মৃত স্বপন পাল। নিজস্ব চিত্র।
সোমবার প্রতিবন্ধী কার্ড করাতে এসে হাসপাতাল চত্বরেই অস্বাভাবিক ভাবে মৃত্যু হল এক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির।
জানা গিয়েছে, জেলা হাসপাতালে সুপারের দফতরের পিছন দিকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই ব্যক্তি। তাঁকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে জানিয়ে দেন। এই ঘটনায় জেলা হাসপাতাল-সহ জেলার অন্য হাসপাতাল, বিভিন্ন সরকারি দফতরে প্রতিবন্ধী বা বিশেষ ভাবে সক্ষম মানুষদের ক্ষেত্রে পরিকাঠামোর অভাব ও চরম উদাসীনতার বিষয়টিই আবার প্রকাশ্যে চলে এল।
অভিযোগ, সরকারি নির্দেশিকা থাকা সত্ত্বেও সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানে এখনও পর্যন্ত প্রতিবন্ধীদের সুবিধার জন্য র্যাম্প তৈরি করা হয়নি। ফলে, প্রতিদিন বহু বিশেষ ভাবে সক্ষম ব্যক্তিকে এই সকল জায়গায় এসে চরম প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয় বলে অভিযোগ। সিঁড়ি বেড়ে উঠতে গিয়ে অনেকেই রীতিমতো অসুস্থ হয়ে পড়েন। সোমবার জেলা সদর হাসপাতাল চত্বরে ওই প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মৃত্যুর পিছনে এটিকেও দায়ী করছেন অনেকে। কারণ, জেলা সদর হাসপাতালে প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্দিষ্ট কাউন্টারে ওঠার সিঁড়িতে কোন র্যাম্প নেই। পুরনো আমলের ভবন হওয়ায় অনেক ক’টি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হয়। যা তাঁদের পক্ষে অত্যন্ত কষ্টকর।
অভিযোগ, চাকদহের শিমুরালির বাসিন্দা স্বপন পাল (৬৫) নামের ওই ব্যক্তিকে অনেক কষ্ট করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হয়েছিল এ দিন। তাতেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ।
মৃত স্বপন পালের জামাই আশিস মিত্র বলছেন, “বাবার হৃদযন্ত্রে কোনও সমস্যা ছিল না। তাঁর সমস্যা ছিল দুই পায়ে। হাঁটুর হাড় ক্ষয়ে যাওয়ায় তিনি ঠিকমতো দাঁড়াতে পর্যন্ত পারতেন না। লাঠিতে ভর দিয়ে তাঁকে হাঁটা চলা করতে হত।”
তাঁর অভিযোগ, “ওই অবস্থায় অতগুলি সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠতে গিয়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। সম্ভবত, সেই কারণেই তাঁর হৃদযন্ত্রে চাপ পড়ে যায়।”
মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিবন্ধী কার্ড তৈরির জন্য তিনি প্রায় ছয় মাস ধরে বিভিন্ন দফতরে ঘুরছেন। এর আগেও একাধিক বার তিনি শিমুরালি থেকে কৃষ্ণনগরের জেলা সদর হাসপাতালে এসেছিলেন। প্রতি বারই তিনি ট্রেনে চেপে একাই আসতেন। এ দিনও তিনি একাই এসেছিলেন।
এ দিন ঘটনাস্থলে এসেছিলেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মেলনীর সদস্যরা। জেলা কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ মল্লিক বলছেন, “অতগুলি সিঁড়ি ভেঙে উঠতে গিয়েই তিনি অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছেন। আমরা নিহতের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।” তাঁর কথায়, ‘‘র্যাম্প হলে হয়তো মানুষটাকে এ ভাবে চলে যেতে হত না।”
সংগঠনের সদস্যদের অভিযোগ, অনেক সরকারি দফতরের সিঁড়িতেই এখনও র্যাম্প নেই। এমনকি, শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালেও কোনও র্যাম্প নেই। যদিও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার দেবব্রত দত্ত বলছেন, “শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে একটি উন্নত মানের র্যাম্প তৈরির কাজ চলছে। সদর হাসপাতাল ভবনেও র্যাম্প আছে। তবে সুপারের দফতরে সিঁড়িগুলিতে র্যাম্প তৈরির বিষয়টি নিয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে।”
প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, সরকারি নির্দেশিকা থাকা সত্ত্বেও কেন এখনও পর্যন্ত সমস্ত সরকারি দফতরের ভবনে র্যাম্প নেই? জেলা শাসক শশাঙ্ক শেঠী বলছেন, “সমস্ত দফতরেই র্যাম্প থাকার কথা। কোন কোন দফতরে এখনও র্যাম্প তৈরি হয়নি, তা চিহ্নিত করে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।