলাকায় কিছু দোকান খোলার পরে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। হরিহরপাড়া, নওদার মতো মফস্সলের বাজার নির্দিষ্ট সময় মেনে খোলা থাকলেও ক্রেতাদের ভিড় নেই সেই অর্থে। তা ছাড়া অনেক স্বচ্ছল পরিবারের লোকেরা ইদের কেনাকাটা করতে পাড়ি দিতেন জেলার সদর শহর বহরমপুরে। কিন্তু এ বছর তা সম্ভব নয়। বহরমপুরের এক অভিজাত বস্ত্র ব্যবসায়ী শেখর মারোঠী বলেন, ‘‘এখন বেচাকেনার ভরপুর মরসুম। লকডাউনের কারনে সেলের বাজার ও ইদের বাজার দুটোই মার খেয়ে গেল। দোকানের কর্মীদের বেতন সহসব খরচ মিটিয়ে দোকান টিকিয়ে রাখাই মুস্কিল। মফস্সলের বাজারগুলিতে মরসুমের কেনাবেচা অনেকাংশে নির্ভর করে ভিন্ রাজ্য থেকে ঘরে ফেরা শ্রমিকদের উপর। কেশাইপুরের বাসিন্দা পরিযায়ী শ্রমিক উজ্জ্বল শাহ বলেন, ‘‘দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জুটবে কিভাবে, সেই চিন্তায় কাল ঘাম ছুটছে। ঈদের বাজার করা তো দুরের কথা।’’
হরিহরপাড়ার বস্ত্র ব্যবসায়ী নওসাদ সেখ বলেন, ‘‘অন্য বছর ইদের আগে ভিন্ রাজ্য থেকে শ্রমিকেরা ঘরে ফেরে। তাঁদের হাতে টাকা থাকায় বেচাকেনা ভালই হয়। কিন্তু এ বছর দিন কয়েক আগে থেকে সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যা ছ'টা পর্যন্ত দোকান খুললেও তেমন বেচাকেনা নেই।’’ নওদার বাসিন্দা আফতাব হোসেন বলেন, ‘‘লকডাউনের কারণে দেড় মাসের বেশি সময় ধরে রোজগার বন্ধ। সংসার চালানোটাই কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে ইদের কেনাকাটা তো
দূরের ব্যপার।’’
ডোমকল মহাকুমা চেম্বার অফ কমার্স থেকে বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ী সংগঠনের কর্তাদের দাবি, জিএসটি থেকে সরকারি নানা নীতিতে তারা জর্জরিত। তার মধ্যে শুরু হয়েছে লকডাউন। ডোমকল বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক আফাজুদ্দিন বিশ্বাস বলছেন, ‘‘কী করে সংসার চলবে সেটাই এখন চিন্তার।’’
ডোমকল মহকুমা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি শঙ্কর মণ্ডল বলছেন, ‘‘ডোমকল এলাকায় সব থেকে বেশি বেচাকেনা হয় এই ইদে। আমরা ব্যবসায়ীরা সারা বছর তাকিয়ে থাকি এই সময়টার দিকে, কিন্তু এ বছর লকডাউনের ফাঁদে আমরা। কী হবে কিছুই বুঝতে পারছি না, চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে আমাদের।’’ ডোমকল বাজারের প্রতিষ্ঠিত বস্ত্র প্রতিষ্ঠানের কর্মী বাবু মণ্ডল বলছেন, ‘‘এই সময়ে এটা বাড়তি রোজগার হয় আমাদের প্রতিবছর, কিন্তু এ বছর মাস মাইনেটা মিলবে কি না, সেই আশঙ্কায় আছি।’’
রানিনগর সীমান্তের জমাটি গঞ্জ শেখপাড়া, সেখানেই কাপড়ের দোকান শহিদুল ইসলাম মণ্ডলের। তাঁর কথায়, ‘‘লকডাউন যদি ক’দিন পরে উঠেও যায়, বাজারে জোগানের সমস্যা হবে। আমরা কলকাতা যেতে পারিনি। লকডাউনের ফলে কাপড় উৎপাদনও তেমন হয়নি এ বছর।’’