ফাইল চিত্র।
কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ। প্রবাদটি যেন অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায় জলঙ্গির পদ্মার শাখা নদীর ওপারে উদয়নগর খণ্ড ও পরাশপুর চরের ক্ষেত্রে। এই চরের একপাড়ে পদ্মার শাখা নদী, অন্যদিকে বয়ে গিয়েছে মূল পদ্মা। চারদিকে নদী নালা দিয়ে ঘেরা আর ধুধু ফাঁকা মাঠ। ফলে শীত মানে হু হু করে বয়ে যাওয়া কনকনে বাতাস সঙ্গী চরের।
শীতের কুয়াশায় ঢেকে যাওয়া চরের গ্রামে এই সময়ে নেমে আসে নানা সমস্যা। কুয়াশার কারণে শুরু হয় বিএসএফের বজ্র আঁটুনি। উৎপাত বাড়ে চোরাকারবারীদের। ফলে সব মিলিয়ে শীতের আগমন মানেই কাঁপতে থাকে পরিকাঠামোহীন চরের দু’টি গ্রাম।
এ বছর এখনও সেই অর্থে শীত বা কুয়াশার দেখা নেই। ফলে খুব একটা অস্বস্তির মধ্যে পড়তে হয়নি চরের বাসিন্দাদের। চরের বাসিন্দা জাব্দুল মন্ডল বলছেন, ‘‘চর এলাকায় শীতে কামড়ের থেকে বিএসএফের ভয়ে বেশি কাঁপি আমরা। শীত মানেই ঘন কুয়াশা, আর সেই সময় বাড়তে থাকে পাচারকারীদের দাপট। ফলে বিএসএফের জওয়ানেরা সকলকেই সন্দেহের নজরে দেখতে থাকে। অনেক সময় পাচারকারীরা গ্রামের বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়ে ফলে সমস্যায় পড়তে হয় আমাদের।’’
এখানেই শেষ নয়, কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে গ্রাম থেকে মূল ভূখণ্ডে আসতে গেলে বাধা দেয় জওয়ানেরা। আবার ফেরার সময় বেলা করালেই ফিরতে হয় গ্রামে। ফলে এই সময়ে কোনও কাজ করে স্বস্তি মেলে না বলে দাবি চর এলাকার বাসিন্দাদের।
শীতের সঙ্গে সঙ্গে পদ্মা নদী থেকে হু হু করে বয়ে আসে ঠান্ডা বাতাস কমদামি শীতের পোশাকে নিজেদের কোনও ক্রমে বাঁচিয়ে রাখেন চরের মানুষ উদয়নগর খণ্ড চরের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলছেন, ‘‘একদিকে ঠান্ডা হাওয়া, অন্য দিকে মাথার উপর টিনের ছাউনি। ফলের সব মিলিয়ে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই হাড় হিম করা ঠান্ডা বয়ে যায় আমাদের শরীরে। শীতের কয়েক মাস সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অনেকেই আগুন জেলে শীতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করেন। অনেকে মাটির হাঁড়িতে করে কাঠের আগুন রেখে দেন ঘরের ভিতরে।’’ চর এলাকার বাসিন্দা রহিম মণ্ডল বলছেন, ‘‘বিশেষ করে প্রবীণ নাগরিকরা শীতের কয়েক মাস খুব কষ্টে থাকেন।’’
তবে কেবল শীত নয়, চরের মানুষের কাছে সমস্যা বারোমাস। বর্ষার মরসুমে ঘরের দাওয়ায় পৌঁছে যায় পদ্মার জল। আবার চৈত্র বৈশাখে ঝড়, বালি ঝড়ে অস্বস্তি তৈরি হয় চরের গ্রাম জুড়ে। ফলে কোনও মরসুমে খুব একটা স্বস্তির মধ্যে বসবাস হয় না তাদের। কেবলমাত্র গুমোট গরমের সময় একটু ঠান্ডা হাওয়া মেলে বিনে পয়সায়। চরের বাসিন্দাদের দাবি, বর্ষা বন্যার সময় দাওয়া ধুয়ে যায় জলে, আবার ঝড় এলেই মাথার উপরের চালাটা উড়ে যায়।
জলঙ্গির ঘোষপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, তৃণমূলের বেবী নাজনীন বলছেন, ‘‘চর এলাকার সমস্যা আমাদের সকলেরই জানা, প্রাকৃতিক ভাবেই নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তাদের। এক্ষেত্রে আমাদের মতো পঞ্চায়েতের পক্ষে তাদের পাশে দাঁড়ানোর খুব বেশি কিছু থাকে না। তবে যতটা সম্ভব আমরা চেষ্টা করি তাঁদের পাশে দাঁড়াতে।’’