ফের নেমে পড়া পথে। ছবিগুলি তুলেছেন গৌতম প্রামাণিক
ট্রেন-বাসের সঙ্গে আলাপটা মুছেই গিয়েছিল। রাস্তার সঙ্গেও। অলি-গলি পথ, মেঠো রাস্তা, সাইকেল— প্রায় আড়াই মাস লুকিয়ে চুরিয়ে সে সবে পা পড়েছিল কারও বা, কিন্তু বিধির রাঙা চোখের সামনে সদর্পে চলাচল প্রায় ছিলই না। লকডাউনের প্রথম দু’টি পর্বের পরে, তৃতীয় দফায় যখন বদ্ধ জীবনে প্রবেশ করল দেশ, তখন থেকেই ‘চলো নিয়ম ভাঙি’র একটা চেষ্টা শুরু হয়েছিল। প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে দোকান খোলা টোটো-অটোর চকিতে দেখা মেলা, ছেলেছোকরার ‘ডোন্ট কেয়ার’ ভাব করে পথে সাইকেল-বাইক নামানোও শুরু হয়েছিল। পুলিশের ধমকে তা অবশ্য ঘরেও সেঁধিয়ে যেতে সময় নিত না।
পুরোপুরি না হলেও, আনলকের প্রথম পর্বে সেই বন্দিত্ব থেকে এক টুকরো শ্বাস নিতে মঙ্গলবার যেন ঝাঁপিয়ে পড়ল মানুষ। পুরনো ছন্দ যে রাতারাতি ফিরে এসেছে এমন নয়। বাধা নিষেধের গেরো এখনও রয়েছে ঢের। তা সত্ত্বেও এ দিন মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকায় লোকজনের হাঁটাচলা, গাড়ির ভিড়, বাইকের দাপটে যেন নতুন মুক্তির স্বাদ।
এ দিন পথে বাস ছিল না বললেই চলে, তবে পথে বেরনো মানুষের চাহিদা ছিল তুমুল। অপেক্ষাও ছিল চোখে পড়ার মতো। জেলার ভিতরে বিভিন্ন রুটে প্রায় ৫০০টি বেসরকারি বাস চলাচল করে। এ দিন পঞ্চাশটিও পথে নামেনি। তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে ওই সব রুটে সরকারি বাস কিছু চলেছে।
তবে শহরাঞ্চলে পথে নামা দেদার টোটো-অটো সে আপশোস পুষিয়ে দিয়েছে। গঙ্গার বিভিন্ন ঘাটে দেখা মিলেছে ফেরি সার্ভিসেরও। নৌকার সংখ্যা তেমন বেশি না হলেও যাত্রীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় দোকান বাজার খুলেছে। তবে সব ধরনের দোকানেই যে ঝাঁপিয়ে পড়েছে মানুষ, এমনটা নয়। বরং আনলকের প্রথম পর্বে ঝাঁপ খুলে কিঞ্চিৎ বিরস বদনেই বসে থাকতে দেখা গিয়েছে কাপড় থেকে মণিহারি, বৈদ্যুতিন থেকে দ্বি-চক্রযানের কারবারিদের।
মুর্শিদাবাদ জেলা চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ব্যবসায়ীরা বিধিনিষেধ মেনেই দোকান খুলছেন। কিন্তু প্রথমেই তো ভিড় হয় না। তবে পথে নামা লোকজনের ভিড় দেখে মনে হচ্ছে যেন সব বিধিনিষেধ উঠে গিয়েছে।’’
জঙ্গিপুরের পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী এরই মাঝে সতর্ক করেছেন, ‘‘মানুষ যাতে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলেন সে বিষয়ে আমরা জোর দিচ্ছি। বিভিন্ন জায়গায় এ বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে।’’
ডোমকলে বার বারই লকডাউন ভাঙার অভিযোগ উঠেছে। আনলক-ওয়ান ঘোষণা হতে ডোমকল যেন পুরনো ছন্দে ফিরেছে। আগের মতোই ডোমকলের ব্রিজ মোড়, বাসস্ট্যান্ডে গত দু’দিন ধরে যেন মেলা বসে গিয়েছে। দু’দিন আগেও লালবাগ মহকুমার বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট সুনসান ছিল, কিন্তু আনলক-ওয়ান সেই নিস্তব্ধতার বাঁধ ভেঙে দিয়েছে।