আব্দুর রশিদ। নিজস্ব চিত্র
বড়দিনের ঠিক আগের দিন একটা পথ দুর্ঘটনা। গুরুতর জখম মোটরবাইকের চালক। হাসপাতালে তিনি মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। এখনও তিনি সংজ্ঞাহীন।
তার পরে যা হয়, যেমন হয় সেটাই হতে পারত। কিন্তু হল না!
ওঁরা ভাবতেই পারতেন, ‘‘এমন দুর্ঘটনা তো কতই হয়। এ নিয়ে এত হইহই করার কী আছে!’’
কিন্তু ওঁরা তেমনটা ভাবলেন না।
ওঁরা বলতেই পারতেন, ‘‘এটা আপনাদের ব্যাপার। আমরা কী করব, বলুন তো?’’
কিন্তু ওঁরা তেমনটা বললেন না।
বরং ওঁরা জোট বেঁধে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন যাতে গুরুতর জখম ছেলেটি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন। অস্ত্রোপচারের বিপুল টাকার ভার অন্তত কিছুটা যেন কমে।
আর সেই কারণে ওঁরা আজ, সোমবার ফের গ্রামে আলোচনায় বসবেন। সেখানে ফের তাঁরা অনুরোধ জানাবেন, দুর্ঘটনার সময় কেউ ওই যুবকের টাকা পেয়ে থাকলে তা যেন তিনি ফিরিয়ে দেন।
কিন্তু সেই টাকা কি আদৌ পাওয়া যাবে?
শমসেরগঞ্জ থানার পুঁটিমারি ও অন্তর্দীপা গ্রামের লোকজন সমস্বরে বলছেন, ‘‘চেষ্টা করতে ক্ষতি কী? না পেলে আমরা সবাই যে যেমন পারি ওই যুবকের চিকিৎসার জন্য সাহায্য করব।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার, ২৪ ডিসেম্বর সকালে মোটরবাইক নিয়ে ধুলিয়ানে লটারির টিকিট আনতে যাচ্ছিলেন অন্তর্দীপা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রশিদ। পুটিমারির পল্টন সেতুর কাছে একটি অটোর ধাক্কায় আব্দুর লুটিয়ে পড়েন মাটিতে। সংজ্ঞা হারান। আশপাশের লোকজন ছুটে এসে উদ্ধার করে তাঁকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থাও করেন।
অভিযোগ, সেই সময় আব্দুরের টাকার ব্যাগটি উধাও হয়ে যায়। তাঁর পরিবারের দাবি, ব্যাগে ছিল ব্যবসার ৭২ হাজার টাকা এবং একটি পুরস্কার জেতা টিকিট। গুরুতর জখম আব্দুর এখন কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শুক্রবার মাথায় অস্ত্রোপচারও হয়েছে।
আব্দুরের বাবা আব্দুল মান্নান পেশায় ফেরিওয়ালা। তিনি বলছেন, ‘‘অভাবের সংসার। সেই কারণেই লেখাপড়া ছেড়ে ছেলেটা লটারির ব্যবসায় নামল। হাসপাতাল থেকে বলে দিয়েছে, প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা লাগবে। এত টাকা কী করে যে জোগাড় করব, বুঝতে পারছি না। আব্দুরের ব্যাগে প্রায় ৭২ হাজার টাকা ছিল। সেটা ফিরে পেলেও অনেকটা সুরাহা হয়।’’
এই বিষয়টি জানতে পেরেই ২৫ ডিসেম্বর দুই গ্রামের লোকজন একটি আলোচনায় বসেন। সেখানে ওই টাকা কেউ পেলে তা ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধও করা হয়। কিন্তু ব্যাগ ও মোবাইল ফিরে পাওয়া গেলেও টাকা ও লটারির টিকিট মেলেনি।
ভাসাই পাইকর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান মহম্মদ এমদাদুল হক বলছেন, “মানুষের বিপদের সময়ে কেউ যে এমনটা করতে পারে তা ভেবেই অবাক হচ্ছি। সোমবার ফের একই আবেদন জানাব। টাকা ফেরত না পেলে ঠিক করেছি, সাধ্য মতো আমরা সবাই ওই যুবকের
পাশে দাঁড়াব।’’
ইতিমধ্যে আব্দুরের বন্ধুরা পথে নেমেছেন। দেলওয়ার হোসেন, আলম শেখ, বুলবুল আহমেদ, মাজারুল আনোয়ারেরা বলছেন, ‘‘আব্দুরকে বাঁচাতে হবে। অন্যের বিপদে ও পাশে থাকে। আর আমরা ওর জন্য কিছু করব না!’’