প্রতীকী চিত্র
বাড়ি তাঁর বহরমপুর। লকডাউনের জেরে আর পাঁচ জনের মতো মাঝবয়সী সেই ব্যবসায়ীও ঘরবন্দি। বাড়ির লোকজন জানাচ্ছেন, সারা দিন ঘরের সিলিং ফ্যানের দিকে চেয়ে কী যেন ভাবেন তিনি। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে হঠাৎ বুক ধরফড়, হাত-পা থরথর করে কাঁপতে থাকে, ঘামে ভিজে যাচ্ছে শরীর। গত পাঁচ দিন ধরে এমন উপসর্গ দেখা দেওয়ায় বহরমপুরের মানসিক রোগের চিকিৎসক সুমন্ত সাহার দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। চিকিৎসক ওষুধ দিয়ে জানিয়েছেন— ‘আর যাই ভাবুন, করোনা নিয়ে বাবার কোনও কারণ নেই। আপনার কিচ্ছি হবে না।’
শহরের এক প্রৌঢ়ের আবার দিন-রাত ঘুমই হচ্ছে না। মাঝে মধ্যে বুক ধরফড় করছে, শরীর অস্থির। চোখ বন্ধ করলেই যেন মনে হচ্ছে এই বুঝি মৃত্যু এল! কড়িবরগার দিতে তাকিয়ে তাঁরও মনে হচ্ছে, ওই বুঝি ঝুলে রয়েছে মরণ! মনোবিদের কাছে গিয়েছিলেন তিনিও। পথ্য পেয়েছেন— এমন ছবি কিংবা সিনেমা দেখুন যাতে সারাক্ষণ মনের মধ্যে হাসি গুনগুন করে।
করোনার ত্রাস এমনই মানসিক অস্বস্তি নিয়ে শরীরে দানা বাঁধছে। যার জন্য প্রায় ঘুমন্ত মনোবিদের চেম্বারও এখন থিকথিকে ভিড়। মানসিক উদ্বেগ-উৎকন্ঠা-অস্থিরতা উত্তরোত্তর এমন বেড়েছে যে যুবক থেকে বয়োবৃদ্ধ— সকলেরও ভিতরে বাসা বেঁধেছে অজানা ভয়। এমনকি পুরনো মানসিক রোগী, যাঁরা ওষুধে সুস্থ ছিলেন তাঁদের অস্তিরতাও যেন বেড়ে গিয়েছে।
মনোবিদ সুমন্ত সাহা বলেন, ‘‘এক সময় ভিটে মাটি ছাড়া হওয়ার ভয়ে এনআরসি আতঙ্কে ভুগে অনেকেই চিকিৎসা করাতে আসছিলেন। গত এক সপ্তাহ ধরে করোনাতাঙ্ক নিয়ে আসছেন নতুন এক দল মানুষ।’’ তাঁর দাবি, ‘‘লকডাউনের জেরে সামাজিক দূরত্ব রাখার জন্য চেম্বার বন্ধ রেখেছি। তবে ফোনে কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে রোগীর লক্ষ্ণণ জেনে প্রেসক্রিপসন করছি। প্রতি দিন গড়ে ১০ জন করে করোনা আতঙ্কে ভুগতে থাকা রোগীর চিকিৎসা করছি। এই সংখ্যা কিন্তু দিন দিন বাড়ছে।’’
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের প্রধান রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রোগীদের মধ্যে এক দিকে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত ভীতি যেমন কাজ করছে, তেমনই মানসিক রোগের স্থিতিশীল রোগীদের মধ্যে অবসাদ, বাইপোলোর, প্যানিক অ্যাটাকও হচ্ছে।’’
লকডাউনের জেরে লোকজন ঘর থেকে বেরোতে পারছেন না। এ ছাড়া মানসিক রোগের চিকিৎসকরাও তাঁদের চেম্বারে রোগী দেখার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। তবে সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগে যেমন করোনাতাঙ্ক নিয়ে মানসিক রোগী আসছে, তেমনই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে করোনাতাঙ্ক নিয়ে মানসিক রোগীরা আসছেন।