প্রশ্ন বিএসএফের ভূমিকা নিয়েই

আঁধার হয়ে গেল চোখটা

২০১৩ সাল। এক সন্ধেয় মোটরবাইকে বাড়ি ফিরছিলেন চাপড়ার হাটখোলার বাসিন্দা ফিকারুল। তাঁর কথা অনুযায়ী, গ্রামের ঠিক বাইরে বাধনিতলায় বিএসএফ ও গরু পাচারকারীদের মাঝে পড়ে যান তিনি। আর তখনই বিএসএফের ছোড়া ছররা (‌পেলেট) তাঁর চোখে-মুখে লাগে।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

চাপড়া শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৮ ০৮:১০
Share:

মহম্মদ আলি হালসানা ছররায় হারিয়েছেন ডান চোখ

সন্ধের নরম আলো ঢেকে আঁধার নেমেছিল দু’চোখ জুড়ে। আচমকাই। সেই থেকে ছায়াময় তাঁর পৃথিবী। মাঝদুপুরের চড়া রোদেও যে ছায়া কাটে না। বিএসএফের ছররায় দু’চোখের দৃষ্টি প্রায় হারিয়ে ফেলা ফিকারুল হালসানা গত পাঁচ বছরে দেখেছেন, জীবন কী করে আবছা হয়!

Advertisement

২০১৩ সাল। এক সন্ধেয় মোটরবাইকে বাড়ি ফিরছিলেন চাপড়ার হাটখোলার বাসিন্দা ফিকারুল। তাঁর কথা অনুযায়ী, গ্রামের ঠিক বাইরে বাধনিতলায় বিএসএফ ও গরু পাচারকারীদের মাঝে পড়ে যান তিনি। আর তখনই বিএসএফের ছোড়া ছররা (‌পেলেট) তাঁর চোখে-মুখে লাগে।

শুধু ফিকারুলই নন। অনেকটা একই রকম ভাবে জীবন বদলে গিয়েছে তাঁর চাচাতো ভাই মহম্মদ আলি হালসানারও। বিএসএফের ছররায় নষ্ট হয়েছে আলির ডান চোখ। তাঁর মা লুৎফা বিবি বলেন, “গোটা পরিবারটাকেই ওরা শেষ করে দিয়েছে। ছেলেটাকে দিনের পর দিন যন্ত্রণায় ছটফট করতে দেখেছি।”

Advertisement

ফিকারুল হালসানা রোদেও ঝাপসা দু’চোখ

ছররার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত চোখের চিকিৎসা করাতেও বিস্তর ঘুরতে হয়েছে ফিকারুলের পরিবারকে। প্রথমে চাপড়া গ্রামীণ হাসপাতাল, তারপর কলকাতার বেসরকারি হাসপাতাল। তাতেও চিকিৎসায় সাড়া না মেলায় চেন্নাই নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। কাজ হয়নি। দৃষ্টি প্রায় ফেরেইনি।

দৃষ্টির সঙ্গেই আরও বহু কিছু হারিয়েছেন হাটখোলার চাষি ফিকারুল। চিকিৎসার সাড়ে তিন লক্ষ টাকা খরচ জোগাড় করতে জমি বন্ধক রাখতে হয়েছে। যা এখনও ছাড়াতে পারেনি তাঁর পরিবার। দারিদ্রের সঙ্গে যুদ্ধে নেমে তাল কেটেছে দাম্পত্যে। ছেলেকে নিয়ে এখন বাপের বাড়িতে থাকেন তাঁর স্ত্রী।

অদ্ভুত আঁধার নেমেছে আলির জীবনেও। তাঁর পরিবার বলছে, ২০১৪ সালের ৭ নভেম্বর সকালে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছিলেন দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আলি। সে সময়ে গরু পাচারকারীদের তাড়া করছিল বিএসএফ। তাদের ছোড়া ছররা লাগে আলির ডান চোখে। তাঁর জামাইবাবু খারিজুল শেখ বলেন, “ও চাইত বিএসএফ বা মিলিটারিতে চাকরি করতে। অথচ সেই বিএসএফের ছররাই তার সব স্বপ্ন কেড়ে নিল।”

চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন আলির দিনমজুর বাবা। কলকাতা আর ভেল্লোরে চার লক্ষ টাকা খরচ করে একাধিক বার অস্ত্রোপচার হয়েছে। তার পরেও ডান চোখটা আর বাঁচানো যায়নি। পরিবারের অন্নবস্ত্রের সংস্থানের জন্য এক চোখের দৃষ্টি নিয়েই কাজ খুঁজেছেন বছর তেইশের আলি। শেষ পর্যন্ত গাঁয়ের এক যুবকের সঙ্গে তিনি মুম্বই যান। সেখানকার একটি সস্তা হোটেলে এখন কাজ করেন তিনি।

তবে এই লড়াইয়ে ফিকারুল আর আলির পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলা মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে মামলা করেছিল তারা। সম্প্রতি দু’জনকেই সাড়ে তিন লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। তবে কেউ শাস্তি না পাওয়ায় আক্ষেপ একটা রয়েই গিয়েছে। ফিকারুল বলেন, “টাকা দরকার ঠিকই। কিন্তু কোনও জওয়ানের কেন শাস্তি হবে না?”

বিএসএফের ডিআইজি (কৃষ্ণনগর) বি এল মীনা অবশ্য রায়ের চিঠি হাতে না পেয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement