ফাঁকা হস্টেলে ঘর বেঁধেছে ঘুঘুর দল

লোহার গেটে ঝুলছে মস্ত এক তালা। মরচে ধরা সেই তালা দেখলে বোঝা যায় অন্তত বছর চারেক খোলা হয়নি সেই তালা। গেটের লোহার খাঁচার ফাঁক গলে দৃষ্টি যতদূর যায়, দেখা যাচ্ছে বিশাল চত্বরের দখল নিয়েছে আগাছা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রানিনগর  শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:৩১
Share:

সেই ছাত্রী নিবাস।— নিজস্ব চিত্র

লোহার গেটে ঝুলছে মস্ত এক তালা। মরচে ধরা সেই তালা দেখলে বোঝা যায় অন্তত বছর চারেক খোলা হয়নি সেই তালা। গেটের লোহার খাঁচার ফাঁক গলে দৃষ্টি যতদূর যায়, দেখা যাচ্ছে বিশাল চত্বরের দখল নিয়েছে আগাছা। আর সামনে যে নীল-আকাশি রঙা ভবনটি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে তাতে জন-মনিষ্যির দেখা নেই। স্থানে স্থানে ভেঙে গিয়েছে জানালার কাঁচ। সেই ফাঁক গলে ঘরে ঢুকে বাসা বেঁধেছে ঘুঘুর দল।

Advertisement

এ কোনও পোড়ো বাড়ির বর্ণনা নয়। বছর চারেক আগে এলাকার দুস্থ ছাত্রীদের থাকার জন্য তৈরি হয়েছিল একটি ছাত্রাবাস। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তা চালু হয়নি। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তাই এখনও এমনই অবস্থা ওই হস্টেলের।

কেন্দ্রীয় সরকারের পিছিয়ে পড়া এলাকা উন্নয়ন তহবিলের প্রায় কোটি টাকা খরচ করে রানিনগরের সীমান্তের গ্রাম মরিচায় তৈরি হয়েছিল ছাত্রী আবাস। প্রায় সত্তর লক্ষ টাকা ব্যায়ে ২০১৩ সালে তৈরি হলেও আজও চালু হয়নি সেটি। ফলে ভেঙে পড়েছে কাচের জানালা। মরচে ধরেছে লোহার গ্রিল থেকে আসবাবে। ঘরে বাসা বেঁধেছে পাখি।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, একটা সময় ওই হোস্টেল নিয়ে আশা জেগেছিল তাঁদের মধ্যে। কিন্তু এখন তাঁরা হতাশ। এখানে আর কোনও দিন ছাত্রীদের থাকা হবে বলে মনে হচ্ছে না। যদিও প্রশাসনের তরফে আবারও শোনানো হয়েছে আশার কথা।

জেলা সংখ্যালঘু দফতরের আধিকারিক সৌমেন দত্ত জানান, হস্টেলের কর্মী নিয়োগ নিয়ে পরিষ্কার নির্দেশ না থাকায় খানিক জটিলতা তৈরি হয়। সে জন্যেই হস্টেল চালু হতে দেরি হচ্ছিল। তবে এখন তা মিটে গিয়েছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেয়েরা ওই হস্টেল চালাবে। গোষ্ঠী নিয়োগের জন্য প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে।

সীমান্তের পিছিয়ে পড়া গ্রাম আমিরাবাদ। সেখানে একটি উচ্চ মাধ্যমিক হাই মাদ্রাসা আছে। সেই মাদ্রাসার দুস্থ মেধাবী ছাত্রীদের জন্য ৫০ আসনের দোতলা হস্টেলটি তৈরি করা হয় গ্রামের রাষ্ট্রপতি ফুটবল মাঠের পাশে। এলাকার মানুষের দানের জমিতে হস্টেল তৈরির সময় এলাকার মানুষের মধ্যে উন্মাদনাও ছিল চরমে। মাদ্রাসার দাতা সদস্য তথা রানিনগর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কংগ্রেসের আসরাফুজ্জামান বলেন, ‘‘প্রায় চার বছর হস্টেলটি তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে। জানালা ভেঙে গিয়েছে। লোহার আসবাবে মরচে পড়েছে। ফাঁকা ঘর পেয়ে বাসা বেঁধেছে ঘুঘু।’’

মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, ‘‘কেন পড়ে আছে তা বলতে পারব না। তবে ওটি চালু করার প্রক্রিয়া
শুরু হয়েছে।’’

মরিচা গ্রামের বাসিন্দা মেজারুল ইসলাম বলেন, ‘‘হস্টেলটি চালু হলে এলাকার বড় উপকার হবে।’’ রানিনগর -২ ব্লকের বিডিও আশিসকুমার রায় বলেন, ‘‘ইতিমধ্যে আমরা স্বনির্ভর গোষ্ঠী নিয়োগের জন্য প্রচার করেছি। গোষ্ঠী বাছাই করে খুব কম সময়ের মধ্যে নিয়োগ করা হবে। আশা করছি মাস কয়েকের মধ্যে চালু হয়ে যাবে ওই ছাত্রী নিবাস।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement