কৃষ্ণনগর-আমঘাটা নির্মীয়মাণ রেললাইনে চলল ওয়াগন। শনিবার। নিজস্ব চিত্র।
বিকেল প্রায় ৪টে। ধোঁয়া উড়িয়ে, হুইস্ল বাজিয়ে ছুটে আসছে জলজ্যান্ত একটা রেলইঞ্জিন!
নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না ওঁরা। ২০১০ সালের পর ২০২৩। ফের গঙ্গার পূর্ব পারে কৃষ্ণনগর-নবদ্বীপ ঘাট রেলপথ বেয়ে ছুটল কোনও ইঞ্জিন। অসমাপ্ত নবদ্বীপ ঘাট রেলপথের বাকি কাজ কবে হবে তা নিয়ে ঘোর অনিশ্চয়তা রয়েছে এখনও। জমিজটে বন্ধ হওয়ার আগে ওই রেলপথের যতটুকু কাজ হয়েছে সেই অংশেই এ দিন বিকেলে গড়াল ডিজেল ইঞ্জিনের চাকা। প্রায় ১৩ বছর পর কৃষ্ণনগর স্টেশন থেকে পশ্চিমে নবদ্বীপের দিকে আবার যাত্রা।
দীর্ঘদিন পড়ে থাকার পর সম্প্রতি ওই অসমাপ্ত রেলপথে জোরকদমে শুরু হয়েছে সংস্কার কাজ। রেললাইনের একটি পাশে যেমন আছে নবদ্বীপ ঘাট-কৃষ্ণনগর রাজ্য সড়ক, তেমনই রেললাইনের অপর পাশে শুরু হয়েছে সমান্তরাল আরও একটি ঢালাই রাস্তার কাজ। একদা নবদ্বীপ ঘাট থেকে কৃষ্ণনগর হয়ে শান্তিপুর প্রায় ২৯ কিমি ন্যারো গেজ রেলপথে চলত ছোট রেল। ২০১০ সালে পূর্ব রেলের নবদ্বীপ ঘাট-শান্তিপুর ন্যারো গেজ ব্রড গেজে রূপান্তরের কাজ শুরু হয়েছিল তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে। ওই বছরই ১৭ জানুয়ারি ছোট রেল ওই পথে শেষ বারের মতো চলেছিল।
মোট ২৯ কিলোমিটার ন্যারো গেজ প্রথম ধাপে শান্তিপুর থেকে কৃষ্ণনগর জংশন পর্যন্ত ব্রড গেজ হয়। পরবর্তী ধাপে শুরু কৃষ্ণনগর থেকে নবদ্বীপ ঘাট পর্যন্ত কম-বেশি ১২ কিলোমিটার রেলপথের গেজ পরিবর্তনের কাজ। প্রায় আট কিলোমিটার কাজ নির্বিঘ্নে হয়ে নবদ্বীপ ব্লকের আমঘাটা পর্যন্ত ব্রড গেজ লাইনের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যায়। এর পরই বাধে গোলমাল। জমিজটের গেরোয় আমঘাটা থেকে নবদ্বীপ ঘাট পর্যন্ত অবশিষ্ট চার কিলোমিটার অংশে আজ পর্যন্ত রেললাইন পাতা যায়নি।
২০১৮ সালে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও সদর্থক উদ্যোগও দেখা যায়নি জমিজট কাটানোর। এই পরিস্থিতিতে কৃষ্ণনগর থেকে আমঘাটা পর্যন্ত যতটুকু রেলপথ সম্পূর্ণ হয়েছে, সেই অবধি ট্রেন চালানোর উদ্যোগের কথা কিছু দিন যাবৎ শোনা যাচ্ছিল। ইতিমধ্যে আগাছা সাফ ও রেললাইন সংস্কারের পাশাপাশি আমঘাটা স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় শুরু হয়েছে ঢালাই রাস্তা তৈরির কাজও।
এ প্রসঙ্গে রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার বলেন, “আমঘাটা পর্যন্ত রেলপথের কাজ সম্পূর্ণ, স্টেশনও তৈরি। আপাতত কৃষ্ণনগর থেকে ওই পর্যন্ত রেল চলবে। সেই কাজের অঙ্গ হিসাবে শুক্রবার ইঞ্জিন চলেছে।” তাঁর দাবি, “এই প্রকল্প মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চালু করেছিলেন। কিন্তু এখন রাজ্য সরকার চাইছে না এখানে ট্রেন চলুক। যদিও এলাকার মানুষ ভীষণ ভাবে চাইছেন, ট্রেন চালু হোক। ২০২৪-এর জানুয়ারিতে এখানকার বাসিন্দাদের জন্য ভারতীয় রেলের উপহার হবে এই রেলপথ।”
শনিবার সকালের দিকে নতুন রেল প্যানেলবাহী একটি বিরাট ওয়াগন কৃষ্ণনগর থেকে আমঘাটার উদ্দেশে যাত্রা করে। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন পড়ে
থাকায় ওই ১২ কিলোমিটার পথে রেললাইন খারাপ হয়ে গিয়েছে। সম্পূর্ণ নতুন রেল প্যানেল বসবে আমঘাটা পর্যন্ত। আমঘাটা পূর্ণাঙ্গ ব্লক স্টেশন হিসাবে কাজ করবে। স্থানীয় বাসিন্দা সুবল বিশ্বাস, প্রদীপ রায়েরা বলছেন, “আমরাও চাই, যেটুকু কাজ হয়েছে ততখানি পথেই ট্রেন চলুক।’’