বগুলা-কৃষ্ণনগর রাজ্য সড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ। সোমবার সকালে হাঁসখালির নোনাগঞ্জ মোড়ে। ছবি: সুদেব দাস
গভীর রাতে জুয়ার আসরে ব্যবসায়ীর রহস্য-মৃত্যুকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠল হাঁসখালির নোনাগঞ্জ এলাকা। মৃতের নাম কৃষ্ণপদ মণ্ডল (৫৫)। রবিবার গভীর রাতে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাঁসখালি থানার পুলিশ। বগুলা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে ‘মৃত’ ঘোষণা করা হয়। এলাকায় রমরমিয়ে জুয়ার কারবার চলছে জেনেও পুলিশ কেন ব্যবস্থা নেয়নি, এই প্রশ্ন তুলে সোমবার টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধ করা হয়।
বগুলা মুড়াগাছা কলোনি মধ্যপাড়ার বাসিন্দা কৃষ্ণপদ নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবসায়ী। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে ৬টা নাগাদ কৃষ্ণপদ নোনাগঞ্জ বাজারে নিজের দোকানে যাবেন বলে বাড়ি থেকে বেরোন। অন্য দিন রাত ১০টার মধ্যে বাড়ি ফিরলেও ওই রাতে তিনি স্ত্রীকে ফোন করে জানান, কাজ থাকায়য় ফিরতে দেরি হবে। রাত গড়ালেও আর তিনি ফেরেননি। একাধিক বার তাঁকে ফোন করা হলেও তা বেজে গিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষ্ণপদর বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে বগুলা পশ্চিম পুরাতন পাড়ায় দু’টি দোতলা বাড়ির মধ্যে ফাঁকা জায়গায় রাত ১টা নাগাদ রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। স্থানীয় সূত্রের দাবি, ওই এলাকায় কার্তিক বিশ্বাসের বাড়ির দোতলার ছাদে প্রতি রাতে জুয়ার আসর বসে। রাতে সেই আসরে ছিলেন কৃষ্ণপদ। সেই ছাদ তিনি থেকে পড়ে গিয়েছেন অথবা তাঁকে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
মৃতের স্ত্রী আরতি মণ্ডলের দাবি, "ওঁর পেটে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ও যৌনাঙ্গে ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। ওঁকে খুন করে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। তবে উনি জুয়ার ঠেকে যেতেন কি না তা আমার জানা নেই।" কৃষ্ণপদের দাদা নলিনীরঞ্জন মণ্ডল বলেন, "ভাইয়ের মৃত্যু হলেও পুলিশ ভোর বাড়িতে এসে জানায়, সে নাকি সামান্য চোট পেয়েছে। পুলিশ কেন সত্য আড়াল করতে চাইছে বুঝতে পারছি না।" কার্তিক মণ্ডল ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃতের ছেলে কিঙ্কর মণ্ডল।
হাঁসখালি থানার একটি সূত্রের দাবি, ওই রাতে জুয়ার ঠেকের খবর পেয়ে হানা দিতে গিয়ে তারা কৃষ্ণপদকে পড়ে থাকতে দেখে। যদিও পাশের বাড়ির বাসিন্দারা জানান, রাতে তাঁরা কোনও কিছুই টের পাননি। মূল অভিযুক্ত কার্তিকের দাদা সিন্টু বিশ্বাস বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই বাড়ির ছাদে জুয়ার ঠেক বসাতো ভাই। এই নিয়ে ওর সঙ্গে বহু বার অশান্তিও হয়েছে। পুলিশকেও লিখিত ভাবে জানিয়েছিলাম।"
রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপারকে কে কন্নন বলেন, "তদন্ত শুরু হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।"