ঋণের টাকা শোধের তাগাদা দিতে গ্রামের বাড়ি-বাড়ি গিয়েছিলেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার। জানা গেল, অন্তত ৪৪ জনের নামে ৫৩.৬৮ লক্ষ টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে, যাদের কেউ এত দিন ঘুণাক্ষরেও বিষয়টি টের পাননি।
সোমবার ফরাক্কার ওই ব্যাঙ্কের বেওয়া শাখা থেকে টাকা ফেরতের চেষ্টা শুরু হতেই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। মঙ্গলবার ওই ব্যাঙ্কের সামনে চড়াও হয়ে বিক্ষোভ দেখান প্রতারিত গ্রামবাসীরা। ব্যাঙ্কের শাখা ম্যানেজার এ নিয়ে তদন্তের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ তুলে নেওয়া হয়। ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে প্রাথমিক ভাবে ৪৪ জনের নামের একটি তালিকা দিয়ে প্রত্যেক প্রতারিতকে আলাদা ভাবে ঋণ নিয়ে লিখিত অভিযোগ ব্যাঙ্কে জমা দিতে বলা হয়েছে। ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, ঋণগ্রহীতা হিসেবে যে ৪৪ জনের নাম রয়েছে তাদের সকলেরই বাড়ি স্থানীয় নিশিন্দ্রা গ্রামে। ২০১৩-১৪ সালে তাঁদের প্রত্যেকের নামে ৩২ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দেখানো হয়েছে। তাঁদের সকলের নামে ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলে সেই ঋণ বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু সকলেরই অভিযোগ, ঋণ নেওয়া তো দূরের কথা, তাঁরা কখনও ওই ব্যাঙ্কের শাখাতেও গিয়েছেন কি না সন্দেহ। তবে শুধু ৪৪ জনের নামেই নয়, আরও অনেকের নামেই এ ভাবে ঋণ নেওয়া হয়ে থাকতে পারে বলে গ্রামবাসীদের সন্দেহ। জালিয়াতির অঙ্ক আরও বাড়বে বলেই তাঁরা আশঙ্কা করছেন।
ওই তালিকার প্রথমেই নাম রয়েছে বিজয় ঘোষের। ফরাক্কা ব্যারাজের চাকুরে তিনি । তাঁর ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা। তিন নম্বরে তাঁর স্ত্রী পুষ্প ঘোষেরও নাম রয়েছে। বিড়ি শ্রমিক নিভা মণ্ডলের নামে নেওয়া ঋণের পরিমাণ ৩৫ হাজার টাকা। সুজাতা মণ্ডলের নামে ঋণ রয়েছে ৩৮ হাজার টাকার। তালিকায় রয়েছে দৃষ্টিহীন কৃষ্ণ মণ্ডল এবং পক্ষাঘাতগ্রস্ত অযোধ্যা লালার নামও।
পুষ্পর অভিযোগ, “সোমবার হঠাৎই দুই অফিসার বাড়িতে এসে হাজির হন। এক জন নিজের পরিচয় দেন ব্যাঙ্ক ম্যানেজার হিসেবে। তাঁরা বলেন, আমি আর আমার স্বামী নাকি ব্যাঙ্ক থেকে ৫০ হাজার টাকা করে ঋণ নিয়েছি। সেই টাকা সুদ-সহ মেটাতে হবে। শুনে আমরা হতবাক।”
ব্যাঙ্কে ফিরে সোমবার বিকেলেই ম্যানেজার সমস্ত ঘটনা জানান বর্ধমান আঞ্চলিক অফিসে। এ দিন ব্যাঙ্ক খুলতেই ঋণের জালিয়াতির শিকার হওয়া গ্রামবাসীরা এসে সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। ব্যাঙ্কের কেউ জড়িত না থাকলে কী করে এই ঘটনা ঘটতে পারে, সেই প্রশ্নও ওঠে।
ওই ব্যাঙ্কের বেওয়া শাখার ম্যানেজার সন্দীপ সাহা জানান, ঋণের টাকা শোধ না হওয়ায় তিনি তালিকা নিয়ে বাড়ি-বাড়ি গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে বোঝেন, ঋণের নামে জালিয়াতি করা হয়েছে। ৪৪ জনের নাম রয়েছে তালিকায়। এই সংখ্যা হয়তো আরও বাড়তে পারে। কী করে এই ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে তদন্তের জন্য সমস্ত ঘটনা আঞ্চলিক অফিসে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে তারাই যা করার করবে। ওই ব্যাঙ্কের বর্ধমান আঞ্চলিক অফিসের রিকভারি শাখার জেনারেল ম্যানেজার অনুপকুমার সাহা বলেন, “সোমবারই ফরাক্কার ওই ব্যাঙ্কের ম্যানেজার আমাকে জালিয়াতির অভিযোগের কথা জানিয়েছেন। তাঁকে প্রত্যেকের থেকে পৃথক অভিযোগ নিতে বলা হয়েছে। তদন্তের পরেই স্পষ্ট হবে এই জালিয়াতি কারা কী ভাবে ঘটিয়েছে।”