দোকানেই পড়ে বেলডাঙার বিখ্যাত নাকছাবি। নিজস্ব চিত্র
শনিবাসরীয় বাজেট অনেক হিসেবের মতো বদলে দিয়েছে বেলডাঙা সোনাপট্টির যাবতীয় স্বপ্ন।
সোনার দাম আগের সব রেকর্ডকে ভেঙে এখন সর্বকালীন চূড়ায়। সোনাপট্টিতে সোমবার ১০ গ্রাম পাকা সোনার দাম ছুঁয়েছে ৪০,৮০০ টাকা। এই দামে সোনা আগে কখনও বিক্রি হয়নি। ফলে ক্রেতা থেকে কারিগর সকলের কপালে ভাঁজ। বেলডাঙায় সোনার নাকছাবি রাজ্য জুড়ে কদর রয়েছে। তাদের সকলের ব্যবসা শীতঘুমে চলে গিয়েছে। ভরা বিয়ের মরসসুমেও সোনার দোকানে বিক্রি তলানিতে। নাকছাবির কারিগর থেকে বিক্রেতা সকলেই এই মন্দার বাজারে লড়াই করার চেষ্টা করেও যেন হেরে যাচ্ছেন। বেলডাঙায় প্রায় ৬০০ স্বর্ণশিল্পী রয়েছেন। তাঁদের কথায়— বিক্রি নেই, কারণ মজুরি সমেত সামান্য দেড় গ্রামের নাকছাবির যা দাম দাঁড়াবে তা সাধারণ ক্রেতার হাতের বাইরে। বেলডাঙার রূপা মালাকার বলেন, ‘‘যে টাকা নিয়ে যাচ্ছি সোনার দোকানে সেটা খুব কম নয়। কিন্তু দোকানে গিয়ে শুনছি, সোনার দাম যা বেড়েছে তাতে ওই টাকায় সোনার গয়না তৈরি হবে না। ফলে দোকান থেকে মুখ ফেরানোই শ্রেয়।’’ বেলডাঙা বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির সম্পাদক অভিমন্যু কর্মকার বলেন, ‘‘যা বুঝছি, সোনার দাম রবিবার ছিল সর্বোচ্চ। এতে সোনার নাকছাবি গড়ানো সাধারন ক্রেতার পক্ষে অসম্ভব। বিক্রেতারাও অস্বস্তিতে।’’
গত কয়েক বছরে বেলডাঙার নাকছাবি চাহিদা ধরে রাখতে নানান ডিজাইন করেছে। কিন্তু মন্দা বাজারে তা ফিরে দেখার ক্রেতা নেই। কারিগরেরা তাই অনেকেই মুখ ফিরিয়েছেন কারবার থেকে। তাঁদেরই এক জন অমর মালাকার বলেন, “সোনা ও রুপোর কাজ জানি। কিন্তু আর সে কাজে মন নেই। তেলে ভাজার দোকান করেছি। তাতে নগদে কারবার মোটামুটি চলছে। সোনার মতো মন্দা নেই।’’
তাতে সোমাপট্টির চিন্তা আরও বেড়েছে। পেশা থেকে যদি পরিবারের সদস্যরা সরে যান, সেই চিন্তায় ঘুম ছুটেছে প্রবীণ স্বর্ণশিল্পীদের। তাঁদের অনেকেরই বক্তব্য, গয়না তৈরির এই শিল্পে থাকে কয়েক পুরুষ ধরে কাজ শেখার পরিচয়। তা মুছে যাবে।
ফাল্গুন মাসে বিয়ে ঝর্নার। তার বাবা শচীন বিশ্বাস বলেন, “গত ৯ বছর আগে পঞ্চাশ হাজার টাকা পোস্ট অফিসে রেখেছিলাম। ভেবেছিলাম মেয়ের বিয়েতে সেটা দ্বিগুণ হবে। তাই দিয়ে কিছু গয়না মেয়েকে বিয়েতে গড়ে দেব। কিন্তু এখন দেখছি সোনার ভরি ৪৫ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। ফলে ওই টাকায় কিছুই হবে না। ভাবলেই মাথা ঘুরে যাচ্ছে!’’