Berhampore

ঠেলার নাম ‘ধমক’, নাড়ু-অরিত ‘ভাব’

দলীয় ঐক্য বোঝাতে এ দিন কাছাকাছি এলেন দুই বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা। রাজ্য সরকারের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরতে বহরমপুর বিধানসভার কো-অর্ডিনেটর অরিতের ডাকা মিছিলে পা মেলালেন  নাড়ুগোপাল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২০ ০৬:৪৫
Share:

পাশাপাশি: নিজস্ব চিত্র।

দু’দিন আগেও তাঁদের মুখ দেখাদেখি প্রায় বন্ধ ছিল। একে অন্যের আয়োজিত সভায় হাজির হওয়া দূর অস্ত্ বরং পরস্পরকে এড়িয়ে চলাই ছিল দস্তুর! মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়ে তৃণমূলের দলীয় কোন্দলের তালিকায় বহরমপুর টাউন কংগ্রেস সভাপতি নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায় এবং জেলা কো-অর্ডিনেটর অরিত মজুমদারের সেই সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত মধুর হতে চলল, অন্তত শুক্রবার দু’জনে পাশাপাশি বসে সাংবাদিক বৈঠক করার পরে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তেমনই অনুমান করছেন। দলের অন্দরের খবর, যার সৌজন্যে রয়েছে খোদ তৃণমূল ভবনের ধমক! জেলার এক তাবড় তৃণমূল নেতা অবশ্য মনে করছেন, ‘‘বাম-কংগ্রেসের বিরোধী জোট ক্রমশ কাছাকাছি আসায় এবং বিজেপি’র বাড়-বাড়ন্ত দেখে দলের ঐক্যের সুরটা সামনে তুলে ধরা খুব জরুরি হয়ে পড়ছিল। সেই জন্য জেলা নেতৃত্বের তরফে কোন্দল বন্ধ করতে তৃণমূল ভবনের হস্তক্ষের দাবি করা হয়েছিল। হয়ত তারই ফল ফলল এ দিন।’’

Advertisement

দলীয় ঐক্য বোঝাতে তাই এ দিন কাছাকাছি এলেন দুই বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা। রাজ্য সরকারের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরতে বহরমপুর বিধানসভার কো-অর্ডিনেটর অরিতের ডাকা মিছিলে পা মেলালেন নাড়ুগোপাল। দলীয় কার্যালয়ে পাশাপাশি বসে সাংবাদিকদের মুখোমুখিও হলেন তাঁরা। তুলে ধরলেন দলের ১০ বছরের রিপোর্ট কার্ড। যা দেখে দলেরই এক কর্মী বলছেন, ‘ঠেলার নাম ধমক!’

বিরোধ কি তা হলে মিটে গেল? অরিত বলছেন, “দিদির নির্দেশে সবাই একসঙ্গে পদ ভুলে দলীয় কর্মী হিসাবে পথে নেমেছি, সরকারের জনমুখী কাজের প্রচার করতে হবে। তাই কে নাড়ু আর কে অরিত— এ ভাবে আর ভাবলে চলবে না।” নাড়ুগোপাল অবশ্য সুর বদলে বলছেন, ‘‘আমাদের মধ্যে কোনও লড়াই তো ছিল না।” তা হলে এত দিন পরস্পরের ডাকা দলীয় বৈঠকও এড়িয়ে চলতেন কেন? অরিতের জবাব, “কখনও শারিরীক কারণে কখনও বা ব্যক্তিগত কাজ থাকায় সবসময় সবার ডাকা সভা-বৈঠকে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে, এর মধ্যে পারস্পরিক দূরত্ব খুঁজবেন না।”

Advertisement

নাড়ুুগোপাল অবশ্য অকপট, “অরিতদার ডাকে বহরমপুরে একটাই সভা হয়েছিল, পুজোর আগে। সেই সভা সম্বন্ধে আমাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা করা হয়নি। তাই যাইনি। অরিতদাকে সে কথা স্পষ্ট বলেও ছিলাম।”

দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা রাজনীতি শুধু নয়, রাজ্য নেতৃত্বের কাছেও নাড়ু-অরিতের ‘মধু’র সম্পর্ক অজানা নয়। জেলায় পর্যবেক্ষকের পদ বিলুপ্তি ঘটিয়ে ন’জন জেলা নেতার কাঁধে দায়িত্ব তুলে দিয়েছিল তৃণমূল ভবন। সেই দায়িত্ব নিয়ে জেলায় ফেরার পর থেকে প্রত্যেকেই নিজেদের পছন্দের নেতাদের জেলা কমিটিতে সুযোগ করে দিতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছিলেন।

নাড়ু-অরিত সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছিল সেই সময় থেকেই। দলের প্রচারের স্বার্থে একে অপরের ডাকা সভা এড়িয়েছেন দু’জনেই। নিজের ডাকা বৈঠকে নাম না করে দলের কো-অর্ডিনেটর অরিতের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন দলেরই শহর সভাপতি নাড়ুগোপাল। অরিতকেও বলতে শোনা গিয়েছিল ‘এখন দলে শহর সভাপতি বা ব্লক সভাপতির কোনও পদ নেই।’

সেই অরিত এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে নাড়ুগোপালের পরিচয় করালেন টাউন সভাপতি হিসাবে। যা দেখে জেলা নেতারা স্বস্তি পেলেন বটে, কিন্তু তাঁদের আশঙ্কাও রইল, কত দিন টেঁকে সেটাই দেখার!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement